Advertisement
E-Paper

সিরিয়ায় নিহত সিদ্ধার্থ ধর, কে এই বাঙালি জঙ্গি?

এ বছরের গোড়াতেই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের তালিকায় (গ্লোবাল টেররিজম লিস্ট) তার নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিল মার্কিন প্রশাসন। সেই সিদ্ধার্থ ধর অর্থাৎ ‘জিহাদি সিড’ বা আবু রুমায়শাহ নামে আইএস-এর পরিচিত মুখ সম্প্রতি সিরিয়ায় সন্ত্রাসদমন অভিযানে মারা গিয়েছে বলে দাবি করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৮ ১৪:১০
সিদ্ধার্থ ধর বা আবু রুমায়শাহ নামে আইএস-এর পরিচিত মুখ সম্প্রতি সিরিয়ায় সন্ত্রাসদমন অভিযানে মারা গিয়েছে বলে দাবি করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম।

সিদ্ধার্থ ধর বা আবু রুমায়শাহ নামে আইএস-এর পরিচিত মুখ সম্প্রতি সিরিয়ায় সন্ত্রাসদমন অভিযানে মারা গিয়েছে বলে দাবি করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম।

সিদ্ধার্থ ধরকে মনে আছে? বছর আড়াই আগে যে বাঙালি ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গির হাতে পাঁচ বন্দি নির্মম ভাবে খুন হয়েছিলেন! সেই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই হইচই শুরু হয়ে গিয়েছিল। এ বছরের গোড়াতেই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের তালিকায় (গ্লোবাল টেররিজম লিস্ট) তার নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিল মার্কিন প্রশাসন। সেই সিদ্ধার্থ ধর অর্থাৎ ‘জিহাদি সিড’ বা আবু রুমায়শাহ নামে আইএস-এর পরিচিত মুখ সম্প্রতি সিরিয়ায় সন্ত্রাসদমন অভিযানে মারা গিয়েছে বলে দাবি করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম।

ব্রিটিশ সন্ত্রাসদমন বিশেষজ্ঞ চার্লস লিস্টার সবার আগে টুইটারে সিদ্ধার্থের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেন। যদিও বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন ব্রিটিশ গোয়েন্দারা। তবে লন্ডনের এক কট্টরপন্থী ইসলাম শিক্ষক যিনি এক সময় সিদ্ধার্থের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন, সেই আনজেম চৌধরিও একই সঙ্গে সিদ্ধার্থের মৃত্যুর খবর স্বীকার করেছেন। অমরনাথ অমরসিঙ্গম নামে আর এক সন্ত্রাসদমন বিশেষজ্ঞ টুইটারে জানিয়েছেন, আবু তুরাব নামে এক আইএস জঙ্গির থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সম্ভবত গত বছর সিরিয়ার রাকায় জঙ্গি দমন অভিযানে মৃত্যু হয় সিদ্ধার্থের। অভিযানে সম্ভবত মারা গিয়েছে সিদ্ধার্থের স্ত্রী-সন্তানেরাও।

জন্মসূত্রে বাঙালি হলেও সিদ্ধার্থ ব্রিটিশ নাগরিক ছিল। উত্তর লন্ডনের পামার্স গ্রিন এলাকাটায় নানা জনগোষ্ঠীর বাস। অভিবাসীরাই থাকেন মূলত। মোটের উপরে মধ্যবিত্ত থেকে নিম্ন মধ্যবিত্ত পাড়া। প্রায় ছাব্বিশ বছর আগে ধর পরিবার সেখানে বসবাস শুরু করে। স্বামী-স্ত্রী, দুই মেয়ে ললিতা ও কণিকা আর ছেলে সিদ্ধার্থ। ঝরঝরে বাংলাতেই কথা বলেন সিদ্ধার্থের মা-বোন। সিদ্ধার্থর ১৬ বছর বয়সে মারা যান তার বাবা। সিদ্ধার্থের বোন কণিকা জানিয়েছিলেন, শান্ত-চুপচাপ স্বভাবের সিদ্ধার্থর মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল এই মৃত্যু। তার পর থেকেই এক কট্টরবাদী বন্ধুর পাল্লায় পড়ে একটু একটু করে পাল্টে যাওয়া। প্রতিবেশীদের মতে, সিদ্ধার্থ ভারী মিষ্টি ছেলে ছিল।

সিদ্ধার্থ ধর

ব্রিটিশ পুলিশ সূত্রে খবর, ব্রিটেনের একটি হিন্দু পরিবারে তাঁর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। পরে সে মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করে। নাম হয় আবু রুমায়শাহ। দিনে দিনে সে হয়ে মুহাজিরাউন চক্রের নেতৃস্থানীয় এবং মূল বক্তা। ওই চক্র যদিও ব্রিটেনে সন্ত্রাস বিরোধী আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ সংগঠন। এর পর মৌলবাদী মুসলমান হিসেবে রুমায়শাহ পরিচিত হতে শুরু করে। মার্কিন-আরব-ইজরায়েল বিরোধী বিভিন্ন সমাবেশে তাকে দেখা যেতে থাকে। এমনকি, টেলিভিশনেও তাকে মাঝে মাঝেই দেখা যেত। লন্ডনে মৌলবাদী মুসলমানদের কাছে সে অতি পরিচিত মুখ হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন: সিরিয়াতেই কি মৃত্যু বাঙালি জঙ্গি সিদ্ধার্থ ধরের?

আইশা তারিক নামে এক মুসলমান তরুণীর প্রেমে পড়েই সিদ্ধার্থ ধর্ম বদলেছিল বলে দাবি করেন ব্রিটিশ গোয়েন্দারা। যদিও সিদ্ধার্থের প্রতিবেশীরা জানিয়েছিলেন, তুরস্কের বেশ কিছু অভিবাসী পরিবারের সঙ্গে মিশে কট্টরপন্থার দিকে ঝোঁকে সে। বিভিন্ন নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগে তাকে একাধিক বার গ্রেফতারও করে লন্ডন পুলিশ। ২০১৪ সালে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে প্যারিস হয়ে সিরিয়া পালায় সে। সিরিয়ায় থাকাকালীন এক হাতে রাইফেল আর অন্য হাতে এক সদ্যোজাতের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিল সিদ্ধার্থ। ছবিটি নিয়েও প্রবল বিতর্ক হয়।

সিদ্ধার্থ ধর অর্থাৎ ‘জিহাদি সিড’ বা আবু রুমায়শাহ

এই সব কারণে তাকে নজরে রেখেছিল ব্রিটিশ গোয়েন্দারা। ২০১৪-য় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু, জামিনে শেষমেশ ছাড়া পায় সে। যদিও বিনা অনুমতিতে তার বিদেশ যাওয়া আটকাতে পাসপোর্ট জমা রাখা হয়। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী এবং সন্তানকে নিয়ে সিরিয়া পালিয়ে যায় সিদ্ধার্থ। লন্ডনের ভিক্টোরিয়া স্টেশন থেকে প্যারিসের ট্রেন ধরে। সেখান থেকে সোজা সিরিয়া। গোয়েন্দারা প্রথমে সে কথা জানতে পারেননি।

আরও পড়ুন: সন্ত্রাসের প্রশ্নে সিরিয়ার থেকেও তিন গুণ বেশি বিপজ্জনক পাকিস্তান, বলছে রিপোর্ট

সিরিয়ায় পৌঁছে সিদ্ধার্থ কয়েক সপ্তাহ পরে তার সিরিয়াবাসের কথা টুইট করে জানায়। সঙ্গে একটি ছবি। সেই ছবিতে দেখা যায়, সিদ্ধার্থের কোলে তার নবজাতক সন্তান এবং অন্য হাতে রাইফেল। সঙ্গে লেখা: ‘ব্রিটিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই জঘন্য। আর সে কারণেই আমি ব্রিটেন এবং আইএস-এর মধ্যে সংযোগ তৈরি করতে পারলাম।’ এর পর বিভিন্ন সময়ে তার নানা মৌলবাদী বার্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা গিয়েছে।

সিদ্ধার্থের মৃত্যু নিয়ে অবশ্য তার পরিবারের প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি।

Siddhartha Dhar Abu Rumaysah Syria US ISIS সিদ্ধার্থ ধর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy