২৫ বছরের অ্যারন বুশনেলের শরীর যখন দাউদাউ করে জ্বলছে, তখনও তাঁর দিকে তাক হয়ে রয়েছে বন্দুক, তখনও তাঁকে ‘বিপজ্জনক’ ভাবছেন বন্দুক হাতের মানুষটি। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে অ্যারনের ভিডিয়ো, তাতে এই দৃশ্য দেখে প্রতিবাদে সরব বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। বন্দুকধারীর পরিচয় অবশ্য স্পষ্ট নয়। কারও মতে তিনি আমেরিকান পুলিশ অফিসার, কেউ মনে করছেন ওয়াশিংটন ডিসির ইজ়রায়েলি দূতাবাসের নিরাপত্তারক্ষী। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় দূতাবাসের সামনে গায়ে আগুন দেন আমেরিকার বায়ুসেনার এক সদস্য অ্যারন। তখন তিনি কর্তব্যরত অবস্থায় ছিলেন। আত্মদহনের সময়ে তাঁর মুখে ছিল প্যালেস্টাইনকে মুক্ত করার বার্তা। সমাজমাধ্যমের ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, আগুন দেওয়ার সময় অ্যারন চিৎকার করছেন, “আমি আর গণহত্যায় যুক্ত থাকব না।”
অ্যারনের এই পদক্ষেপ আসলে রাজনৈতিক প্রতিবাদ। খুব অদ্ভুত ভাবে এই ঘটনা ফিরিয়ে নিয়ে যায় ১৯৬৩ সালের ভিয়েতনামে। সাইগনের ব্যস্ত রাস্তায় গায়ে আগুন দিয়েছিলেন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী থিক কুয়াং ডুক। আমেরিকা সমর্থিত দক্ষিণ ভিয়েতনাম সরকারের হাতে বৌদ্ধদের নিগ্রহের প্রতিবাদেই এই সিদ্ধান্ত ছিল তাঁর। সমাজমাধ্যমে আমেরিকান সেনা অ্যারনের পোস্টের পারম্পর্য সেই প্রতিবাদের ধারাই নির্দেশ করে। ২০২৩-এর ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েল-হামাস সংঘাত শুরুর পর থেকে অ্যারন পুরোদমে ইজ়রায়েল ও আমেরিকাকে সমর্থন করে গিয়েছেন। ক্রমে এসেছে প্রশ্ন। ঘটনার দিন অ্যারন ফেসবুকে একটি তাৎপর্যপূর্ণ পোস্ট পোস্টে অ্যারন লেখেন, ‘আমার দেশ যদি গণহত্যা করে, প্রশ্ন জাগে, কী করব?’ খানিক পরের ভিডিয়োয় তিনি স্পষ্ট জানান, তাঁর প্রতিবাদের পথ যন্ত্রণাদায়ক। তবে, প্যালেস্টাইনের মানুষ যে যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তার তুলনায় অনেক কম। সেখানে যন্ত্রণাকেই স্বাভাবিক করে তুলেছে শাসকেরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘শাসক’ বলতে আমেরিকা ও ইজ়রায়েলের কথা বলেছেন অ্যারন। পেন্টাগন তাঁর আত্মদহনের ঘটনাটিকে ‘দুঃখজনক’ আখ্যা দিলেও ওয়াশিংটন পুলিশ, গোয়েন্দা দফতর-সহ বহু দফতরই জোরকদমে তদন্ত শুরু করেছে।
অ্যারনের মৃত্যুর ঠিক পরে, সোমবারই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দাবি করেন, ৪ মার্চের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হবে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, মঙ্গলবারই হামাস ও ইজ়রায়েলের কাছে যুদ্ধবিরতি, শান্তি চুক্তি ও বন্দি প্রত্যর্পণের একটি খসড়া প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। প্যারিসে হয়েছে এই খসড়া, উপস্থিত ছিল কাতার, মিশর ও আমেরিকা। বলা হয়েছে, দু’পক্ষই যুদ্ধ বন্ধ করবে সম্পূর্ণ ভাবে। ৪০ জন ইজ়রায়েলি বন্দির মুক্তির বদলে প্রায় ৪০০ জনের কাছাকাছি প্যালেস্টাইনি বন্দিদের মুক্তি দেবে ইজ়রায়েল। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজ়াকে ফের বাসযোগ্য করে তুলতে হবে, ইজ়রায়েল তার বাহিনী সরিয়ে নেবে। এই পদক্ষেপগুলি করতে হবে ৪০ দিনের মধ্যে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)