E-Paper

মস্তিষ্কে চিপ, বুলি অস্ফুট মুখে

‘নেচার’ জ়ার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরের ধাপে আধুনিক কম্পিউটিং পদ্ধতি, এআই অ্যালগরিথম কাজে লাগিয়ে দশ মিলিসেকেন্ড অন্তর ওই রোগীর মস্তিষ্কের স্নায়বিক নির্দেশ বা সিগন্যাল সংগ্রহ করে বিশ্লেষণকরা হয়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৫ ০৭:৫৫
এআই-নির্ভর ‘ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস’ (বিসিআই)-এর অভাবনীয় দক্ষতায় হার মানছে জটিল অসুখে তৈরি প্রতিবন্ধকতাও।

এআই-নির্ভর ‘ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস’ (বিসিআই)-এর অভাবনীয় দক্ষতায় হার মানছে জটিল অসুখে তৈরি প্রতিবন্ধকতাও। —প্রতীকী চিত্র।

স্নায়ুরোগে আক্রান্তের মস্তিষ্কে বসানো ইলেকট্রনিক চিপ। তাতেই কথা ফুটছে। বেরোচ্ছে গানও। মানবকণ্ঠে নয়, যন্ত্র-মুখে। তবে গোটাটাই অত্যন্তস্বতঃস্ফূর্ত, মানবিক অনুভূতিসম্পন্ন। যান্ত্রিকতার লেশমাত্র নেই। এআই-নির্ভর ‘ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস’ (বিসিআই)-এর অভাবনীয় দক্ষতায় হার মানছে জটিল অসুখে তৈরি প্রতিবন্ধকতাও। মোটর নিউরনের জটিল অসুখে কথা বলার শক্তি হারিয়েছিলেন বছর পঁয়তাল্লিশের এক ব্যক্তি। সামান্য কিছু শব্দ করারই ক্ষমতা ছিল। কিন্তু তা-ও এত মৃদু ও অস্পষ্ট যে, বোধগম্য নয়। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক দলের তত্ত্বাবধানে তাঁর উপরে ‘বিসিআই’ পদ্ধতির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়। মস্তিষ্কের ‘মোটর কর্টেক্স’ অঞ্চলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বসানো হয় দেড় মিলিমিটার দীর্ঘ ২৫৬টি সিলিকন ইলেকট্রোড।

‘নেচার’ জ়ার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরের ধাপে আধুনিক কম্পিউটিং পদ্ধতি, এআই অ্যালগরিথম কাজে লাগিয়ে দশ মিলিসেকেন্ড অন্তর ওই রোগীর মস্তিষ্কের স্নায়বিক নির্দেশ বা সিগন্যাল সংগ্রহ করে বিশ্লেষণকরা হয়। ফলাফল ছিল অত্যাশ্চর্য। দেখা যায়, যন্ত্রটি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ব্যক্তির অব্যক্ত শব্দ, কথাকে প্রকাশ করতে পারছে। যেন কোনও যন্ত্র মারফত নয়, স্বাভাবিক ভাবে বহির্জগতের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ তৈরি হয়েছে।

গবেষক দলের অন্যতম, নিউরোবিজ্ঞানী মৈত্রেয়ী ওয়েরাগকর বলেছিলেন, “কারও সঙ্গে কথোপকথনের সময়ে আমরা সব সময়ে কথা বা ভাষার প্রয়োগ করি না। নানা শব্দেও মনের ভাব বোঝানো যায়। যেগুলি সে ভাবে শব্দভাণ্ডারের অন্তর্গত নয়। বিসিআই তা-ও দক্ষ ভাবে করতে পারছে। প্রকাশ পাচ্ছে ছোটখাটো মানবিক অনুভূতি। সব চেয়ে বড় কথা, গোটাটাই হচ্ছে রিয়েল টাইমে। যা আগে হয়নি।” তিনি আরও জানান, প্রথমে স্বর যান্ত্রিক হলেও পরে এআইয়ের সাহায্যে তা ওই ব্যক্তির নিজস্ব স্বরে পরিবর্তিত করা গিয়েছে।শুধু সাধারণ কথাবার্তা বা গান গাওয়া নয়। কোনও কঠিন শব্দ উচ্চারণ করা, প্রশ্নের উত্তর দেওয়া এমনকি যন্ত্রের স্মৃতিতে না থাকা শব্দও উচ্চারণে দক্ষতা দেখিয়েছে বিসিআই পদ্ধতি। মৈত্রেয়ীর কথায়, “যন্ত্রের কাজে খুশি ওই রোগীও। যান্ত্রিক হলেও বলতে চাওয়া কথা আবার শুনতে পাওয়াবড় পাওনা।”

এর আগেও বিসিআই পদ্ধতি কাজে লাগানোর চেষ্টা চলেছে। তবে তা মূলত রোগীর মস্তিষ্কের ইলেকট্রিক্যাল সঙ্কেতের বিশ্লেষণ করে তাঁর অস্ফুট কথা বোঝাতে পেরেছিল, জানিয়েছেন নেদারল্যান্ডের ম্যাসট্রিচ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটেশনাল নিউরোবিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান হার্ফ। সেখানে নতুন এই প্রয়োগ আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে ব্যক্তির স্বাভাবিক অনুভূতি প্রকাশের নানা দিকগুলিও ধরতে পারছে। “যান্ত্রিক হলেও ভাবের প্রকাশ এখন অনেক স্বাভাবিক, স্বতঃস্ফূর্ত এবং ধারাবাহিক। ভবিষ্যতে তা হয়তো এমন রোগীদের দৈনন্দিন ব্যবহারের সরঞ্জাম হতে চলেছে”,মত হার্ফের।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Science NATURE Journal Medical

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy