Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মসজিদের দরজায় ফুলের বার্তা বিশ্ব জুড়ে

আর লেখা, ‘‘পাশে আছি। কষ্ট ভাগ করে নিতে পারো আমাদের সঙ্গে।’’

হাহাকার : শনিবার ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদের সামনে। ছবি: এপি।

হাহাকার : শনিবার ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদের সামনে। ছবি: এপি।

সংবাদ সংস্থা
ক্রাইস্টচার্চ শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৯ ০৫:১১
Share: Save:

বাগান জুড়ে সাজিয়ে রাখা সার সার ফুলের তোড়া, কার্ড, খেলনা। কোনটায় লেখা ‘‘খুবই দুঃখিত। আমরা সকলে এমন নই।’’ কোনটায় লেখা রয়েছে, ‘কিয়া কাহা’। নিউজ়িল্যান্ডের তে রিয়ো ভাষায় যার অর্থ ‘রুখে দাঁড়াও’। অনেকে রাস্তার উপরেই চক দিয়ে লিখে দিয়েছেন, ‘‘ওরা কোনও দিন জিততে পারবে না। ভালবাসাকেই বেছে নাও।’’ বাগানের ইতিউতি হাওয়ায় উড়ছে রঙিন ফিতে। সাজিয়ে রাখা কাগজের টুকরোয় লেখা ফোন নম্বর। আর লেখা, ‘‘পাশে আছি। কষ্ট ভাগ করে নিতে পারো আমাদের সঙ্গে।’’

নিউজ়িল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরে জোড়া মসজিদে শ্বেতাঙ্গ হামলায় আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে এ ভাবেই বার্তা দিলেন স্থানীয়েরা। শনিবার সকাল থেকেই শহরের বটানিক্যাল গার্ডেনে জড়ো হয়েছিলেন সকলে। বাদ যায়নি খুদেরাও। ওঁরা অনেকেই মুসলিম নন, সন্ত্রাস বিরোধী। সেই ভিড় দেখে কে বলবে, মাত্র এক দিন আগে এই শহরের বুকে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছেন ৪৯ জন। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন আরও অনেকে।

হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারান্টের তৈরি করা রক্তাক্ত ক্রাইস্টচার্চ নয়, আজ সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে অন্য ক্রাইস্টচার্চের ছবি। আর তারই সমর্থনে আমেরিকা, ব্রিটেন-সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মসজিদের বাইরে ফুল রেখে আক্রান্তদের পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছেন স্থানীয়েরা। ভরসা পাচ্ছেন ওঁরাও। এত কিছুর পরেও নিউজ়িল্যান্ডকেই নিরাপদ মনে করছেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ভবিষ্যতে এ দেশেই থাকতে চান লিনউড মসজিদের ইমাম আব্দুল হালিম। তিনি বলছিলেন, ‘‘এখনও এই দেশটাকে ভালোবাসি।’’ লিনউডের এই মসজিদে গুলি হামলায় ৭ জন নিহত হয়েছেন।’’ একটু থেমে আব্দুল বললেন, ‘‘আমার ছেলেমেয়েরা এখানে থাকে। তবু আমরা ভাল আছি।’’ দেশের মানুষের মতো নিউজ়িল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্নও আক্রান্তদের আগলে রাখার আশ্বাস দিয়েছেন। শুক্রবারের হামলাকে ‘নিউজ়িল্যান্ডের ইতিহাসে অন্ধকারতম দিন’ হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেছিলেন, ‘‘যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরাই আমরা। এ দেশকে নিরাপদ বাসভূমি হিসেবে যাঁরা বেছে নিয়েছেন, নিউজ়িল্যান্ড তাঁদেরই।

যে হামলা চালিয়েছে, সে আমাদের কেউ নয়।’’ ইউরোপ-আমেরিকা জুড়ে যখন ইসলাম বিদ্বেষ ও শরণার্থী সঙ্কট বাড়ছে, তখন আক্রান্ত মুসলিম ও অভিবাসীদের ‘আমরা’ বলে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন জেসিন্ডা। যে ‘আমরা’র কথা বার বার ফিরে এসেছে তাঁর দেশবাসীর মুখেও।

৯/১১ হামলার পর আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘আপনারা হয় আমাদের সঙ্গে নয়তো সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে। এই ‘আমরা-ওরা’র ব্যবহার নিয়ে তখন অনেক বিতর্ক হয়েছে। বুশ সমালোচিত হয়েছিলেন এই বলে যে তিনি যুদ্ধের পক্ষে এবং আমেরিকার পক্ষে না হলেই কাউকে সন্ত্রাসবাদীদের দলে ঠেলে দিতে চাইছেন। সেই গা জোয়ারি ‘আমরা-ওরা’কে বদলে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেলেন জেসিন্ডা।

ক্রাইস্টচার্চের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া হলিউডেও। নিউজ়িল্যান্ডের অস্কারজয়ী অভিনেতা রাসেল ক্রো, পরিচালক তাইকা ওয়াতিতি, অভিনেতা স্যাম নিল-সহ অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক ও ক্ষোভ জানিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে ‘থর: র‌্যাগনারক’, ‘হান্ট ফর দ্য ওয়াইল্ডার পিপল’ খ্যাত পরিচালক ওয়াতিতির টুইট, ‘‘মন ভেঙে গিয়েছে। আমার দেশ কাঁদছে। কাঁদছি আমিও। দেশের মাটিতে এত বড় ঘৃণ্য ঘটনা ঘটেছে তা জানার পর থেকে মরমে মরে আছি। ক্রাইস্টচার্চের আক্রান্তরা ও তাঁদের পরিবারের প্রতি, মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি, এ দেশকে যাঁরা নিজের বলে জানেন, তাঁদের সকলকে প্রতি আমার ভালবাসা জানাই। আমরা সত্যি এমন নই। দিস ইজ নট আস।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE