‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের সময়ে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছিল দু’টি দেশ। তার ‘খেসারত’ এখনও দিতে হচ্ছে। সেই মে মাস থেকে ওই দুই দেশে ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা প্রায় তলানিতে। অথচ, তার আগে এপ্রিল পর্যন্ত পরিসংখ্যানটা ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ভারত থেকে প্রচুর পর্যটক এই দুই দেশে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। সমৃদ্ধ হচ্ছিল তাদের পর্যটন শিল্প। এমনকি, ভারতীয় পর্যটকদের উপর অনেকাংশে তারা নির্ভরশীলও হয়ে পড়েছিল।
আজ়ারবাইজান এবং তুরস্ক— দু’টিই পশ্চিম এশিয়ার দেশ। আগে ভারতীয় পর্যটকদের মধ্যে এই দেশগুলির তেমন জনপ্রিয়তা ছিল না। তবে গত কয়েক বছর ধরে পশ্চিম এশিয়া ভারতীয় পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সরাসরি বিমান যোগাযোগ থাকায় আজ়ারবাইজান এবং তুরস্কের জনপ্রিয়তাও বেড়ে গিয়েছিল। দু’টি দেশের পর্যটন সংক্রান্ত পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, মে থেকে অগস্ট মাসের মধ্যে আজ়ারবাইজানে ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা কমেছে ৫৬ শতাংশ। তুরস্কে কমেছে ৩৩.৩ শতাংশ।
আরও পড়ুন:
আজ়ারবাইজানে গত কয়েক বছরে যে হারে ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছিল, তাতে সেই দেশের পর্যটন বিভাগ ভারতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে শুরু করে। পর্যটন থেকে মোট আয়ের তালিকায় প্রথম পাঁচে উঠে এসেছিল ভারত। কিন্তু অগস্টেই তা নেমে যায় ১১ নম্বরে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে ভারতীয় পর্যটক ৩৩ শতাংশ বেড়েছিল আজ়ারবাইজানে। তার পরের চার মাসে ৫৬ শতাংশ কমেছে। ২০২৪ সালের এই সময়ে যত ভারতীয় পর্যটক দেশটিতে ছিলেন, তার সঙ্গে তুলনা করে ফারাকটা আরও স্পষ্ট হয়েছে।
আরও পড়ুন:
তুরস্কের পর্যটন বিভাগের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালের মে থেকে অগস্ট মাসে সে দেশে ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা ছিল ১.৩৬ লক্ষ। ২০২৫ সালের ওই সময়ে তা এক তৃতীয়াংশ কমে গিয়েছে। মাত্র ৯০,৪০০ জন এই সময়ে তুরস্কে গিয়েছিলেন। আগের দু’বছরে যে পরিসংখ্যান ছিল ঊর্ধ্বমুখী, তা ২০২৫-এ হঠাৎ এক লাফে নেমে গিয়েছে। ভারতের অসামরিক বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক (ডিজিসিএ) সংস্থার পরিসংখ্যানেও ইঙ্গিত মিলেছে। ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে যত ভারতীয় সরাসরি বিমান ধরে তুরস্ক এবং আজ়ারবাইজানে গিয়েছিলেন, ২০২৫ সালে এখনও পর্যন্ত সেই সংখ্যা কম।
গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওই ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করেছিল ভারত। গত ৬ মে তার জবাবে পাকিস্তানে আকাশপথে অভিযান (অপারেশন সিঁদুর) চালায় নয়াদিল্লি। ধ্বংস করা হয় একাধিক জঙ্গিঘাঁটি। এর পরের চার দিন দুই দেশের মধ্যে প্রত্যক্ষ সেনা সংঘাত চলেছে। ১০ মে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি হয়। ভারত-পাক সংঘর্ষ চলাকালীন অনেক দেশই উভয় পক্ষকে উত্তেজনা প্রশমনের বার্তা দিয়েছিল। কিন্তু আজ়ারবাইজান ও তুরস্ক সরাসরি পাশে দাঁড়িয়েছিল পাকিস্তানের। হিসাব বলছে, তখন থেকেই ভারতীয়দের মধ্যে ওই দুই দেশে যাওয়া নিয়ে অনীহা তৈরি হয়েছে। ভারতের অনেক পর্যটন সংস্থা মে মাসে বিবৃতি জারি করে জানিয়েছিল, খুব প্রয়োজন না-হলে এই দু’টি দেশ এড়়িয়ে যাওয়াই ভাল। মে মাসের খেসারত এখনও দিয়ে চলেছে তারা।