মাঝ অতলান্তিকে ডুবন্ত সেই জাহাজের নাম টাইটানিক। যার ট্র্যাজেডিকে ঘিরে সুরের মায়ায় স্বপ্ন এঁকেছিলেন তিনি। বেঁধেছিলেন বেঁচে থাকার গান— ‘মাই হার্ট উইল গো অন’। ২ কোটি ৭০ লক্ষ ক্যাসেট-সিডি বিক্রি হয়েছিল ‘টাইটানিক’-এর। সুরের সেই জাদুকর জেমস হর্নারের মৃত্যুতেও রয়ে গেল চমক।
ক্যালিফোর্নিয়ায় এক বিমান দুর্ঘটনায় সোমবার মৃত্যু হয়েছে ৬১ বছরের এই সুরকারের। পরিবার সূত্রের খবর, বিমান চালানোর রীতিমতো প্রশিক্ষণ ছিল তাঁর। নিজের দু’আসনের ছোট্ট বিমানটি নিয়ে প্রায়ই ঘুরতে বেরোতেন। সোমবারও বিমানে একাই ছিলেন তিনি। পুলিশ সূত্রের খবর, সান্টা বারবারার উত্তরেই ভেঙে পড়ে বিমানটি। লস পাডরেস জাতীয় উদ্যান থেকে উদ্ধার করা হয় তাঁর মৃতদেহ। অনেকেই জেমসের এই পরিণতির সঙ্গে মিল পাচ্ছেন ইংরেজি গানের অন্যতম প্রবাদপুরুষ জন ডেনভারের। ১৯৯৭-এ ক্যালিফোর্নিয়াতেই বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান ডেনভার। তিনিও একাই ছিলেন বিমানে।
তবু জেমসের এ ভাবে চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছেন না কেউই। ‘মাই হার্ট উইল গো অন’-এর গায়িকা সেলিন ডিওন বলেন, ‘‘আমাদের হৃদয়ে এবং স্বপ্নে জেমস থেকে যাবেন।’’ জেমস নিজেও ‘থেকে যাওয়ার’ কথাই বলতেন। ২০০৯-এ বলেছিলেন, ‘‘সিনেমার প্রতিটি মুহূর্ত যাতে দর্শক-শ্রোতাদের মনে থেকে যায়, তার উপযুক্ত মূর্চ্ছনা তৈরি-ই আমার কাজ।’’
সেই কাজের স্বীকৃতিও জেমস পেয়েছেন। টাইটানিকের সৌজন্যে পান দু-দু’টি অস্কার। বিস্তর প্রশংসা কুড়িয়েছেন ‘আ বিউটিফুল মাইন্ড’, ‘ব্রেভহার্ট’, ‘ট্রয়’ ছবিতে সুর করার জন্য। ‘অবতার’, ‘হাউস অব স্যান্ড অ্যান্ড ফগ’, ‘ফিল্ড অব ড্রিমস’ প্রভৃতি ছবির জন্য অস্কারের মনোনয়নও পেয়েছেন একাধিক বার। টাইটানিক-সহ মার্কিন পরিচালক জেমস ক্যামেরনের তিনটি ছবিতে সুর দিয়েছিলেন হর্নার। ক্যামেরনের কথায়, ‘‘টাইটানিকে অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছিলেন জেমস। এ জাদু ছাড়া আর কিছু নয়।’’
কী সেই জাদু? বছর চারেক আগে এক সাক্ষাৎকারে ক্যামেরন নিজেই সেই রহস্য ফাঁস করেন। বলেন, ‘‘টাইটানিকের গানে আমি চেয়েছিলাম অসাধারণ রোম্যান্টিক একটা সুর। চূড়ান্ত আবেগ থাকবে তাতে, কিন্তু বেহালার অনুষঙ্গ ছাড়াই।’’ পরিচালকের সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন জেমস। হাসিমুখেই। টাইটানিকের সেই সুরে অনেকেই ডেনভারের ছোঁয়া পান। পশ্চিম ইউরোপের প্রাচীন সেলটিক লোকসঙ্গীতের সঙ্গে ফিউশনের কথা জেমস নিজেই স্বীকার করেছেন।
গানের একাধিক ঘরানার সঙ্গে এই বোঝাপড়ার শুরুটা জেমসের ছেলেবেলা থেকেই। জন্ম ১৯৫৩ সালে। পাঁচ বছর বয়সে পিয়ানো দিয়ে শুরু করেন গানের পাঠ। প্রথম কাজের সুযোগ পান ১৯৮২ সালে ‘স্টার ট্রেক টু’-তে। ছোট্ট একটা চরিত্রে অভিনয়ও করেন সেই ছবিতে। কাজ করেছেন জর্জ লুকাস, স্টিভেন স্পিলবার্গ, রন হাওয়ার্ড, অলিভার স্টোনের মতো হলিউডের প্রথম সারির প্রায় সব পরিচালকের সঙ্গেই।
কিন্তু তাঁর শেষটাও যে এ ভাবে সিনেমার মতোই ট্র্যাজেডিময় হবে, ভাবেননি কেউ।
এক মাস আগে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান নোবেলজয়ী গণিতবিদ জন ন্যাশ। তাঁর জীবন নিয়েই তৈরি হয়েছিল ‘আ বিউটিফুল মাইন্ড’। সেই ছবির সুর দিয়েছিলেন জেমস হর্নারই।