Advertisement
E-Paper

গর্ভ ভাড়া দিতে আমেরিকায় গিয়ে দু’বছর ধরে চরম নির্যাতনের শিকার

মেক্সিকোর গুয়াদালাজারা। ছিমছাম সাজানো গোছানা পুরনো একটা শহর। যেখানে দিনটা শুরু হয় মারিয়াচি মিউজিক দিয়ে। শেষও হয় মারিয়াচি মিউজিক আর টাকিলা দিয়ে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৭ ১৭:৪৫
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মেক্সিকোর গুয়াদালাজারা। ছিমছাম সাজানো গোছানা পুরনো একটা শহর। যেখানে দিনটা শুরু হয় মারিয়াচি মিউজিক দিয়ে। শেষও হয় মারিয়াচি মিউজিক আর টাকিলা দিয়ে। কিন্তু ‘ওয়াই এল’ (পরিবর্তিত নাম, আদালতের নথিতে দেওয়া) নামে এক যুবতীর আর্থিক অবস্থা দিন দিন ক্রমশই খারাপের দিকে যাচ্ছিল। বাংলা ভাষায় যাকে বলে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।’

সেই সময় এক বন্ধুর মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে দেখা হয় ফ্লোরিডার বসবাসকারী এস্থেলা ক্লার্কের (৪৭) সঙ্গে। তাঁর আসল বাড়ি মেক্সিকোতেই। ওই মহিলা ‘ওয়াই এল’কে জানান, তাঁর বয়ফ্রেন্ড একটি সন্তান চান। কিন্তু যেহেতু ক্লার্কের আগের পক্ষের অনেকগুলো সন্তান রয়েছে এবং কিছু শারীরিক অসুবিধার কারণে তিনি তাঁর বয়ফ্রেন্ডের ইচ্ছেটা পূরণ করতে পারছেন না। সেই কারণে এক মহিলার গর্ভ ভাড়া নেওয়ার খোঁজে রয়েছেন তিনি। ‘ওয়াই এল’কে তাঁর গর্ভভাড়া দেওয়ার অনুরোধ করে বসেন ক্লার্ক। প্রথমটায় রাজি হতে চাননি তিনি। কিন্তু যখন ক্লার্ক জানান যে, এই কাজের বিনিময়ে তাঁকে তিন থেকে চার হাজার ডলার দেওয়া হবে, এবং পুরো বিষয়টিই হবে আইন মেনে এবং চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণেই, তখন আর না করেননি ‘ওয়াইল এল’। ক্লার্কের দেওয়া মাত্র ১০০ পিসো (৩৪৬ টাকা) আর একটা বাসের টিকিট নিয়ে আমেরিকার উদ্দেশে রওনা দেন ওই যুবতী।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানের দরগায় বেহুঁশ করে, নগ্ন করে কুপিয়ে খুন ২০ জনকে

ভেবেছিলেন একটা বছরের তো ব্যাপার। একটা বছর কষ্ট-শিষ্টে অন্যের সন্তান গর্ভে ধারণ করে কাটিয়ে দিতে পারলে হাতে কয়েক হাজার ডলার আসবে। আর এর পর ফের গুয়াদালাজারায় ফিরে আসা যাবে।

কিন্তু ফ্লোরিডায় পৌঁছে দেখলেন যা ভেবেছিলেন ঘটলো তার উল্টো। এক ভয়ানক পরিস্থিতির সম্মুখীন হত হল তাঁকে। এমনিতেই বাড়ির কাজের লোকের মতো ব্যবহার করা হত। শুতে দেওয়া হত ডাইনিং হলের মেঝেতে। সামান্য খাবার। বাড়ি থেকে বের হতে দেওয়া হত না। একটা সময় ক্লার্ক বুঝতে পারেন, ওয়াই এল গর্ভধারণে অক্ষম। তার পর থেকে শুরু হয় আরও নির্যাতন। এমনটা যে হবে তা ‘ওয়াই এল’ স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ক্লার্কের এক পড়শীর সন্দেহেই ক্লার্কের জাল থেকে মুক্তি মেলে তাঁর। অভিযোগের ভিত্তিতে চলে তদন্ত। তদন্ত শেষে দোষী সাব্যস্ত হন ক্লার্ক। শাস্তি ঘোষণা হবে। ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে তাঁর।

কী কী অভিযোগ ছিল ক্লার্কের বিরুদ্ধে?

আদালতে পুলিশের দায়ের করা তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালের ডিসেম্বরের কোনও এক রবিবার ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিলেতে ক্লার্কের অ্যাপার্টমেন্টে এসে পৌঁছান ‘ওয়াই এল’। তাঁকে ওই অ্যাপার্টমেন্টে ছোট্ট একটি ঘরে টানা দু’বছর আটকে রাখা হয়েছিল। এমনকী তাঁকে দিয়ে ঘরের সমস্ত কাজ করানো হত। ‘ওয়াই এল’কে শুধুই বিনস খেতে দিত ক্লার্ক। এমনকী ডাইনিং রুমের মেঝেতে তাঁকে শুতে বাধ্য করা হত। ওয়াই এলকে দিয়েই ঘরের সমস্ত কাজ করানো হত।

ক্লার্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই তিনি তাঁর বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হতেন। একদিন সঙ্গমের পর কন্ডোম থেকে তাঁর বয়ফ্রেন্ডের বীর্য সংগ্রহ করেন। এবং তা একটি সিরিঞ্জের মাধ্যমে ওয়াই এলের শরীরে নিষিক্ত করার চেষ্টা করেন।

এর জন্য ‘ওয়াই এল’কে প্রথমে সম্পূর্ণ নগ্ন করে দেওয়া হয়। এরপর তাঁর কোমরের নীচে বালিশ রেখে পা দু’টি শূন্যের দিকে তুলে রাখতে বলেছিলেন ক্লার্ক। আর এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি করতে ২০ মিনিট সময় লাগবে বলেও জানিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন: আর মাটিতে নয়, এ বার তৈরি হবে ঝুলন্ত অট্টালিকা!

এরপ র তাঁর উপর দিন দিন অত্যাচারের মাত্রা বাড়তে থাকে। ‘ওয়াই এল’ পুলিশকে জানিয়েছেন, প্রতি দিন তাঁর যৌনাঙ্গে সিরিঞ্জের মাধ্যমে তিন থেকে চারবার বীর্য প্রবেশ করানো হত। এমনকী পিরিয়ডসের সময়ও রেহাই মিলত না তাঁর। কিন্তু তিন মাস পরেও তাঁর শরীরে গর্ভবতী হওয়ার কোনও লক্ষণ না দেখা গেল না। এর পরেই শুরু হল অকথ্য অত্যাচার। প্রতি দিনই বেধড়ক মারধর করা হত তাঁকে। এমনকী তাঁকে ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল।

ক্লার্ক ‘ওয়াই এল’কে বলেছিলেন, তিনি যেহেতু ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন না, তাই সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে তাঁকে। এমনকী বাইরে বের হলে প্রাণে মেরে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। দিনের পর দিন ঘরের সমস্ত কাজ, একটা সময় শপিং, গাড়ি পরিষ্কার সবই করানো হত ‘ওয়াই এল’কে দিয়ে, এক্কেবারে বিনা পয়সায়।

এক দিন প্রবল ঠান্ডার মধ্যে স্বল্প পোশাক পরে বাড়ির বাইরে গাড়ি পরিষ্কার করছিলেন ‘ওয়াই এল’। তাঁকে দেখে এক মহিলার সন্দেহ হওয়ায় তিনি পুলিশে ফোন করেন। ওই মহিলা পুলিশকে জানান, ওই যুবতীর গায়ে মারধরের চিহ্ন স্পষ্ট। এবং তাঁকে কোনও দেশ থেকে পাচার করানো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এর পর ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্লার্ককে গ্রেফতার করেন পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত দাসত্ব, অন্য দেশ থেকে নারী পাচারের অভিযোগে ৯টি ধারায় মামলায় রুজু হয়। এই সপ্তাহেই তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছে মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট। যদিও ক্লার্কের আইনজীবী থমাস বেলের মতে, তাঁর মক্কেল নির্দোষ। এই ঘটনাটি সামনে আসতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

US Abuse Woman Torture Mexico Smuggling Women Trafficking
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy