Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Christmas In Ukraine

রাশিয়া থেকে আরও দূরে, নতুন বড়দিন ইউক্রেনে

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি আজ বলেছেন, ‘‘ইউক্রেনীয়রা এক সঙ্গে আছেন। আমরা একসঙ্গে ক্রিসমাস পালন করব। এক দিনে, একটা বড় পরিবারের মতো, এক দেশের মতো, একতার সঙ্গে।’’

An image of Christmas in Ukraine

৭ জানুয়ারির বদলে এ বছর ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাস পালন করল ইউক্রেন। ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:১৯
Share: Save:

নতুন বড়দিন। যুদ্ধ, ধ্বংস, মৃত্যুর ক্লান্তি পেরিয়ে এক অন্য বড়দিন বেছে নিলেন ইউক্রেনের মানুষ। রাশিয়ার মতো এ দেশের বাসিন্দারাও অর্থোডক্স খ্রিস্টান। তাঁরাও এত দিন ৭ জানুয়ারি ক্রিসমাস পালন করতেন। কিন্তু এ বছর জানুয়ারি মাসে রাশিয়ায় যখন উৎসব চলছিল, জ্বলছিল ইউক্রেন। রাতভর কিভে ক্ষেপণাস্ত্র হানা চালিয়েছিল মস্কো। সেই ক্ষত মনে রেখেই রাজনীতির পাশাপাশি এ বার ধর্মীয় সম্পর্ক ছেদ করার সিদ্ধান্ত নিল এক সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত থাকা দেশটি। ৭ জানুয়ারির বদলে এ বছর ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাস পালন করল ইউক্রেন। সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, এ বার থেকে গোটা বিশ্বের সঙ্গে তারাও ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন পালন করবে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি আজ বলেছেন, ‘‘ইউক্রেনীয়রা এক সঙ্গে আছেন। আমরা একসঙ্গে ক্রিসমাস পালন করব। এক দিনে, একটা বড় পরিবারের মতো, এক দেশের মতো, একতার সঙ্গে।’’ দক্ষিণ ইউক্রেনে কৃষ্ণসাগর ঘেঁষা বন্দর শহর ওডেসায় গির্জায় গিয়ে বাতি জ্বালিয়েছেন সাধারণ মানুষ। প্রার্থনা করেছেন তাঁরা। যাজকরা ধর্মীয় আচার-আচরণ নিষ্ঠাভরে পালন করেছেন আজই। বাসিন্দারাও এতে খুশি। ওলেনা নামে এক মহিলা জানিয়েছেন, ‘‘আমার মনে হয়, গোটা বিশ্বের সঙ্গেই বড়দিন পালন করা উচিত আমাদের। মস্কোর থেকে অনেক অনেক দূরে। এটাও একটা বার্তা। নতুন ভাবে উৎসব করব আমরা। স্বাধীন ইউক্রেনের এটাই উৎসব হোক।’’ ওলেনার ছেলে যুদ্ধক্ষেত্রে রয়েছেন। তিনি সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত ডাক্তার।

পূর্বের গির্জাগুলি জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ক্রিসমাস পালন করে। তা হল ৭ জানুয়ারি। পশ্চিমি গির্জাগুলি গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার মেনে চলে। জ়েলেনস্কি গত জুলাই মাসে একটি নতুন আইন এনেছেন দেশে। তাতে ঘোষণা করা হয়েছে, এ বার থেকে বড়দিনের উৎসব হবে ২৫ ডিসেম্বর। তিনি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, এ ভাবে তাঁরা রুশ ঐতিহ্য ও তার প্রভাব থেকে আরও দূরে সরবেন। ইউক্রেন সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্টই জানানো হয়েছে, রাশিয়া ও তদানীন্তন সোভিয়েত যুগের স্মৃতি মুছে ফেলতেই এই উদ্যোগ। এতে সম্মতি জানিয়েছে ইউক্রেনের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিও। রুশ অর্থোডক্স গির্জাগুলির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ভাবে সম্পর্ক ছেদ করেছে ইউক্রেনের অর্থোডক্স গির্জাগুলি।

ইউক্রেনের নতুন রুশ-প্রভাবমুক্ত ‘স্বাধীন’ গির্জাগুলির সদর দফতর কিভের সেন্ট মাইকেল’স গোল্ডেন-ডুমড মনাস্ট্রি। এর নেতৃত্বে এক-এক করে ইউক্রেনের সব ক’টি পুরনো অর্থোডক্স গির্জাকে অধিগ্রহণ করেছে নতুন গির্জা কমিটি। সরকার তাতে উৎসাহ দিচ্ছে। দেশবাসীর একটা বড় অংশও এতে সমর্থন জানাচ্ছেন। ওডেসার একটি গির্জায় প্রার্থনা করতে আসা ডেনিস বলেন, ‘‘ইউক্রেনে এখন যা হচ্ছে, আমরা তাতে সমর্থন জানাতে চাই। কোনও পরিবর্তন সবসময়ই কঠিন। কিন্তু যখন এ ধরনের বদল ঘটে, তখন সকলের সমর্থন প্রয়োজন।’’ কিভের গোল্ডেন-ডুমড মনাস্ট্রিতে প্রার্থনা করতে গিয়েছিলেন ওকসানা কিরোকুনোভা। তিনি বলেন, ‘‘রাশিয়ার আগ্রাসনের পরে এটা হওয়াই স্বাভাবিক। আমি আমার ৮১ বছর বয়সি মা ও ৮৬ বছর বয়সি বাবার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তাঁরা মন থেকে সবটা মেনে নিয়েছেন। বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবেই দেখছেন।’’

সোভিয়েট জমানায় নাস্তিকতায় জোর দেওয়া হত। বড়দিনের রীতি, যেমন ক্রিসমাস ট্রি বা উপহার দেওয়ার রেওয়াজ নববর্ষের সময় পালন করা হত। সেটাই মূল উৎসব ছিল। ৭ জানুয়ারি ক্রিসমাস পালনে ১২ ধরনের নিরামিষ রান্না হত। এর মধ্যে ‘কুটিয়া’ নামে এক ধরনের পুডিংও রান্না হয়। ইউক্রেনে এ বারেও সবই হচ্ছে, শুধু নতুন বড়দিনে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE