Advertisement
E-Paper

‘আমরা সহ্য করে নেব, আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাব’

বারবার রণকৌশল বদলেছে রাশিয়া। এ বারে তাদের অস্ত্র শীত। পারদ শূন্যের নীচে। বরফ পড়া শুরু হয়ে গিয়েছে গত সপ্তাহে। এই প্রবল হিমশীতল ঠান্ডায় ইউক্রেনজুড়ে জমাট বেঁধেছে ঘন অন্ধকার।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২২ ০৯:২৬
ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি ওলেনা জ়েলেনস্কা।

ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি ওলেনা জ়েলেনস্কা। ছবি: সংগৃহীত।

ন’মাস হয়ে গেল যুদ্ধ শুরু হয়েছে ইউক্রেনে। হাজার হাজার মৃত্যু, অসংখ্য মানুষ গৃহহীন, দেশছাড়া লাখো বাসিন্দা— কার্যত ধ্বংসস্তূপ দেশটা। ‘‘অনেক কিছু সহ্য করেছে এ দেশ, আরও অনেক সহ্য করে নেবে,’’ বললেন ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি ওলেনা জ়েলেনস্কা। এই প্রথম একটি ব্রিটিশ দৈনিককে সাক্ষাৎকার দিলেন তিনি। ওলেনার কথায়, ‘‘এ যুদ্ধে জয় ছাড়া শান্তি আসবে না।’’

বারবার রণকৌশল বদলেছে রাশিয়া। এ বারে তাদের অস্ত্র শীত। পারদ শূন্যের নীচে। বরফ পড়া শুরু হয়ে গিয়েছে গত সপ্তাহে। এই প্রবল হিমশীতল ঠান্ডায় ইউক্রেনজুড়ে জমাট বেঁধেছে ঘন অন্ধকার। পাওয়ার গ্রিড লক্ষ্য করে একের পর এক রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হানায় বিদ্যুৎহীন দেশের বহু অঞ্চল। বিদ্যুতের অভাবে বাড়িগুলির ঘর গরম রাখার ব্যবস্থা কাজ করছে না। একাধিক কম্বলেও এ ঠান্ডা মানে না। জল জমে বরফ, পানীয় জলের আকাল দেখা দিয়েছে। রুশ রকেট নয়, এ বারে হয়তো ঠান্ডাতেই আরও কত শত বাসিন্দার মৃত্যু হবে! ফার্স্ট লেডি বলেন, ‘‘শীত পড়তে শুরু করেছে। এই প্রবল ঠান্ডা... রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জেরে ব্ল্যাক আউট... ইউক্রেন সব সহ্য করে নেবে। আমরালড়াই চালিয়ে যাব। এ যুদ্ধে জয় ছাড়া শান্তি আসবে না।’’

রাজধানীতে এক সরকারি ভবনে, বালির বস্তা দিয়ে ঘেরা আঁটোসাটো নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ওলেনার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ব্রিটিশ দৈনিকটির সাংবাদিক। মাঝে গুঞ্জন উঠেছিল, স্ত্রী-সন্তানদের দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। সর্বসমক্ষে সে অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছিলেন তিনি। এই সাক্ষাৎকারও কিভে বসে দিয়েছেন ওলেনা। তিনি বলেন, ‘‘কত ভয়ানক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি আমরা, কত প্রাণহানি দেখেছি, কত ধ্বংস, এই বিদ্যুৎহীন অন্ধকার পরিস্থিতিকে কখনওই সবচেয়ে কঠিন বলা যায় না।’’

ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন ওলেনাও। স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা নিজেদের অবস্থান থেকে সরতে অনড়। ওলেনা বলেন, ‘‘সম্প্রতিএকটি গণভোট হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার সুযোগ থাকলে মানুষ আরও দু’তিন বছর এই বিদ্যুৎ সঙ্কট সহ্য করে নিতে রাজি।’’

ফার্স্ট লেডির ব্যাখ্যা, হয়তো একটা দীর্ঘ কঠিন রাস্তা, তবু তার শেষটা জানা থাকলে শান্তি। ওলেনা বলেন, ‘‘কত কিলোমিটার দৌড়তে হবে যদি জানা থাকে, তখন ম্যারাথনও সহজ লাগে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ইউক্রেনীয়রা জানেন না, ঠিক কতটা রাস্তা তাঁদের দৌড়তে হবে। তবু দৌড়ে যেতে হবে। থামলে চলবে না। মাঝেমাঝে যা অসহনীয়।’’

কিভের সরকারি বাসভবন থেকেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন জ়েলেনস্কি। প্রায় ২৪ ঘণ্টাই নিজের দফতরে থাকেন তিনি। ওলেনা জানালেন, শেষ কবে পরিবারের সকলে একসঙ্গে বসে খেয়েছেন, মনে নেই তাঁর। তাঁদের দুই সন্তান, ১৮ বছরের ওলেকসান্দ্রা ও ৯ বছরের কিরিলো। ওলেনা বলেন, ‘‘আমি বাচ্চাদের নিয়ে প্রায় আলাদাই রয়েছি। উনি কাজ নিয়ে ব্যস্ত। ছোট ছোট বিষয়— ঘড়ি দেখার দরকার নেই, কোনও তাড়া নেই, যত ক্ষণ মন চায়, এক সঙ্গে বসে গল্প করা, সে সব আর হয় না।’’

প্রেসিডেন্ট-পত্নী জানান, এ শুধু তাঁদের গল্প নয়, ইউক্রেনীয়দের জীবনই বদলে দিয়েছে এই যুদ্ধ। পরিস্থিতির চাপে রণক্ষেত্রে লড়ছেন ইঞ্জিনিয়ার থেকে ব্যালেরিনা। ৮০ লক্ষের কাছাকাছি মানুষ, মূলত মহিলা ও শিশু দেশছাড়া। তাঁদের পরিবারের পুরুষ সদস্যেরা দেশে রয়ে গিয়েছেন, দেশের হয়ে লড়ছেন। ওলেনা ও জ়েলেনস্কি স্কুলের বন্ধু, পরবর্তী কালে এক জন অভিনেতা, অন্য জন চিত্রনাট্যকার ছিলেন। এখনও পাশাপাশি লড়ে চলেছেন দুই বন্ধু।

Olena Zelenska Ukraine
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy