মার্কিন যুদ্ধবিমান ভেঙে আফগানিস্তানে প্রাণ হারালেন ১১ জন। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন ৬ মার্কিন সেনা। তালিবানের দাবি, বিমানটি তারাই গুলি করে নামিয়েছে। হামলার দায় স্বীকার করে টুইটারে বিবৃতি দিয়েছেন তালিবান মুখপাত্র জাবিউল্লা মুজাহিদ।
পেন্টাগন জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মার্কিন সেনার সি-১৩০ বিমানটি ভেঙে পড়ে পাক-আফগান সীমান্তে জালালাবাদ এলাকায়। তবে এখনই এই দুর্ঘটনাকে তালিবানের কীর্তি বলে মানতে নারাজ পেন্টাগন।
পেন্টাগন বলেছে, ‘‘তদন্ত চলছে। হামলার সঙ্গে যে সন্ত্রাস যোগ রয়েছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’’
আফগানিস্তানে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর কুন্দুজের দখল নিয়ে চলতি সপ্তাহের গোড়া থেকেই সংঘাত চলছে সেনা ও তালিবান জঙ্গিদের। বৃহস্পতিবার তালিবানের হাত থেকে কুন্দুজ অনেকটাই ফের দখলে আনে আফগান বাহিনী। কিন্তু, শুক্রবার নতুন করে তালিবান হামলায় উত্তরের এই শহরটি থেকে পিছু হটে সরকারি বাহিনী। এই পরিস্থিতিতে আজ বিমান হানার দায় স্বীকার করে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশাসনের চিন্তা বাড়িয়েছে জঙ্গি সংগঠনটি।
আফগানিস্তানের ধনী এবং বড় শহরগুলির মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই কুন্দুজ। সংশ্লিষ্ট প্রদেশের রাজধানীও বটে। ২০০১-এ ন্যাটো বাহিনীর অভিযানে আফগানিস্তানে তালিবান ভিত নড়ে যাওয়ার পর আর কুন্দুজের দখল নিতে পারেনি জঙ্গিরা। তবে গত রবিবার গভীর রাতে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর শেষমেশ কুন্দুজে ঢুকে পড়ে জঙ্গিরা। তালিবানের নয়া নেতা মোল্লা আখতার মনসুরের নেতৃত্বে এটাই প্রথম বড় হামলা সংগঠনটির। রাজনৈতিক শিবির মনে করছে, গুরুত্বপূর্ণ এই শহর দখল করতে পারলে এক দিকে তা যেমন কৌশলগত দিক থেকে তালিবানের বড় জয়, তেমনি মোল্লা ওমরের মৃত্যুর কথা ঘোষণার পর থেকে সংগঠনের ভিতর যে নেতৃত্ব সঙ্কট চলছিল তা অনেকটাই কাটবে। তালিবানের মাথা হিসাবে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে মোল্লা আখতার মনসুরের। আফগান প্রেসিডেন্ট পদে সদ্য এক বছর পার করা আশরাফ ঘানির কাছে যা যথেষ্ট দুশ্চিন্তার কারণ।
এ দিকে আফগান পর্যবেক্ষক দলগুলির বক্তব্য, কুন্দুজে তালিবান ও সেনার লড়াইয়ের মাঝে আটকে পড়েছেন বহু মানুষ। শহর দখল করে জঙ্গিরা সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে। ধর্ষণ করছে মহিলাদের। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও জানিয়েছে, কুন্দুজে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে গিয়ে হত্যা চালাচ্ছে জঙ্গিরা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাইরে গুলির লড়াই চলছে সরকারি সেনা এবং জঙ্গিদের মধ্যে। ঘরে খাবার, জল নেই। কুন্দুজের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রেড ক্রসও। আজ ঘটনার কড়া সমালোচনা করেছে হোয়াইট হাউসও। তবে গণহত্যার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তালিবান নেতা মোল্লা আখতার মনসুর। তার দাবি, ‘‘আমরা চেষ্টা করছি যত কম মানুষ হত্যা করা যায়। সরকারই বরং যথেচ্ছ গুলি চালাচ্ছে।’’
২০১৪ সালের শেষে আফগানিস্তান থেকে ন্যাটো সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব এখন সরকারের হাতেই। কাবুলে রয়ে যাওয়া মাত্র ১০ হাজার মার্কিন সেনার কাজ মূলত জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে সাহায্য করা। শুক্রবার পূর্ব আফগানিস্তানে মৃত সেনারাও ন্যাটো সেনা বলেই জানা গিয়েছে। পূর্ব আফগানিস্তানে জঙ্গি বিরোধী অভিযান চালানোর সময় ভেঙে পড়ে তাঁদের বিমানটি। পরে তালিবান মুখপাত্র জাবিউল্লা মুজাহিদ টুইটারে বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘‘জালালাবাদে চার ইঞ্জিনের একটি মার্কিন যুদ্ধ বিমান গুলি করে নামিয়েছে আমাদের জঙ্গিরা। অনেক মার্কিন শত্রু নিকেশ হয়েছে।’’ ২০১১ সালে তালিবান হামলায় মার্কিন চপার ভেঙে প্রাণ হারিয়েছেন ৩৮ জন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy