Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
American Presidential Election

‘মগের মুলুকে’ দেখে আসা ভোটের অনেক কিছু তো মার্কিন মুলুকেও দেখছি

মেলাবেন তিনি মেলাবেন। এ শুধু কথার মিল। আসল মিল কি অত সোজা? শুধু মেলালে হবে, খরচা আছে না! দেশের এক নম্বরকে বাছতে গিয়ে আমেরিকা সেটা এখন হাড়ে হাড়ে বুঝছে। মিলছে, কিছু মিলছে, কিন্তু সব মিলছে না। সেই মগের মুলুক থেকে মার্কিন মুলুক, ভোট তো কম দেখলাম না এ জীবনে।

ছবি: এএফপি।

ছবি: এএফপি।

শুভঙ্কর মুখোপাধ্যায়
ন্যাশভিল, টেনেসি শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ১৩:২৭
Share: Save:

মেলাবেন তিনি মেলাবেন। এ শুধু কথার মিল। আসল মিল কি অত সোজা? শুধু মেলালে হবে, খরচা আছে না! দেশের এক নম্বরকে বাছতে গিয়ে আমেরিকা সেটা এখন হাড়ে হাড়ে বুঝছে। মিলছে, কিছু মিলছে, কিন্তু সব মিলছে না। সেই মগের মুলুক থেকে মার্কিন মুলুক, ভোট তো কম দেখলাম না এ জীবনে। তা দেখেশুনে পেত্যয় হল, দুই মুলুকের ভোটরঙ্গে মিল অমিলের শেষ নেই। খুলে আম বলি, এই মগের মুলুক বলতে বুঝে নিন আমাদের আপন দেশ, ‘বাড়ি তার বাংলা’।

তা ‘আমাগো বাংলা-দ্যাশে’ (‘পশ্চিমবঙ্গ’ নামটা আর কদ্দিন কে জানে!) নির্বাচন দেখলে তো মগের মুলুক বলেই মনে হয়। সেই কবেকার টিএন সেশন বা হালের ‘জনস্বার্থ মামলা’, কোনও কিছুই কাজে লাগে না, কাজে আসে গণ আদালত, তা সে সোজা আঙুলেই হোক বা বাঁকা আঙুলেই হোক। ভোটে সেথায় বহু-বলও লাগে, বাহুবলও লাগে। তো মনে মনে একটা মিথ ছিল, মগের মুলুক ছেড়ে যখন একেবারে ঘুসে গিয়েছি মার্কিন মুলুকে, তখন আর ‘নাহি ভয়, নাহি ভয়’। কিন্তু সেই মিথ মুছে এ বার মার্কিন মুলুকের ভোটে দেখলাম কী, ও বাবা, এ তো কোথায় যেন মিল। ভেবেছিলাম আমেরিকানরা হল ভদ্র-সভ্য জাতি, ভোট-জোট-ঘোঁট যাই হোক না কেন, তারা ‘এই গরু সর সর, না তো ফুল ছুড়ে মারব’— এর বেশি অভদ্র হতে পারবে না। কিন্তু না, সে গুড়ে সিন্ডিকেটের বালি। ভেজালে ভর্তি। মিলল না মোটে।

আর সত্যি কথা বলতে কী, এই মিল-অমিলের খেলায় এ বার আমেরিকায় সব, ‘ঘেঁটে ঘ’। শেষমেশ হিলারি জিতবে না ট্রাম্প জিতবে, কেউ কিচ্ছুটি বুঝতে পারছে না। কেউ জানেও না। শুধু, ‘ব্রহ্মা জানে গোপন কম্মটি’। কী কম্ম? মেলানোর কাজ। হিলারি আর ট্রাম্প একে অপরকে নানা অঙ্গভঙ্গী করে যে ভাষায় গালাগাল দিলেন, রাজনীতি ছেড়ে পার্সোনাল লেভেলে যে ভাবে খিস্তি খেউড় করলেন, সে একেবারে, ‘মেরে কলকাতা মহান’ কেস। তাই অনেক আমেরিকাবাসী বাঙালি এখন মুখ টিপে হাসছে আর বলছে, ওমা একি আমেরিকা নাকি আমাদের ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড গো! এখানে বুড়ো বাঙালিরা বলেন, “আমেরিকা ভোটের শিক্ষণীয় ব্যাপারটাই হল রাজনৈতিক সৌজন্য।” এখানে হীনমন্য বাঙালিরা ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’ দেখলে কড়া-ই (বড়াই-য়ের বিপরীত) করে বলে, ‘এ কি আমাদের দেশ না কি যে রাজনীতি নিয়ে হবে’। এ বার ‘আত্মঘাতী বাঙালি’র মুখ পুড়ল, এত দিনের পেটের অ্যাসিড এ বার উপচে পড়ল মুখে। হিলারি-ট্রাম্পে লেগে গেল কলকাতার কলতলার ঝগড়া। মুই বেড়াল না তুই বেড়াল। এ বলে আমায় দেখ তো সে বলে আমায়। হাম ভি মিলিটারি তুম ভি মিলিটারি। এক দিকে হিলারি অন্য দিকে ট্রাম্প, ‘আর যে জন আছে মাঝখানে’ বেচারা বিল ক্লিন্টন। এই তিন জনকে নিয়ে বিস্তর গা জ্বালা করা কার্টুন বেরোল নামজাদা সব কাগজপত্রে। বেরসিক বাঙালিও এ হেন তামাশা দেখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভোটের নাম দিল ‘আমি সে ও সখা’।

মিলের শেষ নেই। কলকাতার ভোটের বাজার কেচ্ছা-কেলেঙ্কারির জন্য বিখ্যাত। আর তা কিনা একেবার মিলেমিশে আমদানি হল আমেরিকাতে। আমেরিকার ইতিহাসে এই প্রথম প্রেসিডেন্ট ইলেকশনে কোনও মহিলা প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন। তাই কি আর সব কিছু ছাপিয়ে নারীঘটিত ইস্যু বাজার চরম গরম করে দিল। এ বলে, ‘তুই মেয়েদের পিছন পিছন ঘুরিস’, তা আর একজন বলে, ‘আরে তোর বর তো প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায়ও তাই করেছে। তা হলে মেয়েদের সঙ্গে ঘুরে আমি প্রেসিডেন্ট হলে দোষ কী’। এ কি মগের মুলুক, নাকি মার্কিন মুলুক! বোঝো কাণ্ড!

অমিলও আছে। মগের মুলুকে আর্লি ভোটের কোনও সিন নেই, মার্কিন মুলুকে ভিড়ভাট্টা এড়াতে আগাম ভোটের এলাহি ব্যবস্থা আছে। আবার এই অমিলে মিলও আছে।

বৃহস্পতিবারে ছিল আর্লি ভোটিংয়ের শেষ দিন। দলে দলে ভোট দিল লোকে। বুথে বুথে কলকাতার কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের মতো লম্বা লাইন, ‘আমাদের ছোট নদী’র মতো এঁকেবেঁকে চলেছে। অথচ অমিল, বুথ-বাহিনী নেই, বাইক-বাহিনী নেই, কলকাতার হালের আমদানি বার্মুডা-বাহিনী নেই। লোকে নিজের বাহনে চেপে আসছে, হাতে বা মুখে কালি না লাগিয়ে আপনমনে বোতাম টিপে ‘কেমন দিলাম’ ভাব করে বেরিয়ে যাচ্ছে।

আবার দেখুন, মগের আর মার্কিন মুলুকে মিলও আছে। ট্রাম্প যেই বুঝেছেন, ‘হারলেও হারতে পারি’, তেমনি তিনি বলে বসলেন, ‘আমি হারলে বুঝব রিগিং হয়েছে, আর জিতলে ধরে নেব অবাধ আর শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।’ এ তো কলকাতার ভোটবাবুদের কমন বুলি। অথচ মগের মুলুকের মতো মার্কিন মুলুকে রিগিং-বুথজ্যাম-ছাপ্পা কিছুই ছিল না। নাকি ছিল, জানতি পারিনি? এটা মিল না বেমিল কে জানে! হয়ত ‘শুধু ব্রহ্মা জানে।’

কিন্তু ব্রহ্মাও কি জানে কে জিতবে? নাকি মিলে-বেমিলে হিসেব গরমিল! কী রকম? ইধার কা মাল উধার কেস। আমেরিকাতে বাঙালি (এনারা-ই এনআরআই) সহ মোটামুটি সব অভিবাসীই যাকে বলে ন্যাচারাল ডেমোক্র্যাট ভোটার। কিন্তু যে বাঙালিরা ‘বাই ফেথ অ্যান্ড বিলিফ মোদী-ফায়েড’, তারা ট্রাম্পের বোতাম টিপে দেবে বলে ব্রহ্মার কাছে খবর আছে। আবার বাবু-আমেরিকানরা বাই ডিফল্ট রিপাবলিকান ভোটার। কিন্তু এ বার তাঁদের মধ্যে যাঁরা গাঁটে গাঁটে রক্ষণশীল, তারা হিলারির হাতে হাত রেখেছে বলে ব্রহ্মা সংবাদ পেয়েছে। কি মশাই, ঘাপ পালটি যে! ব্রহ্মা এই বেমক্কা সওয়াল করে জবাব পেয়েছে, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কৌশলগত কারণে ইস্যুভিত্তিক সমর্থন।’ কি, শুনেছেন না চেনা কথাটা? মিলছে তো কলকাতার সঙ্গে?

সর্বশেষ শিরোনাম: হিলারি উবাচ, ‘সুইং হলে জিতেগা।’ ট্রাম্পের বচন, ‘রিভার্স সুইং হোগা।’ কার কথা মিলবে বা অ-মিলবে? ব্রহ্মা জানে। আর বাঙালি জানে, ‘মগের মুলুক সে মার্কিন মুলুক, কুছ মিলতা, কুছ নেহি মিলতা!’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE