Advertisement
E-Paper

মা কোথায়? উত্তর জানে না ট্রাম্পের আমেরিকা

সম্প্রচারিত ভিডিয়োটি দেখিয়ে দিচ্ছে, শিশুদের দুর্দশার বিষয়টি শরণার্থী-বিতর্কের কেন্দ্রেই রয়েছে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৮ ০৩:১৫
অ-সহায়: নিউ ইয়র্কের শরণার্থী শিবিরে এক শিশু। ছবি: টুইটার।

অ-সহায়: নিউ ইয়র্কের শরণার্থী শিবিরে এক শিশু। ছবি: টুইটার।

কেঁদেই চলেছে বাচ্চাটা। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে একটা কথাই শুধু বলে যাচ্ছে, ‘‘মা কোথায়?’’

নিউ ইয়র্কের একটি ‘ডিটেনশন সেন্টার’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জ়িরো টলারেন্স নীতির ফলে শরণার্থী মা-বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন শিশুদের রাখা হচ্ছে এখানে। সেই সেন্টারেরই এক প্রাক্তন কর্মী গোপনে বাচ্চাদের ভিডিয়ো তুলেছিলেন। এক মার্কিন টিভি চ্যানেলে দেখানো হয়েছে সেটি। শরণার্থী শিশুদের আর মা-বাবার কাছ থেকে আলাদা করা হবে না, দিন কয়েক আগে ট্রাম্প এই নির্দেশিকায় সই করেছেন। তবু সম্প্রচারিত ভিডিয়োটি দেখিয়ে দিচ্ছে, শিশুদের দুর্দশার বিষয়টি শরণার্থী-বিতর্কের কেন্দ্রেই রয়েছে।

‘ইস্ট হারলেম কায়ুগা সেন্টার’ নামে নিউ ইয়র্কের এক শরণার্থী কেন্দ্রে কাজ করতেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মী। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘ভ্রান্ত’ নীতির প্রতিবাদে গত সপ্তাহে ইস্তফা দেন তিনি। শরণার্থী কেন্দ্রে কাজ করার সময়ে নিজের মোবাইল ফোনে টুকরো টুকরো ভিডিয়ো তুলেছিলেন। ইস্তফা দেওয়ার পরে সেগুলো তুলে দেন এক সাংবাদিক বন্ধুর হাতে। টিভি চ্যানেলটি এই কর্মীর একটি অডিয়ো সাক্ষাৎকারও সম্প্রচার করেছে।

কী রয়েছে ভিডিয়োতে? দেখা যাচ্ছে ডিটেনশন সেন্টারের ভেতরটা। অনেকটা স্কুলের ক্লাসঘরের মতো। শরণার্থী শিবিরের ওই কর্মী জানাচ্ছেন, তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মা-বাবার বিষয়ে জানার চেষ্টা করতে। কিন্তু সেটা একটা দুঃসাধ্য কাজ। তার প্রথম কারণ অবশ্যই ভাষা। ইংরেজি তো দূরের কথা, অধিকাংশ বাচ্চা স্প্যানিশও বলতে পারে না। কাঁদতে কাঁদতে যে-টুকু বলে, তার থেকে একটা কথাই শুধু বোঝা যায়, তারা তাদের মা-বাবাকে খুঁজছে।

যেমন ভিডিয়োর বাচ্চাটি। তাকে সেন্টারের কর্মী জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘তোমার কী কোনও অসুবিধে হচ্ছে? কষ্ট হচ্ছে কোথাও?’’ মেয়েটির মুখে শুধু একটাই শব্দ— ‘মাদ্র’ (মা)! আর চোখ দিয়ে অবিরল ধারা। শেষমেশ ওই কর্মী বাচ্চাটিকে জড়িয়ে তাকে সান্ত্বনা দিতে শুরু করেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের কড়া নির্দেশ দেওয়া থাকে, যে-টুকু প্রয়োজন, বাচ্চাদের সঙ্গে তার থেকে একটুও বেশি কথা বলা যাবে না। কোনও রকম ঘনিষ্ঠ আচরণের তো প্রশ্নই ওঠে না। বাচ্চাটিকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে আমি সেই নিয়ম ভেঙেছি। কিন্তু ওর অসহায় অবস্থা দেখে নিজেকে থামাতে পারিনি।’’

এই কর্মীর কাছেই জানা গিয়েছে, ডিটেনশন সেন্টারে যে সব বাচ্চা রয়েছে, তারা নেহাতই শিশু। টিনএজার বা কিশোর বয়স্ক বাচ্চার সংখ্যা অনেক কম। সেই কর্মীর প্রশ্ন, ‘‘এত ছোট বাচ্চারা তো নিজেরা সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে ঢুকে পড়েনি। ফলে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে সীমান্তেই এদের জোর করে মা-বাবার কাছ থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে।’’

এখানেই শেষ নয়। গোপনে রেকর্ড করা এক অডিয়ো ক্লিপে শোনা যাচ্ছে, কেউ এক জন বাচ্চাদের স্প্যানিশে বলছেন, ‘‘খবরদার কোনও সাংবাদিকের সামনে মুখ খুলবে না। তা হলে কিন্তু আর কখনওই মা-বাবার কাছে ফিরে যেতে পারবে না।’’

শিবিরের কর্মীর কথায়, ‘‘এটাই তা হলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমেরিকা। উন্নততর আমেরিকা!’’

Donald Trump Child
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy