গাজ়ায় শান্তি ফেরাতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ২০ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই তাতে রাজি হয়েছে প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। প্রস্তাবে ইজ়রায়েলও সম্মত। এখন কেবল ২০ দফা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অপেক্ষা। শুক্রবার ট্রাম্পের প্রস্তাব মেনে হামাস যে বিবৃতি জারি করেছে, তাতে কয়েকটি শর্তের কথাও বলা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই ট্রাম্পের প্রস্তাবকে তারা স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু এখনও কিছু কিছু ক্ষেত্রে রয়ে গিয়েছে ধোঁয়াশা। হামাস জানিয়েছে, বিস্তারিত কথাবার্তার জন্য তারা আলোচনার টেবিলে বসতে প্রস্তুত।
কোথায় কোথায় ট্রাম্পের সঙ্গে সহমত
- ট্রাম্প বলেছিলেন, ২০ দফা প্রস্তাবে ইজ়রায়েল প্রকাশ্য সমর্থন জানালে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত ইজ়রায়েলি পণবন্দি ছেড়ে দেবে হামাস। এর পর ইজ়রায়েলে যে ২৫০ জন প্যালেস্টাইনপন্থী যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন, তাঁদের মুক্তি দেওয়া হবে। এ ছাড়া, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইজ়রায়েল যত গাজ়াবাসীকে গ্রেফতার করেছিল, তাঁদেরও ছেড়ে দেওয়া হবে। হামাস এই প্রস্তাব মেনে নিয়ে জানিয়েছে, ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজ়া থেকে সমস্ত পণবন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে (জীবিত এবং মৃত), তবে কিছু প্রয়োজনীয় শর্তসাপেক্ষে। এই ‘প্রয়োজনীয় শর্ত’ কী, তা ব্যাখ্যা করা হয়নি।
কে
আরও পড়ুন:
- ট্রাম্পের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইজ়রায়েল দফায় দফায় সেনা প্রত্যাহার করবে গাজ়া থেকে। এই সময় বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি চলবে। ইজ়রায়েল এই সময় গাজ়ায় কোনও বোমাবর্ষণ বা হামলা চালাবে না। হামাস এই পরিকল্পনার সঙ্গে সহমত। গাজ়া থেকে ইজ়রায়েলের বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার চায় তারা। প্রত্যাহারের বিভিন্ন দফা নিয়ে বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি।
- ট্রাম্প বলেছিলেন, প্যালেস্টাইনিদের গাজ়া ছেড়ে যেতে হবে না। অবিলম্বে সেখানে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে। বিভিন্ন ধ্বংসপ্রাপ্ত কাঠামো, বেকারি ও হাসপাতালের পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ধ্বংসস্তূপ সরানো এবং রাস্তা নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। রাষ্ট্রপুঞ্জ, রেড ক্রেসেন্ট এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এই গঠনমূলক কাজগুলি করবে। হামাস এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। গাজ়া থেকে প্যালেস্টাইনিদের সরিয়ে দেওয়ার চূড়ান্ত বিরোধী তারা।
কোথায় কোথায় মতানৈক্য
- ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, আপাতত গাজ়ায় একটি অস্থায়ী অরাজনৈতিক সরকার তৈরি হবে। এই সরকারের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন প্যালেস্টাইনি এবং বিশ্বের নানা প্রান্তের বিশেষজ্ঞরা। যদিও নির্দিষ্ট করে কোনও প্যালেস্টাইনি গোষ্ঠী বা ব্যক্তিবিশেষের নাম করা হয়নি। বলা হয়েছে, এই প্যানেলের অন্তর্বর্তিকালীন তদারকি করবে একটি নতুন আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী। ট্রাম্পই তার মাথায় থাকবেন। ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও ওই গোষ্ঠীতে থাকবেন। হামাস কিন্তু এই প্রস্তাব পুরোপুরি মানছে না। তারা জানিয়েছে, প্যালেস্টাইনি জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে ইসলামি এবং আরব দেশগুলি দ্বারা সমর্থিত কোনও স্বাধীন প্যালেস্টাইনপন্থী সংস্থার হাতে তারা গাজ়ার প্রশাসনিক দায়িত্ব তুলে দেবে।
- ট্রাম্প বলেছিলেন, গাজ়ার ভবিষ্যৎ পরিচালন পদ্ধতিতে হামাসের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনও যোগ থাকবে না। গাজ়ার ‘অসামরিকীকরণ’ শুরু হবে। হামাসের এতেও আপত্তি আছে। তারা জানিয়েছে, নিজেদের তারা একটি সম্পূর্ণ প্যালেস্টাইনপন্থী জাতীয় কাঠামো হিসাবে দেখে। ‘অসামরিকীকরণ’ নিয়ে আপাতত তারা কোনও মন্তব্য করেনি। গাজ়ার প্রশাসনে নিজেদের যোগের কথা তারা উল্লেখ করেছে।