E-Paper

ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে অস্বস্তিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস

কূটনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, ডেমোক্র্যাট-ঘনিষ্ঠ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস যথেষ্ট চাপে পড়লেন ট্রাম্প ফিরে আসায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৬:১৫
(বাঁ দিকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মুহাম্মদ ইউনূস (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মুহাম্মদ ইউনূস (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন, রাজনৈতিক সঙ্কটের মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশ পরিস্থিতির উপরে কী প্রভাব ফেলবে তা কূটনৈতিক চর্চার কেন্দ্রে চলে এল। প্রতিবেশী হিসাবে দীর্ঘতম সীমান্ত ভাগ করে নেওয়া ভারতের জন্যও বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে আগামী দিনে। কূটনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, ডেমোক্র্যাট-ঘনিষ্ঠ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস যথেষ্ট চাপে পড়লেন ট্রাম্প ফিরে আসায়। ইউনূসের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক যে মধুর নয়, তার নথি আজ আরও এক বার প্রকাশ্যে এসেছে। ভারতীয় সূত্রেও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, ২০১৬-য় ট্রাম্পের জয়ের পরে উভয় পক্ষ কী ভাবে বিষোদ্গার করেছিল।

যদিও আজ ফলাফল চূড়ান্ত হওয়ার আগেই ইউনূস ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সবিস্তারে লিখেছেন, ‘আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় আমি বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া এটাই বোঝায় যে আপনার নেতৃত্ব ও লক্ষ্য আমেরিকার জনগণের মধ্যেও প্রতিফলিত হয়েছে। আমি নিশ্চিত, আপনার নেতৃত্বে আমেরিকা উন্নতি করবে ও বিশ্ব জুড়ে অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে।’ তাঁর কথায়, ‘বাংলাদেশ ও আমেরিকার পারস্পরিক স্বার্থের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। আপনার আগের মেয়াদে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। আমি দু’দেশের অংশীদারি আরও শক্তিশালী করতে ও টেঁকসই উন্নয়নের জন্য এক সঙ্গে কাজ করতে উন্মুখ।’ পাশাপাশি আওয়ামী লীগের পক্ষে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে বেশ কয়েক বার বৈঠকে বসেছিলেন তিনি। সেই স্মৃতিচারণা করেছেন হাসিনা। তাঁর আশা, প্রেসিডেন্টের আসনে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় বার বসার পরে আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।

সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনের জেরে বাংলাদেশে ক্ষমতা রদবদলের সঙ্গে আমেরিকার বাইডেন প্রশাসনের সংযোগ নিয়ে যথেষ্ট গবেষণা চলছে বিভিন্ন মহলে। সেপ্টেম্বরে ইউনূস আমেরিকা সফরে গিয়ে বারাক ওবামা, বিল ক্লিন্টন-সহ ডেমোক্র্যাট নেতাদের সঙ্গে দেখা করলেও ট্রাম্প বা কোনও রিপাবলিকানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। কারণ, সম্পর্ক মধুর নয়। ২০১৬ সালে ট্রাম্পের জয়ের পর, বাংলাদেশ থেকে একটি প্রতিনিধি দল তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে ওয়াশিংটনে যায়। প্রথম সাক্ষাতেই ট্রাম্প বলেছিলেন, “ঢাকার মাইক্রোফাইন্যান্সের সেই ব্যক্তি কোথায়? শুনেছি, তিনি আমাকে হারাতে চাঁদা দিয়েছিলেন।” ইঙ্গিত স্পষ্ট, ইউনূস ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে সমর্থন করেছিলেন। অন্য দিকে নয়াদিল্লি মনে করিয়ে দিচ্ছে, ২০১৬ সালে ট্রাম্পের বিজয়ের পর ইউনূস প্যারিসে সমাজ-বাণিজ্য সংক্রান্ত একটি সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় ছাত্র এবং গবেষকদের বলেছিলেন, ‘এই জয় সূর্য গ্রহণের মতো। কালো দিন আসছে। তা যেন আমাদের গ্রাস না করে, আত্মশক্তিকে দুর্বল না করে দেয়।’

ট্রাম্প এবং বাইডেন ঘনিষ্ঠ বাংলাদেশের এই অন্তর্বর্তী সরকারের সংঘাত এই দীপাবলিতে অর্থাৎ আমেরিকার নির্বাচনের প্রাক্‌ মুহূর্তে স্পষ্ট হয়, ট্রাম্পেরই একটি বিস্ফোরক মন্তব্যে। ভারতের সুরে সর মিলিয়ে ট্রাম্প সমাজমাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশে যে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যে ভাবে হিন্দু, খ্রিস্টান এবং অন্য সংখ্যালঘুরা হিংসার শিকার হচ্ছেন, তাঁদের উপর হামলা হচ্ছে, লুট চলছে, তার তীব্র নিন্দা করছি আমি। আমি থাকলে এমনটা হতে দিতাম না। কমলা (হ্যারিস) এবং জো (বাইডেন) আমেরিকা এবং পৃথিবীর অন্যত্র বসবাসকারী হিন্দুদের অবজ্ঞা করেছেন। আমরা আমেরিকায় বসবাসকারী হিন্দুদের কট্টরবাদী, ধর্মবিরোধী বামপন্থার হাত থেকে রক্ষা করব’। কূটনৈতিক শিবিরে একাংশের বক্তব্য, মূলত আমেরিকার হিন্দু মন জয়ের জন্যই এ কথা বলেছিলেন সে দিন ট্রাম্প। কিন্তু বাকি অংশের বক্তব্য, ট্রাম্পের সঙ্গে এই সরকারের সম্পর্কের নিরিখে এই মন্তব্যকে দেখলে বুঝতে সুবিধা হবে, এর পর কোন পথে চলবে আমেরিকার সঙ্গে ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সম্পর্ক।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

US Presidential Election 2024 Donald Trump Muhammad Yunus USA Bangladesh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy