Advertisement
E-Paper

নেশায় আচ্ছন্ন করে আইএস ডেরায় গণধর্ষণ

শুধু ধর্মীয় মতাদর্শে কি চিঁড়ে ভেজে? দরকার অন্য আকর্ষণও। দরকার অর্থ। দরকার বিনোদন। কিন্তু যেখানে বিনোদনের চেনা পথগুলি শুধু বন্ধই নয়, নিষিদ্ধও বটে সে‌খানে কি হবে? হাতে পড়ে থাকে আদিমতম বাসনার হাতছানি। কিন্তু সেই বাসনা মেটাবে কে? কেন পরাজিত জনগোষ্ঠীর নারীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৮:১৯

শুধু ধর্মীয় মতাদর্শে কি চিঁড়ে ভেজে? দরকার অন্য আকর্ষণও। দরকার অর্থ। দরকার বিনোদন। কিন্তু যেখানে বিনোদনের চেনা পথগুলি শুধু বন্ধই নয়, নিষিদ্ধও বটে সে‌খানে কি হবে? হাতে পড়ে থাকে আদিমতম বাসনার হাতছানি। কিন্তু সেই বাসনা মেটাবে কে? কেন পরাজিত জনগোষ্ঠীর নারীরা। আর সেই জনগোষ্ঠী যদি অন্য ধর্মে বি‌শ্বাসী হয়, তবে তো কথাই নেই! ধর্ম দিয়েই ঢেকে দেওয়া যাবে এই ‘বিনোদন’ নামের অত্যাচারকে। বিরল নয়, যুগে যুগে পরাজিত জনগোষ্ঠীকে এই দাবি মেটাতে হয়েছে। কিন্তু অধুনা পৃথিবীতে একে অন্য উচ্চতায়, অন্য কদর্যতায় নিয়ে গিয়েছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর জঙ্গিরা। যৌন ক্রীতদাসীদের সেই যন্ত্রণার কথা যত সামনে আসছে তত শিউরে উঠছে এ বিশ্ব।

ইরাকের নিনেভে প্রদেশে বাস ইয়াজিদিদের। ইসলাম নয়, জরাথ্রুষ্টের মতবাদ থেকে তাঁদের ধর্মবিশ্বাসের উৎপত্তি। প্রান্তে থাকার কারণে বঞ্চিতও বটে। তবে তা নিয়ে বিশেষ ক্ষোভের কথা খুব একটা সামনে আসেনি। কেন্দ্র আর কবে প্রান্তের কথা ভাবে! ইয়াজিদিরা নজরে আসে এই আইএস-এর দৌলতে। ২০১৪-এ মৌলবাদী ইসলামের ধ্বজা তুলে যে আইএস ঝড় সিরিয়া-ইরাকে টালমাটাল করে দেয় তাতে খড়কুটোর মতো উড়ে যায় ইয়াজিদিরা। প্রতিরোধ দূর অস্ত্, প্রাণ নিয়ে কোনওক্রমে কাছেই শিনজার পাহাড়ে আশ্রয় নেন অনেকে। ক্ষুধা-তৃষ্ণায় ক্লান্ত, শিনজারে আটকে থাকা এই ইয়াজিদিদের দুর্দশা আইএস ত্রাসের দিকে বিশ্বের নজর টেনে ছিল। আটকে থাকা ইয়াজিদিদের উদ্বারে অংশ নেয় মার্কিন বায়ুসেনাও।

আরও পড়ুন- যৌনদাসীকে ধর্ষণ কী ভাবে, ফতোয়া দিয়ে জানাল আইএস

যাঁরা পালাতে পারলেন, তাঁরা তো বাঁচলেন। কিন্তু যাঁরা পালাতে পারেননি, তাঁদের দশা। ওই নরককুণ্ড থেকে যাঁরা ফিরে এসেছেন তাঁদের স্মৃতি থেকে সেই বিভৎস দিনযাপনের কথা উঠে এসেছে। সেই টুকরো টুকরো কথাগুলি জুড়লে এক বৃহত্তর ছবি ফুটে ওঠে। ধরা পড়লে প্রথমেই পুরুষ আর নারীদের আলাদা করে দিতে আইএস। কালক্ষেপ না করে পুরুষদের হত্যা করত আইএস। নারীদের বয়স অনুযায়ী নানা দলে ভাগ করে দেওয়া হত। বয়স্ক ও মায়েদের পৃথক দল। আর একটি দলে কমবয়সী মেয়েরা। তার পরে কী ঘটত? শোনা যাক কিশোরী লেইলা-র বয়ানে।

লেইলা (নাম পরিবর্তিত) এখন বাস ইরাকের উত্তরে ইরবিলের শরণার্থী শিবিরে। আইএস-এর কবল থেকে অর্থের বিনিময়ে তাঁকে ছাড়িয়ে আনে পরিবার। লেইলা জানায়, কমবয়সী মেয়েদের প্রথমে কেনাবেচা শুরু হত। সেখানে হাজির হত আইএস জঙ্গিরা। পণ্যের মতো বিক্রি হত নারী। লেইলা-কে প্রথম পছন্দ করে অন্য এক জঙ্গি। কিন্তু তার আকার দেখে ভীত হয়ে পড়ে লেইলা। ভয়ে অন্য এক জঙ্গিকে তাকে নিয়ে যেতে বলে লেইলা। রাজি হয় সেই জঙ্গি। কিন্তু এর পরে লেইলা উপরে যা ঘটে তা পাশবিক বললেও কম বলা হয়।

তবে প্রথম দিন থেকে ধর্ষণ শুরু হয়নি। তার বদলে ঋতুমতী লেইলাকে নগ্ন করে এসি-র সামনে সারা রাত বসিয়ে রাখা হয়। ঋতু শেষ হলে শুরু হয় বারবার ধর্ষণ। ধর্ষণের আগে তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেওয়া হত। যাতে বাধা দিতে না পারে। শুধু নিজে নয়, অন্য জঙ্গিদেরও ডেকে আনে তার মালিক। গণধর্ষণেরও শিকার হতে হয়েছে তাকে। পরে অন্য জঙ্গির কাছে লেইলাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। শেষপর্যন্ত অর্থের বিনিময়ে লেইলাকে ছাড়িয়ে আনে তার পরিবার।

আইএস ডেরায় অন্য মেয়েদেরও অত্যাচারিত হতে দেখেছে লেইলা। দেখেছে কী ভাবে এক শিয়া মহিলাকে জীবন্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। দেখেছে জঙ্গিদের হাতে অত্যাচারীত হয়েছে সুন্নি মহিলারাও। আবার অনেক ক্ষেত্রে আবার সুন্নি মহিলারাই তাদের উপরে অত্যাচার চালিয়েছে।

আইএস-এর হাতে ধরা পড়া ইয়াজিদি মেয়েদের অনেকেরই অবস্থা লেইলার মতো। পরিবার, প্রতিবেশীদের সহায়তায় কেউ কেউ আইএস-এর ডেরা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তবে অনেকেরই লেইলার মতো ভাগ্য হয় না। এখন অনেকেই আইএস শিবিরে বন্দি আছেন।

সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে আইএস-এর ধর্মতত্ত্ববিদেরা এক ফতোয়া। যেখানে সবিস্তারে বলা হয়েছে কেন মহিলাদের যৌনদাসী করে রাখা উচিত। কাকে, কখন, কী ভাবে শয্যাসঙ্গী করা ‘বৈধ’ তা নিয়েও রয়েছে বিস্তারিত আলোচনা। ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি প্রথম এই ফতোয়া প্রকাশ করে ইসলামিক স্টেটের ‘কমিটি অব রিসার্চ অ্যান্ড ফতোয়াজ’। হামলা চালানোর সময় এই পাণ্ডুলিপি হাতে আসে মার্কিন বাহিনীর।

জঙ্গি সংগঠন হিসেবে আইএস অনেক ক্ষেত্রেই পূর্ববর্তী জঙ্গি সংগঠনগুলিকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। অর্থ, অস্ত্র, এলাকার দখলে আইএস-র মতো কোনও সংগঠন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। কিন্তু মহিলাদের উপরে অত্যাচারকে এ ভাবে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় তা দেখে শিউরে উঠছে বিশ্ব। সদ্য রামাদিকে আইএস-এর দখল থেকে মুক্ত করেছে ইরাকি সেনা। সিরিয়া ও ইরাকের বাকি অংশে আইএস ডেরাতে তীব্র আক্রমণ শানাচ্ছে আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন। ধীরে ধীরে দুর্বল হচ্ছে আইএস। কিন্তু লেইলার মতো মেয়েরা যে বিপুল ক্ষতের বোঝা আজীবন বহন করবে তার থেকে মুক্তি মিলবে কী করে? বা আদৌ মিলবে কি?

WOMEN ARE IN CAMPS IS
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy