Advertisement
E-Paper

স্লোগান শুনেই সকলে মিলে লাফিয়ে পড়ল ওদের উপর

দত্তাত্রেয় হোসাবালে এই ঘোষণা করার পরপরই আমার বন্ধুরা উঠে স্লোগান দেয়। ‘আরএসএস টার্ন অ্যারাউন্ড, উই ডোন্ট ওয়ান্ট ইউ ইন আওয়ার সিটি’! বার দুয়েক স্লোগান দেওয়ামাত্র প্রেক্ষাগৃহের পরিবেশটা নিমেষে বদলে গেল।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙালি ছাত্রী

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:২৪
বিশ্ব হিন্দু কংগ্রেসের অনুষ্ঠান।

বিশ্ব হিন্দু কংগ্রেসের অনুষ্ঠান।

হিন্দু ফ্যাসিবাদের প্রতিবাদ করতে গিয়েছিল ওরা। স্বচক্ষে দেখে এল, কতখানি উগ্র হতে পারে তার রূপ। শুক্রবার সন্ধেবেলা শিকাগো শহরের অদূরে বিশ্ব হিন্দু কংগ্রেসের অনুষ্ঠানে যে ভাবে প্রতিবাদীদের মারধর করা হল, নিজের চোখে না দেখলে আমার পক্ষেও তা কল্পনা করা কঠিন ছিল।

ভারতের মেয়ে আমি। অল্প কিছু দিন হল শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছি। এ শহরে ভারতীয়দের সংখ্যা কম নয়। তার উপরে স্বামী বিবেকানন্দের বক্তৃতার ১২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আরএসএস-এর আয়োজনে বিশ্ব হিন্দু কংগ্রেস নিয়ে বেশ খানিকটা সাড়াও পড়েছিল অনাবাসীদের মধ্যে। আবার ফ্যাসিবাদ বিরোধী, ট্রাম্প বিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠী, দলিত সংগঠন, মৌলবাদ বিরোধী নানা সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ কর্মসূচির প্রস্তুতিও চলছিল।

এ দেশে রাজনৈতিক প্রতিবাদের রেওয়াজটাই অন্য রকম। প্রতিবাদের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না এখানে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তো কত রকম প্রতিবাদ হয়! তা নিয়ে মারামারি হতে তো দেখি না! হিন্দু কংগ্রেসের অনুষ্ঠানটা হচ্ছিল শহর থেকে ৪০ মিনিট দূরত্বে একটা হোটেলে। প্রায় হাজার তিনেক হিন্দু যোগ দিয়েছিলেন। আরএসএস বারবারই বলছিল, এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। এটা শুধুই হিন্দু ধর্ম সংক্রান্ত সম্মেলন।

শুক্রবার সন্ধেবেলায় আমার পরিচিত পাঁচটি মেয়ে এবং একটি ছেলে প্রতিবাদ জানাবে বলে সম্মেলনে হাজির হয়। সকলেরই বয়স কুড়ির ঘরে। এদের মধ্যে চার জন ভারতীয়। তবে এরা সকলেই এখন মার্কিন নাগরিক। কেউ ছাত্র, কেউ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কাজ করে। ‘শিকাগো সাউথ এশিয়ানস ফর জাস্টিস’-এর তরফে এর আগেও এরা নানা প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছে।

শুক্রবার সন্ধেয় সম্মেলনে পৌঁছে আমি নিজে প্রেস-এর জন্য নির্ধারিত জায়গায় বসেছিলাম। ওরা দু’দলে ভাগ হয়ে দর্শকাসনের মাঝামাঝি বসল। আয়োজকরা জানালেন, মোহন ভাগবত সকালে বক্তৃতা দিয়েছেন। এখন তিনি আরও সব হিন্দু নেতার সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বে থাকবেন। দত্তাত্রেয় হোসাবালে এই ঘোষণা করার পরপরই আমার বন্ধুরা উঠে স্লোগান দেয়। ‘আরএসএস টার্ন অ্যারাউন্ড, উই ডোন্ট ওয়ান্ট ইউ ইন আওয়ার সিটি’! বার দুয়েক স্লোগান দেওয়ামাত্র প্রেক্ষাগৃহের পরিবেশটা নিমেষে বদলে গেল। এতক্ষণ যে সব মধ্যবয়স্ক লোকজন হাসিমুখে বসে ছিলেন, তাঁরাই কী রকম উগ্র হয়ে উঠলেন। হল কাঁপিয়ে আওয়াজ উঠল— ভারতমাতা কি জয়! মঞ্চের আশপাশ থেকে আয়োজকরা, দর্শকরা ছুটে এলেন। সবাই মিলে উন্মত্তের মতো ওই ছ’টি ছেলেমেয়ের উপরে লাফিয়ে পড়লেন। ছিনিয়ে নেওয়া হল ব্যানার। ওদের লাথি আর ঘুসি মারতে মারতে বার করে দেওয়া হল।

তত ক্ষণে ছুটে এসেছে পুলিশ। ও দেশের পুলিশ প্রতিবাদ দেখেছে। প্রতিবাদের উত্তরে এমন আক্রমণ নেমে আসা দেখতে অভ্যস্ত নয়। সত্যি বলতে কী, প্রতিবাদীরা নিজেরাও এটা ভাবতে পারেনি। ওরা জানে, স্লোগান দিলে, ব্যানার তুললে নিরাপত্তারক্ষীরা চলে যেতে বলবে। ওরাও শান্তিপূর্ণ ভাবে চলে যাবে! আগ্রাসী জনতা ঘিরে ধরে গায়ে হাত দেবে, কল্পনাই করেনি ওরা। পরে পুলিশ আমাদের বলল, জনতার হাত থেকে ওদের বাঁচাতেই তাড়াতাড়ি গ্রেফতার করে নেওয়া হয়েছে। পুলিশের সামনেই ওদের মুখে থুতু দিয়েছে এক হিন্দুত্ববাদী। তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

শিকাগো থেকে সেনেটে নির্বাচিত হয়েছেন রাম বিলাবলম। অন্ডারম্যান-এর দায়িত্বে আছেন অমেয় পওয়ার। ওঁরা কেউ সম্মেলনে যাননি। এই আক্রমণের প্রতিবাদ করেছেন ওঁরা। আমরা চাইছি, সম্মেলনে যোগদানকারী মার্কিন প্রতিনিধি রাজা কৃষ্ণমূর্তিও এর প্রতিবাদ করুন। প্রতিবাদীরা ব্যানারে লিখে নিয়ে গিয়েছিল, ‘স্টপ হিন্দু ফ্যাসিজম!’ সে ব্যানার খোলা যায়নি। তার আগেই ফ্যাসিবাদ ঝাঁপিয়ে পড়ে ওদের উপরে।

(নিরাপত্তার স্বার্থে লেখিকার নাম গোপন রাখা হল।)

Mohan Bhagwat RSS Chicago Biswa HIndu Congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy