Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মৃত্যু অথবা মৃত্যু, পথ হাঁটে যৌনদাসী

ন’মাসের নরক যন্ত্রণা। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে যাচ্ছিল বছর সতেরোর ইয়াজিদি কিশোরী। গত বছর অগস্ট মাসে তাদের সিঞ্জার শহরটা যখন ইসলামিক স্টেটের দখলে চলে গেল, ইয়াজিদিরা ঘরবাড়ি ছেড়ে ঠাঁই নিয়েছিল কাছের পাহাড়টাতে। সে অবশ্য পালাতে পারেনি। তাকে আর তার দশ বছরের বোনকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল আইএস জঙ্গিরা। আর তার পর... শুরু নরক-দর্শন।

সংবাদ সংস্থা
সিঞ্জার (ইরাক) শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৫ ০২:৪০
Share: Save:

ন’মাসের নরক যন্ত্রণা।

কাঁপা কাঁপা গলায় বলে যাচ্ছিল বছর সতেরোর ইয়াজিদি কিশোরী। গত বছর অগস্ট মাসে তাদের সিঞ্জার শহরটা যখন ইসলামিক স্টেটের দখলে চলে গেল, ইয়াজিদিরা ঘরবাড়ি ছেড়ে ঠাঁই নিয়েছিল কাছের পাহাড়টাতে। সে অবশ্য পালাতে পারেনি। তাকে আর তার দশ বছরের বোনকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল আইএস জঙ্গিরা। আর তার পর... শুরু নরক-দর্শন।

বরাবরই যুদ্ধবন্দি মেয়েরা জয়ীদের ভোগ্যপণ্য হয়ে এসেছে। ধর্ষণ, নির্যাতনের শিকার হয়েছে। যৌনদাসী হয়ে আশ্রয় পেয়েছে হারেমে। গোটা বিশ্বের ইতিহাস তার সাক্ষী। এ যুদ্ধেও তার অন্যথা হয়নি। আইএসের হাতে বন্দি হয়ে নিলামে উঠেছিল ইরাকের দুই বোন। যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল আল রুসাইয়া নামে এক জঙ্গির হাতে। তার পর প্রতিদিন ধর্ষণ হওয়া। কখনও মালিকের হাতে। কখনও বা মালিকের উচ্ছিষ্ট হিসেবে তার দেহরক্ষীদের হাতে।

সিঞ্জার থেকে প্রথমে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় মসুলে। আরও বেশ কিছু কিশোরী বন্দির সঙ্গে রাখা হয় একটি হোটেলে। তার পর সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় রাক্কায়। পরীক্ষা শুরু। কুমারীত্বের পরীক্ষা।

পাশ করতেই পরের ধাপ— আরও ভয়াবহ। ‘‘একটা ঘরের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হল আমাদের। জনা চল্লিশ পুরুষ লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিল। বাছাই শুরু। কার কাকে পছন্দ’’, বলছিল মেয়েটি। ‘‘ভেবেছিলাম আমার ভাগ্যটা হয়তো ভাল। বাকিদের মতো আমাকে দেখতে অত সুন্দর নয়।’’ কিন্তু বাস্তবে তা খাটল না। আল রুসাইয়া নামে লোকটি ১০ মিনিটের মধ্যে কিনে নিল দুই বোন ও অন্য দু’টি মেয়েকে। ‘‘সেই দিনই শেষ বার দেখেছিলাম মাকে। চুলগুলো খামচে ধরে চিৎকার করে কাঁদছিল...।’’ বলল সে।

মালিকের ঘরে দাসত্ব শুরু হল। প্রতিদিন সকালে আল রুসাইয়া ঠিক করত, সে দিন তার কাকে পছন্দ। পড়ে থাকাদের ফেলে দেওয়া হতো দেহরক্ষীদের হাতে। কিশোরীর কথায়, ‘‘মালিকের হাতে পড়লে ভাল, তুলনায় কম মারধর করত। বাধা দেওয়া? এক দিন ফুটন্ত জল ঢেলে দিয়েছিল পায়ে।’’ শুধু এ সবই নয়, জোর করে তাদের ধর্মগ্রন্থ পড়তে বাধ্য করা হতো। না পড়লেই চাবুক। তা ছাড়া ঘরের যাবতীয় সব কাজ তো করতে হতোই। ছলছল চোখে বলে চলল সে, ‘‘যা হুকুম করত, তামিল করতেই হতো। কিছু অনুভব হতো না। শরীর অবশ হয়ে যেত।’’ যেন ‘মৃত্যু’ অথবা সেই ‘মৃত্যু’র মধ্যে বেছে নিতে বলা যে কোনও একটা পথ! তাঁর কথায়, ‘‘শুধু মনে হতো, কবে শেষ হবে এ সব। কিন্তু শেষ আর হতো না...।’’

এক দিন হঠাৎই শেষ হল। আচমকাই। ন’মাস বন্দি থাকার পরে আইএস-এর ডেরা থেকে পালানোর একটা সুযোগ এসে গেল। এপ্রিলে হঠাৎই পেশমেরগা বাহিনীর হাতে খুন হয়ে গেল আল রুসাইয়া ও তার সঙ্গীরা। পালাল দুই বোন।

তবে সবাই পারল না। একটি মেয়ে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে গেল জঙ্গিদের হাতে। শোনা গিয়েছিল, মেয়েটির দু’টো পা-ই কেটে দিয়েছিল জঙ্গিরা। ধরা পড়ার ভয়ে অনেকেই তাই ফিরে গেল আইএস ডেরায়।

সেই ভয়কে জয় করেও লড়াই অবশ্য থামেনি। কিশোরী এখন অন্তঃসত্ত্বা। তার শরীরে রয়েছে আল রুসাইয়ার সন্তান। এ দিকে ইয়াজিদিরা মারাত্মক পিতৃতান্ত্রিক গোষ্ঠী। আইএস-এর ডেরা থেকে ফিরে আসা মেয়েদের চরিত্রহীনা অচ্ছুৎ হিসেবে দেখা হয় সমাজে। মেয়েটির কাকা হুমকি দিয়ে রেখেছে। বলে দিয়েছে, যদি জানতে পারেন ধর্ষণ করা হয়েছে, তা হলে খুন করে ফেলবেন তাকে। তাই গোপনেই গর্ভপাত করানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে। সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন এক সুইডিশ তরুণী, সমাজকর্মী ডেলাল সিন্ডি। ইয়াজিদি সমাজ যাতে তাকে তাড়িয়ে না দেয়, সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছেন সিন্ডি। না হলে এখনও সেই একটাই পথ, ‘মৃত্যু’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

yazidi sex slave sex terrorist rape death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE