নিউ ইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জ়োহরান মামদানি ‘রাগী’ হলেও তাঁর ‘প্রিয় শহর’কে সাহায্য করতে তিনি প্রস্তুত। নির্বাচনের পরের দিন বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে এ ভাবেই কিছুটা সুর নরমের ইঙ্গিত দিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্য দিকে, জেতার পরে প্রথম দিনটা বেশ হাল্কা মেজাজেই কাটালেন মামদানি। প্রচার টিম ও মেয়র টিমের সদস্যদের জন্য বিশেষ মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেছিলেন তিনি। সেখানে ছিল চা, আলুর দম আর মোমোর মতো নানা ভারতীয় পদ।
মঙ্গলবার ট্রাম্প-সমর্থিত নির্দল প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুয়োমো এবং ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে হারিয়ে নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন উদারপন্থী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জ়োহরান মামদানি। ফল ঘোষণার পরে বিজয়-বক্তৃতায় চড়া সুরে ট্রাম্পের উদ্দেশে মামদানি বলেছিলেন, “এটা অভিবাসীদের শহর... আমাদের এক জনের দিকে বন্দুক তাক করলে আমরা সবাই মিলে তার প্রতিরোধ করব।”এ বিষয়ে একটি টিভি সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “খুবই রাগী কথাবার্তা, বিশেষ করে আমার উদ্দেশে যা বলা হল।” তার পরে কিছুটা হুমকির সুরেই ট্রাম্প বলেন, “আমার সঙ্গে ওঁর ব্যবহার ভাল করা উচিত। উনি যা যা চান, তা আমার অনুমোদন ছাড়া সম্ভব নয়। শুরুটা কিন্তু উনি ভালকরলেন না।”
এর পরে কর্পোরেট কর্তাদের এক বৈঠকে গিয়েও ফের মামদানি-প্রসঙ্গ তোলেন ট্রাম্প। বলেন, “২০২৪-এর ৫ নভেম্বর আমাকে জিতিয়ে আমেরিকার মানুষ সার্বভৌমত্ব ফিরে পেয়েছিলে। এ বছর ৪ নভেম্বর নিউ ইয়র্কেরমেয়র নির্বাচনের পরে ওই শহরের মানুষ সেই সার্বভৌমত্ব কিছুটা হারাল। কমিউনিস্ট, মার্ক্সিস্ট, উদারপন্থীদের সামনে সুযোগ ছিল। কিন্তু তারা নিজেরাই সর্বনাশ ডেকে আনল। এ বার দেখা যাক, এক জন কমিউনিস্ট এই শহরের জন্য কী করে। নিউ ইয়র্কের মানুষ এ বার ফ্লরিডায় পালাবেন!”
এর পরে অবশ্য বেশ কিছুটা সুর নরম করেন ট্রাম্প। বলেন, “নিউ ইয়র্ক আমার খুব প্রিয় শহর। সেই শহরকে সাহায্য করতে আমি প্রস্তুত। আমরা চাই নিউ ইয়র্ক সাফল্যের মুখ দেখুক। তার জন্য যে-টুকু সাহায্য প্রয়োজন, আমরা হয়তো করব।” মেয়র নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের সুর অবশ্য অনেকটাই চড়া ছিল। দিন সাতেক আগেও তিনি বলেছিলেন, “মামদানি জিতলে নিউ ইয়র্কের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সর্বনাশ হবে। নিউ ইয়র্ক কলম্বিয়া বা ভেনেজ়ুয়েলা হয়ে যাবে।” ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগেও ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন, মামদানি জিতলে নিউ ইয়র্কের সব সরকারি অনুদান বন্ধ করে দেওয়া হবে।
হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ডেমোক্র্যাট সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিয়ো-কোর্তেজ়ের সঙ্গে মেয়র জ়োহরান মামদানি। ছবি: এক্স।
বুধবার সকালেই মেয়র হওয়ার আগে কাজ শুরু করে দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী টিম ঘোষণা করেছিলেন মামদানি। স্থানীয় সময় বুধবার দুপুরে ঘনিষ্ঠ কর্মী-সমর্থকদের জন্য বিশেষ মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন তিনি। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভসের ডেমোক্র্যাট সদস্য আলেকজ়ান্দ্রিয়া ওকাসিয়ো-কোর্তেজ়। আলেকজ়ান্দ্রিয়ার সঙ্গে তাঁর ছবি সমাজমাধ্যম এক্সে পোস্ট করে মামদানি লেখেন, ‘বেশ ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে প্রথম দিনটা কেটে গেল।’ জানা গিয়েছে, নানা ভারতীয় পদ এই মধ্যাহ্নভোজের মেনুতে রেখেছিলেন মীরা নায়ারের ছেলে। ছিল মোমো, পনির টিক্কা, আলুর দম, নেপালি বাও এবং চা। খাবার সরবরাহ করেছিল নিউ ইয়র্কের কুইন্সের একটি ভারতীয়-নেপালি রেস্তরাঁ।
মেনুতে ছিল মোমো, পনির টিক্কা, আলুর দম, নেপালি বাও এবং চা। ছবি: এক্স।
পরে একটি সঙ্গীতানুষ্ঠানেও যান মামদানি। দর্শকদের বলেন, “এ কথা মানতেই হবে যে আমি বয়সে তরুণ। তার সঙ্গে এ কথাও অস্বীকার করা যাবে না যে আমি মুসলিম। এবং এ কথাও সত্যি যে আমি এক জন উদারপন্থী সোশ্যালিস্ট। এবং সত্যি বলতে কী, আমার এই সব পরিচয়ের জন্য আমি একটুওলজ্জিত নই।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)