ফুটপাথ দখল করেছে সেনাবাহিনী। অগত্যা রাস্তা দিয়েই হাঁটা। শুক্রবার ব্যাঙ্ককে। ছবি: রয়টার্স।
সেনাবাহিনীর হাতে আটক হলেন তাইল্যান্ডের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইংলাক শিনাবাত্রা। আটক করা হয়েছে তাঁর পরিবারের বেশ ক’জন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকেও। গত কালই সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে তাইল্যান্ডে। সে কর্মকাণ্ডের রেশ ধরেই এ দিন প্রথমে নিজেকে দেশের অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেন তাইল্যান্ডের সেনাপ্রধান জেনারেল প্রয়ুথ চান-ওচা। তার পরই সেনাবাহিনীর সদর দফতরে হাজির হতে বলা হয় ইংলাককে। শোনা যাচ্ছে, এর ক’ঘণ্টা পর গোপন ডেরায় নিয়ে যাওয়া হয় ইংলাককে।
ছ’মাস ধরেই ইংলাক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার দাবিতে বিক্ষোভ চলেছে তাইল্যান্ডে। তাতে নিহত ২৯। আহত হাজারেরও বেশি। কিন্তু এর পরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। এমনকী চলতি মাসের গোড়ায় সাংবিধানিক আদালতের রায়ের ভিত্তিতে ইংলাক ও তাঁর মন্ত্রিসভা ক্ষমতাচ্যুত হলেও থামেনি বিক্ষোভ। দেশে শান্তি ও আইনশৃঙ্খলা ফেরাতে ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নেয় সেনা। অন্তত তেমনই জানিয়েছেন প্রয়ুথ।
বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত আন্তর্জাতিক মহল। মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছেন, কোনও পরিস্থিতিতেই সেনা অভ্যুত্থান যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। এর ফলে তাইল্যান্ড সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা যেতে পারে বিশ্ববাসীর কাছে, জানান কেরি। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান কি মুনও যে বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন, তা জানিয়েছেন তাঁর মুখপাত্র।
চিন্তার অবশ্য কারণও রয়েছে। কাল সেনা অভ্যুত্থানের ঘোষণা করেছিলেন প্রয়ুথ। প্রায় একই সঙ্গে সংবিধান বাতিল করেন তিনি। তার পর থেকে তাইল্যান্ড টেলিভিশন ও রেডিওয় সব অনুষ্ঠানের প্রচার বন্ধ। শুধু সেনাপ্রধানের বার্তা সম্প্রচারিত হচ্ছে। রাত ১০টা থেকে সকাল ৫টা পর্যন্ত জারি থাকছে কার্ফু। কোথাও কোনও সভা-সমিতি, বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেওয়া হচ্ছে না। স্কুলও বন্ধ। সব মিলিয়ে দেখলে মনে হবে হঠাৎই যেন তাইল্যান্ডে শান্তি ফিরে এসেছে।
কিন্তু এ শান্তিতে বিপদের আঁচ পাচ্ছেন অনেকে। অভ্যুত্থানের এক দিন পরই যা যা করেছেন প্রয়ুথ, তাতে বিপদের আশঙ্কা হওয়াই স্বাভাবিক। নিজে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী তো হয়েছেনই, সঙ্গে সেনার ছয় উচ্চপদস্থ কর্তাকে দেশ শাসনের বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। বৈঠক করেছেন উচ্চপদস্থ আমলাদের সঙ্গে। বুঝিয়ে দিয়েছেন দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক উন্নতি নিয়ে তাঁর সুস্পষ্ট ভাবনাচিন্তা রয়েছে। এ সব যদি ইতিবাচক পদক্ষেপ হয়ে থাকে, তা হলে নেতিবাচক কাজের তালিকাও বেশ বড়। এ দিন ইংলাক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের আটক করার পাশাপাশি তিনি প্রাক্তন তাবড় নেতাদেরও ডেকে পাঠান। অন্তত ১৫৫ জন নেতাকে অনুমতি ছাড়া দেশের বাইরে যেতে না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রয়ুথ। অন্যথা হলে গ্রেফতারির হুমকিও দিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে পরিস্থিতিটা উদ্বেগজনক ।
তবে ইতিহাস বলছে, এর আগেও বেশ ক’বার সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে তাইল্যান্ডে। কিন্তু সে সব সময়ের তুলনায় এ বারের ছবিটা অন্য রকম। রাস্তায় সাঁজোয়া গাড়ি নেই, গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলিকে পাহারা দেওয়ার জন্য সেনার সংখ্যাও ন্যূনতম। ব্যাঙ্ককের ছবি দেখে অন্তত বোঝা সম্ভব নয়, দেশে সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে। প্রয়ুথের কথাতেও অন্য রকম ছবিই স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, “পরিস্থিতি শান্ত থাকলে, আমরা জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে রাজি আছি।”
তবে সত্যি কী হয়, ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার পর প্রয়ুথ আদৌ ছাড়েন কি না, তার জন্য অপেক্ষাই একমাত্র সম্বল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy