জঙ্গিরা নিজেদের দেশ ছেড়ে এসেছে অন্য দেশ দখল করতে। কিন্তু তার আরও একটা দাবিও রয়েছে তাদের। আর সেটা হল বৌয়ের দাবি। ইরাকে এসে এখন বৌ খুঁজছে আইএসআইএস। বেইজি শহরের মানুষ এখন তাই রীতিমতো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। যখন তখন দরজায় টোকা পড়ছে। আর খোঁজ চলছে, বাড়িতে অবিবাহিত কোনও মেয়ে আছে কি? না বললেও অবশ্য সহজে পার পাওয়া যাচ্ছে না। তখন হুকুম হচ্ছে, বাড়িতে যাঁরা বিবাহিত, তাঁদের পরিচয়পত্র নিয়ে আসুন।
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত কোনও ছবির গল্প নয়। এই ধরনের ঘটনা এখন আকছার ঘটছে বেইজিতে। এক দিকে আইএসআইএস জঙ্গিদের হাত থেকে বেইজির তৈল শোধনাগার রক্ষা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ইরাকি সেনাদের। অন্য দিকে, খানিক দূরে খাস বেইজি শহরেই শুরু হয়েছে জঙ্গিদের নতুন উপদ্রব। অবিবাহিত জঙ্গিরা এখন শহর ঘুরে ঘুরে বৌ খুঁজে বেড়াচ্ছে।
আবু লাহিদ নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা শোনালেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। আবুর কথায়, “আমি ওদের (জঙ্গিদের) অনেক বার বললাম যে, আমার বাড়িতে মাত্র দু’জন মহিলা আছেন, দু’জনেই বিবাহিত। কিন্তু ওরা আমার কথা মানতে চাইল না। এমনকী মহিলাদের সচিত্র পরিচয়পত্রও দেখতে চাইল। ওরা বলছে, ওরা বিয়ে করেনি। তাই এখন ওদের বৌও চাই।”
আবুর পড়শিদের এখন চিন্তা, যাঁদের বাড়িতে অবিবাহিত মেয়েরা আছেন, তাঁরা কি করবেন? শেষমেশ কি জঙ্গিদের হাতেই তুলে দিতে হবে বাড়ির মেয়েদের?
উত্তর কেউই ভেবে পাচ্ছেন না।
আসলে শুধু তো বেইজি নয়, গোটা ইরাকের পরিস্থিতিটাই ভয়ঙ্কর ভাবে বদলে গিয়েছে দিন দশেক হতে চলল। এই ক’দিনে মসুল-বেইজি-সহ মোট পাঁচটি শহর দখল করে ফেলেছে আইএসআইএস জঙ্গিরা। তাদের মোকাবিলা করতে ইতিমধ্যেই আমেরিকার মতো দেশের সাহায্যও চেয়ে ফেলেছে প্রেসিডেন্ট জালাল তালাবানির সরকার। আমেরিকাও ততক্ষণাৎ জানিয়েছিল, জঙ্গি দমনে তারা সাহায্যের হাত বাড়াতে প্রস্তুত।
কিন্তু তাতে ইরাকের সাধারণ মানুষের সমস্যার কতটা সমাধান হয়েছে?
জঙ্গিদের ভয়ে ইরাক থেকে প্রচুর মানুষ ইতিমধ্যেই পালিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এর অন্য দিকটাও তো আছে। অর্থাৎ জঙ্গি-ভয়ে দেশত্যাগ না করে নিজেদের ভিটেমাটি আঁকড়ে পড়ে আছেন, এমন ইরাকির সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। আবু লাহিদের মতো লোকজনই জানাচ্ছেন, ইরাকের পরিস্থিতি এখন অসহনীয়।
মসুল শহরের ছবিটাও এখন অনেকটা একই রকম। বেইজির সঙ্গে একটা তফাত আছে অবশ্য। আর সেটা হল, বৌ না খুঁজলেও সেখানে একের পর এক ফরমান জারি করছে আইএসআইএস।
মদ্যপান, ধূমপানে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে ইতিমধ্যেই। মেয়েদের জন্যও তৈরি হচ্ছে, নিত্য নতুন নিয়ম। উম মহম্মদ নাম ৩৫ বছরের এক শিক্ষক বললেন, “ওরা (জঙ্গিরা) যা সব নিয়ম চালু করছে, তাতে মনে হচ্ছে সময়ের উল্টো দিকে হাঁটছি। একশো বছরের পুরনো কোনও এক শহরের বাসিন্দা বলে মনে হচ্ছে নিজেকে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy