Advertisement
E-Paper

উদ্দেশ্য নিয়েই পথ বদল বিমানের

বিমান বেপাত্তা হওয়ার এক সপ্তাহ পরে সেই ছিনতাই তত্ত্বের দিকেই ইঙ্গিত করলেন মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। আজকের সাংবাদিক বৈঠকে তিনি সরাসরি বিমান অপহরণের কথা অবশ্য বলেননি। তবে জানিয়েছেন, গত শনিবার রাত সওয়া দু’টো নাগাদ মালয়েশিয়ার অসামরিক রেডার থেকে হারিয়ে যাওয়ার পরেও বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআরের নিয়ন্ত্রণ ছিল ওই বিমানেরই কারও হাতে। এবং সেই ব্যক্তিই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বিমানের অভিমুখ ঘুরিয়েছিলেন।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৪ ০৩:৩৮

বিমান বেপাত্তা হওয়ার এক সপ্তাহ পরে সেই ছিনতাই তত্ত্বের দিকেই ইঙ্গিত করলেন মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। আজকের সাংবাদিক বৈঠকে তিনি সরাসরি বিমান অপহরণের কথা অবশ্য বলেননি। তবে জানিয়েছেন, গত শনিবার রাত সওয়া দু’টো নাগাদ মালয়েশিয়ার অসামরিক রেডার থেকে হারিয়ে যাওয়ার পরেও বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআরের নিয়ন্ত্রণ ছিল ওই বিমানেরই কারও হাতে। এবং সেই ব্যক্তিই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বিমানের অভিমুখ ঘুরিয়েছিলেন।

ছিনতাই তত্ত্বের পাশাপাশি মালয়েশীয় সেনাবাহিনীর রেডারে ধরা পড়েছে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। সেই সব তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, অসামরিক রেডারের সঙ্গে সংযোগ ছিন্ন হওয়ার পরপরই দ্রুত ওঠানামা করে বিমানটি। কী ভাবে? মালয়েশীয় সামরিক সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ চিন সাগরের কোনও একটি জায়গায় এই যোগাযোগ ছিন্ন হয়। তার একটু পরেই বিমানটি নির্ধারিত গতিপথ ছেড়ে অন্য দিকে মুখ ঘোরায় এবং ৪৫ হাজার ফুট উচ্চতায় উঠে যায়। সামান্য পরে দেখা যায়, বিমানটি উড়ছে ২৩ হাজার ফুট উচ্চতায়। অর্থাৎ এক ঝটকায় নেমে এসেছে ২২ হাজার ফুট। একটু পরে সেটি ফের মুখ ঘোরায় এবং উপরে উঠতে শুরু করে। শেষ তথ্য পাওয়ার সময় দেখা যাচ্ছে, বিমানটি সাড়ে ২৯ হাজার ফুট উপর দিয়ে উড়ছে এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে চলেছে।

তার পর বিমানটি কোথায় গেল, সেটাই রহস্য। বিমান বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ বিমানের জ্বালানি ও শেষ সঙ্কেত পাওয়ার সময় থেকে হিসেব কষে আন্দাজ পেয়েছেন, ঠিক কত দূর পর্যন্ত উড়তে পারে বিমানটি। সেই চৌহদ্দির ভিতরেই দু’টি সম্ভাব্য করিডরের ইঙ্গিত দেন তাঁরা। প্রথম করিডরটি মালয়েশিয়ার উত্তরে তাইল্যান্ড থেকে চিন পর্যন্ত বিস্তৃত। দ্বিতীয়টির বিস্তার দক্ষিণে ইন্দোনেশিয়া থেকে ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত। নাজিব জানিয়েছেন, সম্ভাব্য পথের উপর যে দেশগুলি রয়েছে, কুয়ালা লামপুরে তাদের দূতাবাসকে সমস্ত তথ্য দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন, বিমানটি ছিনতাই হলে ছিনতাইকারীরা উত্তরের করিডরটির থেকে দক্ষিণের করিডরটিই বেশি পছন্দ করবে। কারণ, উত্তরের যে রাস্তায় বিমানটি যেতে পারত, সেটি প্রায় ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। সে সব এলাকা দিয়ে গেলে কোনও না কোনও দেশের রেডারে ধরা পড়তেই হতো। কিন্তু দক্ষিণের পথটির বিস্তীর্ণ অংশই সমুদ্র। মাঝে মধ্যে যে সমস্ত ছোটখাটো দ্বীপ রয়েছে, সেগুলির বেশির ভাগেই মানুষ থাকে না। ফলে নজরদারি এড়ানো অপেক্ষাকৃত সহজ। তাই বিমান অপহরণ করা হলে এই পথ নেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সরকারি তরফে দুই পথেই তল্লাশি চালানোর কথা জানানো হয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানান, পূর্ব চিন সাগরে তল্লাশির চেষ্টা বন্ধ করে এ বার বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগরেই আরও বেশি করে মনোনিবেশ করবেন তাঁরা।

ছিনতাই তত্ত্বের কথা বলতে গিয়ে বিমানের অস্বাভাবিক ওঠানামার উপরেই জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, এই ধরনের জেটলাইনার সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ হাজার ফুট উচ্চতায় ওড়ে। সেই উচ্চতা থেকে এক ঝটকায় যদি সেটি ৪৫ হাজার ফুট উচ্চতা উঠে যায় এবং তার পরেই ২২ হাজার ফুটে নেমে আসে, তা হলে সেই ধাক্কায় যাত্রী ও বিমানকর্মীরা অজ্ঞানও হয়ে পড়তে পারেন। তবে ককপিটে এই উচ্চতা বদলের প্রভাব না পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। সে ক্ষেত্রে ককপিটে থাকা যে কেউ বিমানটির নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতি তৈরি করেই হয়তো বিমানের দখল নিয়েছিল ছিনতাইকারীরা।

বস্তুত, গত কয়েক দিন ধরেই ছিনতাইয়ের তত্ত্ব শোনাচ্ছিল বিভিন্ন সূত্র। আজ কিন্তু মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী নাজিব সে দিকে স্পষ্ট ইঙ্গিত করলেন। একই সঙ্গে এ দিন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও দেন তিনি। জানান, মালয়েশিয়ার পূর্ব উপকূলে পৌঁছনোর ঠিক আগেই এমএইচ ৩৭০ উড়ানটির যোগাযোগ ব্যবস্থা (এয়ারক্রাফট কমিউনিকেশন অ্যাড্রেসিং অ্যান্ড রিপোর্টিং সিস্টেম) নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছিল। তার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই যখন মালয়েশিয়া এবং ভিয়েতনামের আকাশসীমার ঠিক মাঝামাঝি ছিল বিমানটি, তখনই সেটির ট্রান্সপন্ডার নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়। মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে দু’ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থারই নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া থেকে এটা পরিষ্কার যে, বিমানেরই কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে গোটা ঘটনাটি ঘটিয়েছিল।

বিষয়টি মানছেন বিশেষজ্ঞদের একটি বড় অংশও। তবে তাঁদের ব্যাখ্যা একটু অন্য। তাঁরা জানান, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামের আকাশসীমার যে জায়গায় দু’দেশের এটিসি-র সঙ্গে প্রায় সমান দূরত্ব থাকে, অর্থাৎ যেখানে দুই দেশের কোনও একটির এটিসি-র সঙ্গেই যোগাযোগ করা যেতে পারে, ঠিক সেখান থেকেই বিমানটির যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করা হয়। তাঁদের ধারণা, বিমানেরই রীতিমতো প্রশিক্ষিত কেউ জেনেবুঝে ওই এলাকা থেকে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তবে তিনি কে, কেনই বা এমন করলেন, তা নিয়ে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।

নাজিব জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ার সামরিক রেডারে গত শনিবার রাত সওয়া দু’টো নাগাদ যে সন্দেহজনক বিমানের গতিবিধি ধরা পড়েছিল, উপগ্রহ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, সেটিই এমএইচ ৩৭০। মালয়েশিয়ার পশ্চিম উপকূল থেকে সেটি মালাক্কা প্রণালীর দিকে উড়ে যায়।

তার পর অবশ্য সেটির কোনও হদিস পায়নি সামরিক রেডার। এ দিন নাজিব জানিয়েছেন, তার পর অন্তত সাত ঘণ্টা বিমানটি থেকে সঙ্কেত পেয়েছিল উপগ্রহ। শেষ সঙ্কেতটি মেলে শনিবার সকাল ৮টা ১১ মিনিটে। তবে বিমানটি সে সময় ঠিক কোথায় ছিল, তা উপগ্রহ থেকে জানা যায়নি।

ছিনতাই-তত্ত্বের সঙ্গে ফিরে আসছে পুরনো প্রশ্নও। ছিনতাই যদি হয়ও, তা হলে ৭ দিনে ছিনতাইকারীরা কেন কোনও দাবি পেশ করল না? এ ব্যাপারে মার্কিন তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, বিমানটি ভারত মহাসাগরের দিকে নিয়ে গিয়েছিল ছিনতাইকারীরা। কিন্তু মাঝপথে জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় সেটি ভারত মহাসাগরেই ভেঙে পড়ে। এ দিনও এক মার্কিন চ্যানেল জানিয়েছে, উপগ্রহ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এটাই উঠে আসছে যে, হয় বঙ্গোপসাগর বা ভারত মহাসাগরের কোথাও ভেঙে পড়েছিল বিমানটি। মালয়েশিয়ারই এক তদন্তকারীর স্বীকারোক্তি, বিমানটি যে ছিনতাই হয়েছিল, তা মোটামুটি পরিষ্কার।

ছিনতাইয়ের দিকে ইঙ্গিত করলেও নাজিব জানান, অন্য সম্ভাবনাগুলিও খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। এ দিন তাই নতুন করে যাত্রী এবং বিমানকর্মীদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য খতিয়ে দেখা শুরু হয়। পাইলট আহমদ শাহের বাড়িতেও যায় পুলিশ। কো-পাইলট ফারিক আব্দুল হামিদের বাড়িতেও তল্লাশি হওয়ার কথা। পাশাপাশি, বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জেও ব্যাপক তল্লাশি চলছে। বাংলাদেশ এ দিন থেকেই অনুসন্ধান অভিযানে যোগ দেয়।

malaysian airline boeing 777-200 kuala lumpur search missing plane
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy