Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গুলিবিদ্ধ হামিদ মির, নিশানায় পাক সেনা

বিমানবন্দর থেকে অফিসে যাওয়ার পথে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের গুলিতে আহত হলেন পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মির। স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়েছে। করাচি পুলিশ জানিয়েছে, ৪৭ বছরের মিরের দেহে তিনটি বুলেট লেগেছিল। আপাতত তিনি বিপন্মুক্ত। বহু দিন ধরেই প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছিলেন মির।

সংবাদ সংস্থা
করাচি শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৫১
Share: Save:

বিমানবন্দর থেকে অফিসে যাওয়ার পথে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের গুলিতে আহত হলেন পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মির। স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়েছে। করাচি পুলিশ জানিয়েছে, ৪৭ বছরের মিরের দেহে তিনটি বুলেট লেগেছিল। আপাতত তিনি বিপন্মুক্ত।

বহু দিন ধরেই প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছিলেন মির। যিনি এই মুহূর্তে পাকিস্তানের অন্যতম জনপ্রিয় সাংবাদিক। আজ বিকেলে জিন্না আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অফিসে যাওয়ার জন্য গাড়িতে চড়েন তিনি। মিরের গাড়ির চালক জানিয়েছেন, নাথা খান সেতুর কাছে হঠাৎ গাড়ি লক্ষ করে গুলি ছোড়ে এক দুষ্কৃতী। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেন তিনি। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, মিরের গাড়ি গতি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই মোটরবাইক এবং গাড়িতে চড়ে হাজির হয় আরও জনা চারেক লোক। তারা দল বেঁধে মিরের গাড়িকে তাড়া করে।

প্রচণ্ড গতিতে চলতে চলতেই মিরের গাড়ি লক্ষ করে পরপর গুলি ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। তখনই আহত হন মির। ওই অবস্থাতেই নিজের চ্যানেলের ইসলামাবাদ ব্যুরো চিফ রানা জাভেদকে ফোন করে হামলার খবর দেন তিনি। জানান করাচির অফিসকেও। ততক্ষণে গাড়িটিকে করাচির একটি বেসরকারি হাসপাতালে পৌঁছে দেন চালক। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সেখানে পৌঁছনোর পরেই অজ্ঞান হয়ে যান মির। তাঁর দ্রুত অস্ত্রোপচার করা হয়।

তাঁর খবরের হাত ধরে গত দেড় দশকে পাকিস্তানের একাধিক বড় রাজনৈতিক এবং আর্থিক কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশ্যে এসেছে। যার জেরে তালিবান, পাক সেনাবাহিনী-সহ বিভিন্ন শিবির তাঁকে মারতে উদগ্রীব বলে নিজেই জানিয়েছেন একাধিক বার। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে তাঁর গাড়ির নীচ থেকে বিস্ফোরক উদ্ধার হয়। সে ঘটনার দায় নিয়েছিল পাকিস্তান তালিবান। ওই ঘটনার পরে তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়। আজও তাঁর সঙ্গে ছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা।

এ দিনের হামলার পরে মিরের ভাই তথা সাংবাদিক আমিরের দাবি, তাঁর উপরে হামলা হলে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধান জাহির-উল-ইসলামই দায়ী হবেন বলে কিছু দিন আগে জানিয়েছিলেন মির। পাক সেনাবাহিনী, পরিবার-পরিজন ও নিজের টিভি চ্যানেলকে এই বিষয়ে একটি চিঠিও লিখেছিলেন তিনি। আমিরের বক্তব্যের পরে অনেকেই মনে করছেন, এ দিনের হামলার পিছনে পাক সেনা ও আইএসআইয়ের একাংশ জড়িত।

লাহৌরের উর্দু দৈনিকে কাজ করার সময়ে মির ফাঁস করেন পাক সেনাবাহিনীর ডুবোজাহাজ-কেলেঙ্কারি। তাতে অভিযুক্তের তালিকায় ছিলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও নৌসেনার অফিসাররা। তার জেরে চাকরিও যায় মিরের। ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানে তালিবান প্রধান মোল্লা ওমরের সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাঁর। সেই সূত্র ধরেই তিন বার ওসামা বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার নেন তিনি। ২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন হামলার সময়ে কাবুলে গিয়ে শেষ বার বিন লাদেনের সঙ্গে দেখা করেন মির। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর হত্যা নিয়ে তাঁর তদন্তে চটেছিল পারভেজ মুশারফ সরকার। এক সময়ে পাক টেলিভিশনে তাঁর অনুষ্ঠানের উপরে নিষেধাজ্ঞাও জারি হয়।

আবার বালুচিস্তানে বিদ্রোহ দমনে পাক সেনার কার্যকলাপ ও রাজনীতিতে গুপ্তচর সংস্থার নাক গলানো নিয়ে প্রতিবেদনে খাপ্পা হয়েছিল আইএসআই ও সেনা।

পাকিস্তানে সম্প্রতি আক্রান্ত হয়েছেন আরও কয়েক জন সাংবাদিক। কিছু দিন আগে লাহৌরে আক্রান্ত হন রাজা রুমি। তাঁর গাড়ির চালক নিহত হন। এর পরে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে দেখা করেন সাংবাদিকরা।

কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি বদলায়নি। সাংবাদিক মেহর তারারের কথায়, “বিরোধী কণ্ঠকে স্তব্ধ করার সবচেয়ে প্রকাশ্য উপায় হল সাংবাদিকদের গুলি করা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

shot dead pakistan soldier
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE