Advertisement
১৮ মে ২০২৪

চিনের গোপন বৈঠক ভেস্তে দেন ওবামা-হিলারি

গোপনীয়তা বজায় রাখতে কাচের দেওয়ালটাও পর্দা দিয়ে মোড়া। লম্বা টেবিলের এক প্রান্তে চিনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও। অন্য প্রান্তে সেই সময়কার ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ-সহ অন্য দেশের প্রতিনিধিরা। চূড়ান্ত গোপনীয় সেই বৈঠকে এক রকম জোর করেই ঢুকে পড়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। পিছু পিছু ঢুকেছিলেন তদানীন্তন মার্কিন বিদেশসচিবও।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৪ ০২:২৯
Share: Save:

গোপনীয়তা বজায় রাখতে কাচের দেওয়ালটাও পর্দা দিয়ে মোড়া। লম্বা টেবিলের এক প্রান্তে চিনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও। অন্য প্রান্তে সেই সময়কার ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ-সহ অন্য দেশের প্রতিনিধিরা। চূড়ান্ত গোপনীয় সেই বৈঠকে এক রকম জোর করেই ঢুকে পড়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। পিছু পিছু ঢুকেছিলেন তদানীন্তন মার্কিন বিদেশসচিবও।

পাঁচ বছর আগে ডেনমার্কের কোপেনহাগেনের জলবায়ুর পরিবর্তন সংক্রান্ত সম্মেলন থেকে এমন টুকরো মুহূর্ত উঠে এসেছে ‘হার্ড চয়েসেস’ নামে একটি বইয়ে। নিজের স্মৃতিকথার ওই নামই দিয়েছেন হিলারি ক্লিন্টন। ২০০৯ সালের সেই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন তিনি। যাতে তাঁর দাবি, আমেরিকাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে চিন কৌশলে ভারত-ব্রাজিল-দক্ষিণ আফ্রিকাকে পাশে নিয়ে এগোতে চাইছিল। কিন্তু চিনের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। হিলারির মতে, ওবামাই সেটা হতে দেননি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপস্থিত বুদ্ধি এবং স্থির লক্ষ্যের জন্যই চিনকে ঠেকানো গিয়েছিল বলে মন্তব্য হিলারির।

“কোপেনহাগেনে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট আর আমি খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম ওয়েন জিয়াবাওকে।” গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে যে সব দেশ, বিশেষ করে চিন এবং আমেরিকা, তাদের নেতাদের একসঙ্গে বসে আপসের পথে যাওয়া দরকার ছিল। হিলারির বক্তব্য, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এটাই ছিল সহমত হওয়ার একমাত্র পথ। কিন্তু চিন তাদের এড়িয়ে যাচ্ছিল বলে দাবি হিলারির।

পরে ওবামা-হিলারির কানে আসে জিয়াবাও গোপন বৈঠক করতে পারেন ভারত বা দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলির সঙ্গে। প্রাক্তন বিদেশসচিব বইয়ে লিখছেন, “আমেরিকা যে ধরনের সমঝোতার পথে যেতে আগ্রহী ছিল, তা ঠেকাতে চিন গোপন বৈঠকের আয়োজন করেছিল। হঠাৎ দেখলাম সম্মেলনে কিছু দেশের নেতারা উধাও। তখনই বুঝলাম কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। খোঁজ লাগানো শুরু হল।”

এই ভাবে হিলারিরা জানতে পেরে যান, কোথায় হবে এই বৈঠক। পরে হিলারির কথায়, “অর্থপূর্ণ দৃষ্টিবিনিময় হল আমার আর প্রেসিডেন্টের! মানে উনি যা ভাবছেন আমিও কি তাই ভাবছি! ভাবামাত্রই কাজ শুরু। কিছু বিশেষজ্ঞকে নিয়ে দৌড়লাম সেই বৈঠকের জায়গায়।” পরে অবশ্য হঠাৎ মাথায় আসা এই পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তর ঠাট্টা-তামাশা হয়েছিল হিলারি এবং ওবামার। কিন্তু সেই সময়ে দাঁড়িয়ে সেটা খুবই কঠিন কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল বলে মানছেন হিলারি।

কী হয়েছিল তখন? ‘হার্ড চয়েসেস’-এ রয়েছে, গোপন সম্মেলন-কক্ষের দিকে যত এগোচ্ছেন হিলারিরা, তাঁদের চোখে পড়ছে বিস্মিত চিনা অফিসারদের চাউনি। এঁদের কেউ কেউ আবার হিলারিদের অন্য পথে পাঠানোরও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা অবিচল ছিলেন। সম্মেলন কক্ষের বাইরে যখন তাঁরা পৌঁছে গিয়েছেন, তাঁদের দেখে উচ্চপদস্থ অফিসারদের চোখ ছানাবড়া। নিরাপত্তা রক্ষীরা পর্যন্ত ঠকঠক করে কাঁপছে। এক চিনা রক্ষীর সঙ্গে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব রবার্ট গিবসের এক প্রস্ত ঝামেলাও হয়। এই গোলমালের মধ্যে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ফাঁক গলে সোজা ঢুকে পড়েন গোপন বৈঠকে। জোরে হাঁক পাড়েন, ‘মি. প্রিমিয়ার!’ প্রত্যেকেই শুনতে পায় সেই স্বর। চিনা রক্ষীরা এর পরে হিলারিকেও আটকাতে এসেছিল কিন্তু প্রেসিডেন্টের পিছনেই ঢুকে যান তিনি। ওবামা হেসে বলে ওঠেন, ‘আপনারা তৈরি তো?’ হিলারির মতে, এর পরে সবার উপস্থিতিতে জলবায়ু সম্মেলনে সমঝোতার প্রশ্নটি ঠিক ভাবে আলোচিত হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

obama hillary clinton China's secret meeting
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE