Advertisement
০৫ মে ২০২৪

নিশানায় বিদেশিরা, কাবুলে তালিবান হানায় নিহত ২১

বাবার রেস্তোরাঁয় জঙ্গিরা হামলা করেছে। খবরটা পাওয়ার পর থেকেই উদ্বেগে ছটফট করছিলেন মেয়ে। কেউ বাবার কোনও খোঁজ দিতে পারছিলেন না। আর অপেক্ষা করতে না পেরে শেষমেশ টুইটারের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মোনা হামাদে।

সংবাদ সংস্থা
কাবুল শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০১৪ ১৫:৫১
Share: Save:

বাবার রেস্তোরাঁয় জঙ্গিরা হামলা করেছে। খবরটা পাওয়ার পর থেকেই উদ্বেগে ছটফট করছিলেন মেয়ে। কেউ বাবার কোনও খোঁজ দিতে পারছিলেন না। আর অপেক্ষা করতে না পেরে শেষমেশ টুইটারের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মোনা হামাদে। টুইটারে তাঁর কাতর আর্তি ছিল, “বাবার রেস্তোরাঁয় ঢুকে জঙ্গিরা গুলি চালাচ্ছে। আমার বাবা কেমন আছে, কেউ জানাতে পারবেন?” বেশি ক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি মোনাকে। খবর সংগ্রহের তাগিদে কাবুলের ওই জনপ্রিয় রেস্তোরাঁয় তখন হাজির হয়েছেন নাজির রহমান নামে এক সাংবাদিক। খারাপ খবরটা টুইট করেই জানান নাজিব। লেখেন, “আমি দুঃখিত মোনা। খবর পাওয়া গিয়েছে যে তোমার বাবা আর নেই।”
শুক্রবার রাতে কাবুলের ওয়াজির আকবর খান এলাকার এক লেবানিজ রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় তালিবান। আত্মঘাতী বিস্ফোরণের পাশাপাশি দুই জঙ্গি রেস্তোরাঁর ভিতরে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলিও চালায়। এই ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে পাঁচ মহিলা-সহ ২১ জনের। আহত পাঁচ জন। সাম্প্রতিক অতীতে কাবুলে এত বড় হামলা চালায়নি তালিবান। আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই বিদেশি। পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে দুই জঙ্গির। ‘ট্যাভেরনা দু লেবান’ নামে ওই রেস্তোরাঁর মালিক কামাল হামাদেরও প্রাণ গিয়েছে এই হামলায়। মোনা হামাদে কামালেরই কন্যা।
কী হয়েছিল কাল রাতে? সন্ধের পর থেকেই বিদেশি অতিথিদের ভিড় লেগে থাকত কাবুলের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তার এই নির্দিষ্ট রেস্তোরাঁটিতে। রেস্তোরাঁরই এক রাঁধুনি বললেন, “তখন বেশ ভিড়। বাইরের গেটে হঠাৎ বিকট আওয়াজ। এক আত্মঘাতী তালিবান নিজেকে উড়িয়ে দিয়েছে তত ক্ষণে। তার পর পরই ভিতরে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে দুই জঙ্গি। আমার চোখের সামনে লুটিয়ে পড়ল আমারই এক সহকর্মী। আমি কোনও মতে নিজেকে বাঁচিয়ে ছাদে উঠি। একের পর এক প্রচুর বিদেশি অতিথির রক্তাক্ত দেহ তখন লুটিয়ে পড়ছে মাটিতে।”
আফগান পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ব্রিটেন, আমেরিকা, লেবানন, কানাডা, রাশিয়া, ডেনমার্কের বাসিন্দা রয়েছেন। নিহতদের তালিকায় রয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের চার কর্মী ও আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের এক প্রতিনিধির নামও। তালিবানি হামলার আজ কড়া সমালোচনা করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান কি মুন। তাঁর কথায়, “সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে আক্রমণ, মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে হানাহানি বন্ধ হওয়া উচিত।”
পুলিশ জানিয়েছে, এর আগেও কামালের ওই রেস্তোরাঁয় আক্রমণ হয়েছিল। তার পর থেকেই রেস্তোরাঁর গেটে কড়া পাহারা থাকত। নিজের সঙ্গে সব সময় আগ্নেয়াস্ত্রও রাখতেন কামাল। কিন্তু কাল রীতিমতো প্রস্তুত হয়ে এসেছিল জঙ্গিরা। তাদের সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষণ লড়েওছিলেন কামাল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
কেন এই রকম আক্রমণের রাস্তায় হাঁটল তালিবান? ঘটনার দায় স্বীকার করে কাল রাতেই এক ই মেল বার্তায় তালিবান জানিয়েছে, বিদেশিদের আক্রমণের লক্ষ্যেই এই নির্দিষ্ট রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়েছে তারা। তাদের আরও বক্তব্য, পরওয়ান প্রদেশে চলতি সপ্তাহে ন্যাটো বাহিনীর আকাশ হামলায় প্রচুর সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মূলত সেই ঘটনার বদলা নিতেই কালকের হামলা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kabul taliban attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE