Advertisement
E-Paper

বিমান কি সমুদ্রেই, তল পাচ্ছে না তল্লাশি

উৎকন্ঠা আর আতঙ্কের প্রহর কাটল না এক দিন পরও। সোমবার জাভা সাগরে তল্লাশি চালিয়েও এয়ার এশিয়ার নিখোঁজ বিমান কিউজেড-৮৫০১ এর ধ্বংসাবশেষ মেলেনি। তবে বিমানটি সম্ভবত সমুদ্রের তলাতেই আছে বলে আজ জানায় ইন্দোনেশিয়া প্রশাসন। বেলিটং দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বে জাভা সাগরের বিস্তীর্ণ এলাকায় দিনভর তল্লাশি চালায় প্রায় তিরিশটি জাহাজ ও পনেরোটি নজরদারি বিমান। মাঝ খানে শোনা গিয়েছিল, ওই এলাকায় তেল ভাসতে দেখেছে ইন্দোনেশিয়ার হেলিকপ্টার। পরে অস্ট্রেলিয়ার বিমান থেকেও কিছু জিনিস ভাসতে দেখা গিয়েছে বলে খবর ছড়ায়।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:২৬
প্রার্থনা অব্যাহত। ছবি: এপি

প্রার্থনা অব্যাহত। ছবি: এপি

উৎকন্ঠা আর আতঙ্কের প্রহর কাটল না এক দিন পরও। সোমবার জাভা সাগরে তল্লাশি চালিয়েও এয়ার এশিয়ার নিখোঁজ বিমান কিউজেড-৮৫০১ এর ধ্বংসাবশেষ মেলেনি। তবে বিমানটি সম্ভবত সমুদ্রের তলাতেই আছে বলে আজ জানায় ইন্দোনেশিয়া প্রশাসন।

বেলিটং দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বে জাভা সাগরের বিস্তীর্ণ এলাকায় দিনভর তল্লাশি চালায় প্রায় তিরিশটি জাহাজ ও পনেরোটি নজরদারি বিমান। মাঝ খানে শোনা গিয়েছিল, ওই এলাকায় তেল ভাসতে দেখেছে ইন্দোনেশিয়ার হেলিকপ্টার। পরে অস্ট্রেলিয়ার বিমান থেকেও কিছু জিনিস ভাসতে দেখা গিয়েছে বলে খবর ছড়ায়। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট সেই দাবি খারিজ করে দিয়েছেন। সুরাবায়ার বিমানবন্দরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “সব সম্ভাবনাই দেখেছি। এখনও পর্যন্ত বিমানের কোনও অংশ মেলেনি।” উত্তাল সমুদ্র ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। রাতে আলোর অভাবে আজও তল্লাশি থামিয়ে দিতে হয়েছে। কাল সকালে ফের খোঁজ শুরু হবে।

রবিবার ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়া থেকে সিঙ্গাপুরেযর পথে ১৬২ যাত্রী ও কর্মী সমেত মাঝ আকাশেই উধাও হয়ে যায় এয়ার এশিয়ার এয়ারবাস ৩২০-২০০। হারিয়ে যাওয়ার আগে, আবহাওয়া খারাপ থাকায় বিমানচালক ইন্দোনেশিয়ার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে (এটিসি) গতিপথ পাল্টানোর আর্জি জানিয়ে বার্তা পাঠান। ইন্দোনেশিয়ার পরিবহণ মন্ত্রকের অফিসার জোকো মুরজাতমোদজো জানান, সে সময় বিমানটির উচ্চতা ছিল ৩২ হাজার ফুট। চালক ইরিয়ান্তো সেটিকে ৩৮ হাজার ফুট উঁচুতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ওই সময়ই ৩৪ হাজার ফুট উচ্চতায় ওখান দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল আরও এক বিমানের। তাই ইরিয়ান্তোর আবেদনে সে সময় সাড়া দিতে পারেনি এটিসি। তবে তাঁকে বিমানের মুখ সামান্য বাঁ দিকে বাঁকানোর অনুমতি দিয়েছিল এটিসি। এর ঠিক পরেই রেডার থেকে মুছে যায় এয়ারবাস ৩২০-২০০র ছবি।

ইন্দোনেশিয়ার বন্দর শহর তানজুং পানডন থেকে বোর্নিওর পন্টিয়ানকের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় এটিসির সঙ্গে শেষ বার কথা হয়েছিল বিমান চালকের। জাভা সাগরের ওই এলাকায় প্রায় ২৭০ নটিক্যাল মাইল ব্যাসার্ধ জুড়ে আপাতত চলছে তল্লাশির কাজ। গোটা কাজের ভার রয়েছে মূলত ইন্দোনেশিয়ার ন্যাশনাল সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ এজেন্সি (এনএসআরএ)-র উপর। জাভা সাগরে নজরদারি চালাচ্ছে তাদের ১২টি জাহাজ, ১০টি নৌকো এবং দু’টি কপ্টার। সে দেশের বায়ুসেনার দু’টি হারকিউলিস বিমান, একটি বোয়িং ৭৩৭ ও দু’টি পুমা এয়ারক্রাফ্ট টহল দিচ্ছে আকাশে। তল্লাশি চালাচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার নৌসেনাও। নজরদারি জাহাজ ও বিমান পাঠিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর।

এনএসআরএ-র প্রধান বামবাং সোয়েলিস্টিওর কথায়, প্রাথমিক ভাবে চারটি সেক্টরে ভাগ করে উধাও বিমানের খোঁজ চলছিল। পরে তা বাড়িয়ে সাতটি সেক্টর করা হয়েছে। তবে তাঁর আশঙ্কা, কিউজেড-৮৫০১ কে যদি শেষমেশ সমুদ্রের তলদেশেই পাওয়া যায় তা হলে তা তুলে আনতে বিস্তর সমস্যা হবে। জলের গভীরে ডুব দিয়ে বিমান তুলে আনার মতো আধুনিক প্রযুক্তি তাঁদের হাতে নেই। তবে প্রয়োজন হলে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের সাহায্য চাইতে পারেন তাঁরা।

বছরের শেষ দিকে এই সময়টা সাধারণত উত্তাল থাকে জাভা সমুদ্র। তা সত্ত্বেও এই মুহূর্তে আশা ছাড়তে রাজি নয় ইন্দোনেশিয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমএইচ-৩৭০ এর মতো হয়তো এতটাও কষ্টসাধ্য হবে না কিউজেড-৮৫০১-এর খোঁজ পাওয়া।

দশ মাস আগেই কুয়ালা লামপুর থেকে বেজিং যাওয়ার পথে ২৩৯ জন সফরকারীকে নিয়ে আকাশেই উধাও হয়ে যায় মালয়েশীয় এয়ারলাইন্সের বিমান এমএইচ-৩৭০। সাত মাস ভারত মহাসাগরে তল্লাশির পরও মেলেনি সেই বিমান। ইন্দোনেশিয়ার উদ্ধারকারীদের বক্তব্য, গত বারের সঙ্গে এ বারের তুলনা টানা মুশকিল। কারণ ব্যাপ্তিতে ভারত মহাসাগরের ধারেকাছেও নয় জাভা সাগর। ভারত মহাসাগরের কোনও কোনও অংশ প্রায় ২০ হাজার ফুটেরও বেশি গভীর। অন্য দিকে জাভা সাগর বড়জোর ১০০ থেকে ২০০ ফুট গভীর। তা ছাড়া, যেখানে বিমানটি পড়ে থাকতে পারে বলে অনুমান, সেই অংশ দিয়ে হামেশাই জাহাজ চলাচল করে। ফলে ধবংসাবশেষ ভেসে উঠলে তা নজরে আসবেই। যেখানে বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় সেই একই পথ দিয়ে যায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রচুর উড়ান। ফলে এটিসির নিয়ন্ত্রণও অনেক বেশি। এ সবই এয়ারবাস ৩২০-২০০র খোঁজ পেতে সাহায্য করবে বলে আশা করছেন উদ্ধারকারীরা।

বিপদে পড়লে বিমানের হদিস দিতে পারে এমন যন্ত্র (ইমার্জেন্সি লোকেটর ট্রান্সমিটার) থাকে সব বিমানেই। কোনও জায়গায় ভেঙে পড়লে সেখান থেকে সঙ্কেত পাঠায় বিমান। কিন্তু কিউজেড-৮৫০১ থেকে এ রকম কোনও বার্তা আসেনি। জলে ডুবে গেলে বিমানের ব্ল্যাক বক্স থেকেও মেলে শব্দ সঙ্কেত। যদিও বহু দূর থেকে ওই সঙ্কেত ধরা পড়ে না অনেক সময়ই। নিখোঁজ বিমানের ককপিট থেকে এখনও কোনও শব্দ তরঙ্গ ধরা পড়েনি। ইন্দোনেশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট জুসুফ কাল্লার কথায়, “আশা করছি, জীবিত উদ্ধার করতে পারব যাত্রীদের। তবে সব চেয়ে খারাপ খবরের জন্যই তৈরি আছি আমরা।”

প্রিয়জনের অপেক্ষায় বিমানবন্দরেই আছেন নিখোঁজ যাত্রীদের পরিজনেরা। সিঙ্গাপুরে ১২ বছরের মেয়ের কাছে ছুটি কাটাতে যাচ্ছিলেন বাবা-মা। বিমান অন্তর্ধানের খবর পেয়েই বিমানবন্দরে ছুটে এসেছেন মেয়ের ন্যানি। কাল সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি ও সুরাবায়ার জুয়ান্ডা বিমানবন্দরে খোলা হয় ক্রাইসিস সেন্টার। এ দিন জুয়ান্ডায় আত্মীয়দের সঙ্গে বিমানবন্দর কতৃর্র্পক্ষ ও এয়ার এশিয়ার অফিসারদের এক বৈঠকও হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা পরেও কোনও খবর না আসায়, পরিজনদের পাশে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ বিমান সংস্থার কাছে।

কর্তা-সুলভ আচরণের ঘেরাটোপে কখনওই বাঁধা যায়নি এয়ার এশিয়ার সিইও টনি ফার্নান্ডেজকে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সস্তা উড়ানের দৌলতেই রূপকথার উত্থান তাঁর। কর্মী থেকে যাত্রী, সকলেরই কাছের মানুষ তিনি। কালই সুরাবায়া গিয়েছেন টনি। টুইটারে লেখেন, দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি এমন কিছু হবে। বিপর্যয়েও হাল ছাড়ছেন না তিনি। আজ জানান, কী ভাবে কী ঘটেছে তা নিয়ে এখন মাথা ঘামানোর সময় নয়। আপাতত তাঁর প্রথম কাজ, বিপর্যস্ত পরিবারের পাশে থাকা।

কাল ঠিক কী হয়েছিল তা নিয়ে অবশ্য জারি জল্পনা। খারাপ আবহাওয়া যে বিমান বেপাত্তা হওয়ার কারণ, তা অনুমান করা হচ্ছিল কাল থেকেই। কারণ ঘন ঘন বজ্রপাতের কথা এটিসিতে নিজেই জানান চালক। তবে বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই মতে, বিমানের কাঠামো এতে বিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা নয়। ফলে যাত্রীরাও অক্ষতই থাকেন। বজ্রপাতের ফলে বিগড়ে যেতে পারে বিমানের দিক নির্ণয় যন্ত্রের চৌম্বক ক্ষেত্রটি। আর সে ক্ষেত্রে বিপদের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিমান পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত কারও কারও মতে, বিদ্যুৎ চমকের সঙ্গেই যদি ভীষণ ঝোড়ো হাওয়া হয়, আর বিমান কোনও ভাবে তার মধ্যে পড়ে, তা হলে সেটির মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

কিন্তু রেডার থেকে রাতারাতি মুছে যাওয়া? তা হলে কি আবহাওয়া ছাড়াও বিপর্যয়ের পিছনে অন্য কারণ ছিল? জল্পনা আর উদ্বেগ বাড়ছে। শুধু মিলছে না উত্তর।

qz 8501 indosesian plane missing java sea
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy