Advertisement
১১ মে ২০২৪

বিমানের ধ্বংসাবশেষ মিলল কি, ধোঁয়াশা অব্যাহত

দিন চারেক আগে অস্ট্রেলিয়ার এক উপগ্রহচিত্রে ধরা পড়েছিল ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ প্রান্তের এক অংশে দু’টি সাদা রঙের জিনিস ভাসছে। বৃহস্পতিবার সকালে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টোনি অ্যাবট জানালেন, সেগুলি নিখোঁজ বিমান বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআরের ধ্বংসাবশেষ হতে পারে। উপগ্রহচিত্রে যে এলাকায় সেগুলির দেখা মিলেছিল, সেখানে ও সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকায় এ দিন খোঁজ চালানো হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত কোনও কিছুই নজরে আসেনি উদ্ধারকারীদের।

সংবাদ সংস্থা
সিডনি শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৪ ০৩:৪৯
Share: Save:

দিন চারেক আগে অস্ট্রেলিয়ার এক উপগ্রহচিত্রে ধরা পড়েছিল ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ প্রান্তের এক অংশে দু’টি সাদা রঙের জিনিস ভাসছে। বৃহস্পতিবার সকালে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টোনি অ্যাবট জানালেন, সেগুলি নিখোঁজ বিমান বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআরের ধ্বংসাবশেষ হতে পারে। উপগ্রহচিত্রে যে এলাকায় সেগুলির দেখা মিলেছিল, সেখানে ও সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকায় এ দিন খোঁজ চালানো হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত কোনও কিছুই নজরে আসেনি উদ্ধারকারীদের।

এ দিন সকালে অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরার পার্লামেন্টে বিষয়টি ঘোষণা করেন টোনি। জানান, পার্থ থেকে প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে সাদা রঙের দু’টি বস্তু ভাসতে দেখা গিয়েছে। এর মধ্যে একটির আয়তন প্রায় ২৪ মিটার (৭৯ ফুট)। অন্যটির আয়তন ৫ মিটার। দু’টি বস্তু একে অপরের থেকে অন্তত ১৪ কিলোমিটার দূরে ভাসছিল বলে উপগ্রহচিত্র বিশ্লেষকদের মত। আরও জানা গিয়েছে, ১৬ মার্চ ওই এলাকার উপর দিয়ে যখন নজরদারি চালাচ্ছিল উপগ্রহটি, তখনই ওই ছবি ওঠে। সেই ছবি নানা রকম ভাবে বিশ্লেষণ করতে গিয়েই চার দিন পার হয়ে যায়। তবে বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গেই মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে ফোনে গোটা ব্যাপারটি জানিয়ে দেন টোনি।

এ দিন সকালে অস্ট্রেলীয় বায়ুসেনার একটি বিমান ওই এলাকার পৌঁছয়। হাজির হয় মার্কিন বায়ুসেনার এক বিমানও। কিন্তু বৃষ্টি এবং ঘন মেঘে দৃশ্যমানতা খুবই কম থাকায় কিছুই প্রায় ভাল করে দেখা যায়নি। তার মধ্যে যতটুকু নজরে এসেছে, তাতে অন্তত কোনও ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাননি বিমানচালকরা। শেষমেশ এ দিনের মতো তল্লাশি অভিযান স্থগিত রাখা হয়। তবে শুক্রবার ভোর থেকেই ফের ওই এলাকা তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখার জন্য আরও তিনটি বিমান পাঠাবে অস্ট্রেলিয়া। একটি বাণিজ্যিক জাহাজ এবং অস্ট্রেলীয় নৌসেনার জাহাজও সেখানে পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়া। তবে সেগুলির পৌঁছতে বেশ কিছু দিন সময় লাগবে। তা ছাড়া, ফলে তল্লাশি অভিযানের সময়সীমা যে বাড়বেই, তা মোটামুটি নিশ্চিত।

এ দিন টোনির ঘোষণার পরই অবশ্য নিখোঁজ যাত্রীদের আত্মীয়দের মধ্যে প্রবল হতাশা আর আতঙ্ক তৈরি হয়। সকলেই মোটামুটি ধরে নেন, কুমেরুর কাছাকাছি ওই তীব্র দুর্যোগপূর্ণ এলাকাতেই ভেঙে পড়েছে এমএইচ ৩৭০। সে ক্ষেত্রে ২২৯ জন যাত্রী এবং ১২ জন বিমাকর্মীদর কারও বেঁচে ফেরার সম্ভাবনাই যে নেই, তা ভেবেই হতাশ হয়ে পড়েন তাঁরা।

অস্ট্রেলীয় প্রশাসন অবশ্য প্রথম থেকেই সতর্ক করে আসছিল, উপগ্রহচিত্র দেখেই কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো উচিত নয়। কারণ, যে এলাকায় ওই ভাসমান বস্তু দু’টি দেখা গিয়েছে, সেখানে প্রায়শই ভেসেল বা বড় বড় জাহাজের থেকে পড়ে যাওয়া বস্তু ভাসতে দেখা যায়। সুতরাং এ ক্ষেত্রেও যে সে রকম কিছু হবে না, তা আগে থেকেই ধরে নেওয়ার কোনও জায়গা নেই। তা ছাড়া, সেই বস্তুদু’টি যদি আদৌ ধ্বংসাবশেষের অংশ হয়ে থাকে, তা হলেও বিমানের মূল কাঠামো এবং যাত্রী ও কর্মীদের দেহ খুঁজে বার সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সুতরাং রাতারাতি বিমানের হদিস পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা প্রথমেই খারিজ করে দেন তাঁরা।

তবে সূত্র মিলতেই পারে, সে কথা অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা। বিশেষত, বড় বস্তুটির দৈর্ঘ্য থেকে তাঁদের অনুমান, সেটি দৈত্যাকার বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআরের ধ্বংসাবশেষ হলেও হতে পারে। তা ছাড়া, যে ভাবে তার থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরেই আর একটি বস্তুকে দেখতে পাওয়া গিয়েছে, তার থেকে এই সম্ভাবনাই জোরদার হচ্ছে যে বিমানটি হয়তো টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়েছিল।

কিন্তু সেগুলি গেল কোথায়? বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, ১৬ মার্চ অর্থাৎ চার দিন আগে যে অঞ্চলে জিনিসগুলি ভাসতে দেখা গিয়েছিল, সেগুলি হয়তো স্রোতের টানে ওই অবস্থান থেকে আরও ৪০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার পশ্চিমে সরে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে তার খোঁজ মেলা যে আরও দুষ্কর হবে, তা বিলক্ষণ জানেন অস্ট্রেলিয়ার উদ্ধারকারী দলের কর্তারা। কিন্তু আপাতত এই সূত্রকেই আঁকড়ে ধরে সন্ধান চালানো হবে।

অবশ্য কাজাকস্তান এলাকাতেও দু’টি বিমান পাঠিয়েছিল মালয়েশিয়া। অর্থাৎ অনুসন্ধান যতই দক্ষিণ করিডরের দিকে কেন্দ্রীভূত হোক না কেন, উত্তর করিডরকেও তল্লাশি অভিযানের আওতার বাইরে রাখতে চান না তদন্তকারীরা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে নিখোঁজ বিমানটির পাইলট জাহারি আহমেদ শাহের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া সিমুলেটরটি নিয়েও। সিমুলেটরের কম্পিউটার থেকে যে তথ্যগুলি উধাও বলে কাল জানিয়েছিল এফবিআই, সেগুলি পুনরুদ্ধারেরও চেষ্টা চলছে। কিন্তু মুছে দেওয়া তথ্যগুলি ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্যে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল কি না, তা নিয়ে ধন্দে এফবিআই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

missing plane malayasian airlines
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE