Advertisement
E-Paper

বিয়ে না করার আক্ষেপ নেই লিয়াংদের

ছোটবেলায় চুলে বিনুনি বাঁধার শখ ছিল। কিন্তু মা কিছুতেই সেটা করতে দিতেন না। উল্টে তাঁর চুলগুলো খুলে ফেলে একটা কাঁটা দিয়ে খোঁপা করে দিতেন। বড় মেয়ে অত সাজগোজ করুক, সেটা মা কখনওই চাইতেন না। কারণ, তার বয়সি আর পাঁচটা মেয়ে যখন লাল পোশাক পরে কনের সাজে সেজে বরের হাত ধরে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে, তিনি তখন আজীবন কৌমার্য পালনের শপথ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নিচ্ছেন সদ্য শৈশব পেরোনো কিশোরী লিয়াং জিয়েউন।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৪ ০১:৩০

ছোটবেলায় চুলে বিনুনি বাঁধার শখ ছিল। কিন্তু মা কিছুতেই সেটা করতে দিতেন না। উল্টে তাঁর চুলগুলো খুলে ফেলে একটা কাঁটা দিয়ে খোঁপা করে দিতেন। বড় মেয়ে অত সাজগোজ করুক, সেটা মা কখনওই চাইতেন না। কারণ, তার বয়সি আর পাঁচটা মেয়ে যখন লাল পোশাক পরে কনের সাজে সেজে বরের হাত ধরে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে, তিনি তখন আজীবন কৌমার্য পালনের শপথ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নিচ্ছেন সদ্য শৈশব পেরোনো কিশোরী লিয়াং জিয়েউন।

বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় দক্ষিণ চিনের গুয়াংডং প্রদেশে তখন চালু ছিল ‘জিশুনু’ নামের এক অভিনব প্রথা। মেয়েদের চিরকাল কৌমার্য পালন করার রীতি। আত্মমর্যাদার সঙ্গে নিজের গোটা জীবনটা কাটানোর সুযোগ যেমন মিলত বটে। সেই সঙ্গে কাঁধে আসত সংসারের সমস্ত দায়-দায়িত্ব পালন করার শর্ত। কেউ যদি কখনও কোনও পুরুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতেন, আত্মঘাতী হতে হত তাঁদের।

গরিব পরিবারের অল্প শিক্ষিত মেয়ে লিয়াং জিয়েউন। বাড়ির বড় মেয়ে হিসেবে খুব স্বাভাবিক ভাবেই ‘জিশুনু’ প্রথাকে আপন করে নিয়েছিলেন তিনি। আর সেই রীতি মেনেই চিরকুমারী থেকেছেন। শুধু বিয়ে না করাই তো নয়। সন্তানধারণ এমনকী কোনও পুরুষসঙ্গীর সংস্পর্শে আসার থেকেও শত হাত দূরে থেকেছেন তিনি।

সেই লিয়াং এখন ৮৫ বছরের বৃদ্ধা। শুন্ডে প্রদেশের শাতো গ্রামে ‘দ্য হল অব আইস অ্যান্ড জেড’ নামে এক বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা। সঙ্গী বলতে নব্বই বছরের হুয়াং লিয়ে। এঁরা দু’জনেই এখন এই প্রথার শেষ জীবিত দুই নারী।

অভিধান মেনে ‘জিশুনু’ শব্দের অর্থ হল নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম নারী। কিন্তু শুধু নারী স্বাধীনতাই তো নয়। সংসার ধর্ম পালন না করেও গোটা সংসারের দায়িত্ব পালন করে যেতে হত এই প্রথা পালনকারী প্রতিটি চিনা মেয়েকে। শেষ বয়সে এসে এঁদেরই সম্বল হত সরকারি বৃদ্ধাশ্রম বা কোনও দত্তক সন্তানের আশ্রয়।

এই রকমই এক বৃদ্ধাশ্রমে বসে নিজের অতীত সম্পর্কে অনেক কথা বলেছেন লিয়াং। জানিয়েছেন, এই প্রথা মেনে নিয়েছিলেন বলেই বাড়ির মালিকের সঙ্গে তাঁর জোর করে বিয়ে দিতে হয়নি বাবা-মাকে। উল্টে সংসার চালানোর জন্য যে অর্থের প্রয়োজন ছিল, তা-ও হাতে আসত সহজে। বিবাহিত মহিলারা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে চাকরি ছেড়ে চলে যাবে, এই ভয়ে কারখানা মালিকেরাও লিয়াংয়ের মতো মেয়েদেরই চাকরি দিতে রাজি হতেন। তাই সংসার চালানোর জন্য চাকরির অভাব সে ভাবে হয়নি কোনও দিন। উল্টে তাঁর অর্থেই বাকি ভাই-বোনদের পড়াশোনা আর বিয়ের ব্যবস্থা হয়েছে।

কিন্তু নিজের পরিবার, স্বামী, সন্তান। কোনও দিন আক্ষেপ হয়নি এ সবের জন্য? “স্বামী মানে তো আফিম খেয়ে নেশা করা। আর শ্বশুরবাড়ি মানেই মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম আর নিজের ছেলে-মেয়েদের বড় করার গুরু ভার। সে দিক থেকে তো আমি সব দায় থেকে মুক্ত ছিলাম,”বলেছেন লিয়াং।

কিন্তু সেই তো দিনের পর দিন অর্থ রোজগারের জন্য পরিশ্রম করতে হয়েছে? স্বামীর ঘর করা আর শ্বশুর-শাশুড়ির অত্যচারের থেকে নিজের ভাই-বোনের জন্য প্রাণপাত করাটা অনেক শ্রেয় বলে মনে করেন লিয়াং। তাই নিজের এই জীবনের জন্য কোনও আক্ষেপ নেই তাঁর। লাজুক মুখে বৃদ্ধা লিয়াং অবশ্য স্বীকার করেছেন, বিয়ে আর প্রেমের বহু প্রস্তাব পেয়েছেন এক সময়। তবে সে সবে আমল দেওয়ার মতো সময় ছিল না তাঁর।

লিয়াংয়ের সঙ্গী হুয়াং লিয়ের অভিজ্ঞতাটাও খানিকটা একই রকম। পার্ল নদীর ব-দ্বীপ অঞ্চলে ছিল তাঁদের বাড়ি। পরিবারের বড় মেয়ের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আজীবন কুমারী থেকেছেন। “একবার যখন ওয়াল স্ট্রিটে ধস নামল, তখন গোটা রেশম শিল্প ভেঙে পড়ল। সে বার তো সিঙ্গাপুরে গিয়েও কারখানায় কাজ করেছি,” বললেন হুয়াং। লিয়াং আর হুয়াং ব্যতিক্রম নন। ঠিক তাঁদের মতো বহু চিনা মেয়ে এই ভাবেই বছরের পর বছর বাড়ির বড় ছেলের দায়িত্ব সামলে এসেছেন। কিন্তু কমিউনিস্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এই ছবিটা বদলাতে থাকে। দেশের বিবাহ আইন পরিবর্তিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাজে মেয়েদের স্থান পাল্টে যায়। আর ‘জিশুনু’ প্রথাও ধীরে ধীরে অবলুপ্তির দিকে এগোতে থাকে।

লিয়াংরা কিন্তু থেকে যান। সারা জীবন পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে একা ‘দ্য হল অব আইস অ্যান্ড জেড’-এর মতো কোনও বৃদ্ধাশ্রমে।

jisahnu beijing liang jieun
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy