ভুটানের রাজার সঙ্গে মোদী। পিছনে রয়েছেন রানিও। ছবি: পিটিআই
একটি ভুল। একটি প্রথা ভাঙা। আর সেই দু’টি মিলেই স্মরণীয় হয়ে রইল নরেন্দ্র মোদীর ভুটান সফরের শেষ দিন। যার সাক্ষী থাকল টুইটারে অফুরন্ত হাস্যরস আর ব্যঙ্গের প্রবাহ।
আজ ভুটানি পার্লামেন্টের দুই কক্ষের যৌথ অধিবেশনে বক্তৃতা দেন প্রধানমন্ত্রী। বক্তৃতায় ভুটানের রাজ পরিবারকে নেপালের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে হোঁচট খেয়েছেন তিনি। আর বক্তৃতার শেষে প্রথা ভেঙে হাততালি শোনা গিয়েছে ভুটানি পার্লামেন্টে।
আনন্দে, প্রশংসায় হাততালি দেওয়াটা ভুটানে রীতিসম্মত নয়। কেবল দুষ্ট আত্মাকে তাড়াতে হাততালি দেন সে দেশের বাসিন্দারা। মোদীর বক্তৃতার শেষেও যে হাততালি দেওয়া হবে না তা থিম্পুর মিডিয়া সেন্টারে রীতিমতো নোটিস দিয়ে জানিয়েছিল ভুটান সরকার। মোদীর বক্তৃতার শেষে অবশ্য পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের সদস্য থেকে প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে, হাততালিতে পিছিয়ে থাকেননি কেউই। স্বাভাবিক ভাবেই বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিন টুইটারে জানিয়েছেন, “প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার পরে হাততালি....আবেগের কী স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ’!”
কিন্তু নেপাল-ভুটান গুলিয়ে ফেলে টুইটারে হাসিঠাট্টার বান ডাকিয়ে দিয়েছেন মোদী। নেপাল থুড়ি ভুটানে মোদীর সফর ভালই হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ। কারও কটাক্ষ, মোদীরূপী দুষ্ট আত্মাকে তাড়াতেই ভুটানিরা হাততালি দিয়েছেন।
কূটনৈতিক সূত্র অবশ্য বলছে, ভুটান সফরে কাজও হয়েছে বিস্তর। যার প্রতিফলন হয়েছে যৌথ বিবৃতিতে। জলবিদ্যুৎ উৎপাদন-সহ অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে ভুটানের সঙ্গে সহযোগিতা থেকে যে ভারত সরছে না সে কথা স্পষ্ট জানিয়েছেন মোদী। দু’দেশের যৌথ উদ্যোগে তৈরি খোলোংচু জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। দু’দেশ হাত মিলিয়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায় বলে যৌথ বিবৃতিতে প্রকাশ।
ভারত-ভুটান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়েও আলোচনা করেছেন মোদী ও ভুটানি নেতৃত্ব। গুঁড়ো দুধ, গম, ভোজ্য তেল, ডালের মতো পণ্য ভুটানে রফতানির উপরে কোনও বাধানিষেধ আরোপ করা হবে না বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লি। ভুটান সুপ্রিম কোর্টের ভবন তৈরিতে সাহায্য করেছিল ভারত। সম্প্রতি সে কাজ শেষ হয়েছে। তাতে খুশি দু’পক্ষই। সম্পর্ক জোরদার করতে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির সঙ্গে ভুটানের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার কথা বলেছে ভারত। বলা হয়েছে যৌথ উদ্যোগে হিমালয় গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরির কথাও।
পরিবর্তে ভারত-বিরোধী শক্তিকে ভুটানের মাটি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে সে দেশের সরকার। দীর্ঘ দিন ধরেই ভুটানে ঘাঁটি গাড়তে আগ্রহী উত্তর-পূর্ব ভারতে সক্রিয় নানা জঙ্গি সংগঠন। তাই এই বিষয়ে থিম্পু ও ভুটান সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয় নয়াদিল্লি। দু’দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্কও গভীর। ভুটান সেনার প্রশিক্ষণের জন্য সে দেশে ভারতের বিশেষ মিশন রয়েছে।
অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে জঙ্গি দমনের বিষয়ে ভারতকে বিশেষ ভাবে সাহায্য করেছিল থিম্পু। ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ভুটানে জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে ‘অপারেশন অল ক্লিয়ার’ শুরু করে ভুটান সেনা। মোট ৩০টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে দেয় তারা। ধৃত বহু জঙ্গিকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়। অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলের সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি মোদী জমানায় হতে পারে বলে সরকারি সূত্রে খবর। ভুটান সফরের আগে সেনাপ্রধান বিক্রম সিংহের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন মোদী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। থিম্পুতে রাজা জিগমে খেসর নামগিয়েল ওয়াংচুক-সহ ভুটানি শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন তাঁরা।
মনমোহন সিংহ জমানায় কিছুটা হলেও চিড় ধরেছিল ভারত-ভুটান সম্পর্কে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নয়াদিল্লি ভর্তুকি তুলে নেওয়ায় বিপাকে পড়েছিল থিম্পু। ফলে, গুরুত্বের বিচারে ভুটানকে এগিয়ে রেখে মোদী সরকার কূটনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
আপাতত ভুটানে খুশির হাওয়া বইবে বলে আশা সাউথ ব্লকের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy