Advertisement
E-Paper

মাস্টারদার শহর চট্টগ্রামের দুর্গাপুজো

আকাশের ভ্রুকূটি ঘুম কেড়েছে মাস্টারদার শহর চট্টগ্রামের। নিম্নচাপ কতটা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তার আন্দাজে ব্যস্ত সেখানকার উদ্যোক্তারা। ফেসবুকে ওঁরা তাই ভাসিয়ে দিয়েছেন একটি সুন্দর বাচ্চা মেয়ের ছবি। হাঁটু গেড়ে দু’হাত জোড় করে বলছে, ‘‘ঠাকুর, পুজোতে যেন বৃষ্টি না হয়।’’ হাতের ফাঁকে উঁকি মারছে ছোট্ট ভালুকছানা।

অশোক সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৫ ১৯:৪৯
ফেসবুক তেকে নেওয়া ছবি।

ফেসবুক তেকে নেওয়া ছবি।

আকাশের ভ্রুকূটি ঘুম কেড়েছে মাস্টারদার শহর চট্টগ্রামের। নিম্নচাপ কতটা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তার আন্দাজে ব্যস্ত সেখানকার উদ্যোক্তারা। ফেসবুকে ওঁরা তাই ভাসিয়ে দিয়েছেন একটি সুন্দর বাচ্চা মেয়ের ছবি। হাঁটু গেড়ে দু’হাত জোড় করে বলছে, ‘‘ঠাকুর, পুজোতে যেন বৃষ্টি না হয়।’’ হাতের ফাঁকে উঁকি মারছে ছোট্ট ভালুকছানা।

কেবলই মনকাড়া ছবি নয়। বড় বড় করে বর চাওয়া হয়েছে ফেসবুকে। তাতে লেখা— ‘‘মা আসছেন এ বার ঘোটকে। তার মানে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা। তাই সবার প্রার্থনা হোক একটাই— হে ঠাকুর, এ বার যেন পুজোতে বৃষ্টি না হয়।’’

আশঙ্কা চট্টগ্রামের কুমোরটুলিতেও। সপরিবারে দেবী দুর্গা, তাঁর পরিবারের সদস্যবৃন্দ আর অসুর ও তার বাহনের মূর্তিতে তুলির শেষ টানে ব্যস্ত শিল্পীরা। শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততায় অসুর হল বৃষ্টির আশঙ্কা। প্রতিমা তৈরির জন্য কলকাতার মতো কেন্দ্রীভূত এবং বড় মাপের কুমোরটুলি চট্টগ্রামে নেই। কিন্তু, গোয়ালপাড়া, দেওয়ানজির পুকুরপাড়, সদরঘাট, হাজারি লেন, চকবাজার তৈরি হয়েছে একগুচ্ছ শিল্পীমহল্লা। এই সব জায়গাতেও মূল শিল্পী ও তাঁদের সহকারীরা মূলত পাল বংশের।

চট্টগ্রামের পুজোর উদ্যোক্তারা ওয়েবসাইট ও ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ওঁদের হরেক পরিকল্পনার কথা। আর, তাতেই জানা গেল, ওখানেও লেগেছে আধুনিকতার হাওয়া। বাড়ছে থিমের ঠাকুর।

রাজাপুর লেন, টেরিবাজার আফিম গলি আর একতা গোষ্ঠীর থিমের ঠাকুর তৈরি করছেন উত্তম পাল। গৌতম পাল করছেন হাজারি লেনের ঠাকুর। দক্ষিণ নলপাড়া, খলিফাপট্টি আর হালিশহর দেবেন্দ্র মাস্টারের বাড়ির থিমের ঠাকুরের শিল্পীরা হলেন সুভাষ পাল, গোবিন্দ পাল ও গোপাল পাল। এই তালিকায় আছে আগ্রাবাদ গোসাইডাঙা বারোয়ারি পুজো-ও। এখানকার শিল্পী বিশ্বজিৎ পাল। ওঁদের মতে, প্রতি বছরেই এক-আধটা করে পুজোর উদ্যোক্তা থিমের পুজোর দিকে ঝুঁকছেন।

গত বছর টেরিবাজার আফিমগলির থিম ছিল ‘বৃক্ষরূপিনী দেবী’। এ বারেও কোমর বেঁধে নেমেছে অন্য বড় পুজোগুলিকে টেক্কা দিতে। ঈষাণ মহাজন রোডের রক্ষাকালি মন্দির এ বার পুজোর থিম করেছে ‘গাছ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’। ভাবনা ও পরিচালনায় ‘শিল্পলোক পুজো ইভেন্টস’। অভয় মিত্র ঘাটের নিত্যানন্দ ধামে এবার হচ্ছে প্রথম থিমপুজো। শিল্পী সৌরদীপ খাস্তগীর।

গত তিন বছর একতা গোষ্ঠীর পুজো পর পর তিন বার পেয়েছে শ্রেষ্ঠ মণ্ডপের শিরোপা। এ বছর ওঁদের থিম পদ্ম সরোবরে দেবী বন্দনা। শ্রী শ্রী করুণাময়ী কালিবাড়ির এ বারের থিম ‘পারিজাত। শিল্পী তাপস পাল। মুরাদপুরের কাছে পিলখানার পুজো প্রতি বারই লোক টানে। এ বার তাদের থিম ‘নবদুর্গায় মহিষাষুর বধ’। রয়েছে আলাদা ফেসবুক— www.facebook.com/pilkhana.puja

শৈলপুত্রি, সিদ্ধিধাত্রী, মহাগৌড়ি, কালরাত্রি, কাত্যায়নী, স্কন্দমাতা, কাশমান্ড, চন্দ্রঘন্টা, ব্রহ্মচারিণী— গোল, ছোট ছবি দিয়ে পুজোর প্রচার করেছে পিলখানা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ।

পুজোর ব্যস্ততা চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার মধ্যম কাঞ্চনায়, বিশ্বাসবাড়ি দুর্গামন্দিরে। এটির আয়োজক সাপলা সঙ্ঘ এবং পাওয়ার অ্যাসোসিয়েশন। রামকৃষ্ণ মিশন, চট্টেশ্বরী কালিবাড়ি, সদরঘাট কালীবাড়ি— কেবলই কি ধর্মস্থান? গোসাইলডাঙা চৌধুরীবাড়ি, দক্ষিণ মধ্যম হালিশহরের মিতালি সঙ্ঘ, এক নম্বর সাইড হিন্দুপাড়া, দেওয়ালি পুকুর পাড়, পাথরঘাটা— উদ্দিপনা সর্বত্র!

‘দুর্গাপুজো অব বাংলাদেশ’ ওদের সাইটে জানিয়েছে মা দুর্গাকে দেবতাদের কে, কোন অস্ত্র দিয়েছেন। যেমন চক্র দিয়েছেন বিষ্ণু, বজ্র ইন্দ্র, শক্তি অগ্নি, শঙ্খ দিয়েছেন বরুণ— বেশ বড় তালিকা।

৮৫ বছর আগে, ১৮৩০-এর ১৮ এপ্রিল অস্ত্রাগার লুন্ঠনের যে অধ্যায় চট্টগ্রামে তৈরি করেছিলেন সূর্য সেন ও তাঁর সঙ্গীরা, এ শহরের বর্তমান প্রজন্মের কাছে তা নিছকই ইতিহাস। কিন্তু ধর্মের ঊর্ধে উঠে ওঁরা সকলে এই মুহূর্তে মাতোয়ারা দুর্গাপুজো নিয়ে।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy