Advertisement
E-Paper

সবুজ স্বর্গ এখন ছাইয়ের গাদা

বিসান বিনোদন উদ্যান। উত্তর গাজার সব চেয়ে বড় চিড়িয়াখানা। আট থেকে আশি, সকলের সব চেয়ে প্রিয়। বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন আসা মানেই দল বেঁধে শপিং মল কিংবা মাল্টিপ্লেক্স নয়, গন্তব্য ওই চিড়িয়াখানা। সোহাগের ডাকনাম ‘সবুজ স্বর্গ’-ও ওদেরই দেওয়া।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৪ ০৩:০৪
ইজরায়েলি হামলায় ধ্বংস গাজার এক চিড়িয়াখানা। ছবি: এ এফ পি।

ইজরায়েলি হামলায় ধ্বংস গাজার এক চিড়িয়াখানা। ছবি: এ এফ পি।

বিসান বিনোদন উদ্যান। উত্তর গাজার সব চেয়ে বড় চিড়িয়াখানা। আট থেকে আশি, সকলের সব চেয়ে প্রিয়। বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন আসা মানেই দল বেঁধে শপিং মল কিংবা মাল্টিপ্লেক্স নয়, গন্তব্য ওই চিড়িয়াখানা। সোহাগের ডাকনাম ‘সবুজ স্বর্গ’-ও ওদেরই দেওয়া। ২০০৮ সালে হামাস সরকার ‘ভিলেজ ট্যুরিজম’ প্রকল্পের অংশ হিসেবেই এই উদ্যানটি তৈরি করেছিল। এখন অবশ্য স্বর্গে শুধুই শ্মশানের স্তব্ধতা। ইজরায়েলি হামলায় কোনও রকমে রয়ে গিয়েছে মূল ফটকখানি, যাতে বড় বড় করে লেখা শুধু উদ্যানের নাম। বাকি সব ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন। বেশির ভাগটাই ছাই হয়ে মিশে গিয়েছে মাটিতে। নিহত পশু-পাখির রক্তও শুকিয়ে গাঢ় খয়েরি।

ইজরায়েলের এফ-১৬ ফাইটার জেট থেকে অন্তত আটটি ক্ষেপণাস্ত্র এখানে ছোড়া হয়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। কুমীর, সিংহ, উটপাখি, বাঁদর মিলিয়ে ১০০টিরও বেশি প্রাণি ছিল এই চিড়িয়াখানায়। এখন বেঁচে মাত্র ১০টি। তবে বেশির ভাগই হয় অসুস্থ-আহত, না হয় ধুঁকছে না খেতে পেয়ে। কোনও মতে রক্ষা পেয়েছে তিনটে সিংহও। আয়ত্তের মধ্যেই পড়ে রয়েছে একটা মরা ময়ূর। ক্ষুধার্ত তিনটি সিংহই, তবু যেন খাবারে অরুচি। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, যারা বেঁচে আছে, আসলে প্রত্যেকেই ভয়ে সিঁটিয়ে। খাঁচা থেকে বেরোতেই চাইছে না কেউ। অপরিচ্ছন্ন জায়গায় দিনের পর দিন থাকতে থাকতেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে সব। অর্থের অভাবে মিলছে না চিকিৎসা, জুটছে না খাবারও।

সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে বিসানের অধিকর্তা সাদি হামাদ জানিয়েছেন, ইজরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রে চিড়িয়াখানার যা পরিণতি হয়েছে, তাতে শুধু খাঁচা ইত্যাদি পরিকাঠামো তৈরিতেই অন্তত ১ লক্ষ ডলারের ধাক্কা। নতুন করে জীবজন্তু এনে চিড়িয়াখানা ভরানোর খরচ আবার আলাদা। স্থানীয় সূত্রের দাবি, এখানকার বেশির ভাগ জীবজন্তুই আনা হয়েছিল চোরাগোপ্তা পথে, মিশর সীমান্তের সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে। আইডিএফ যে হেতু ইতিমধ্যেই গাজার বেশির ভাগ সুড়ঙ্গ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংস করেছে, তাই ভবিষ্যতের চিন্তায় মাথায় হাত সাদি হামাদের। একই রকম ধ্বংসের চেহারা চিড়িয়াখানা সংলগ্ন কৃষিজমি, সুইমিং পুল, ক্যাফেটেরিয়ারও।

রেহাই পায়নি দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরের ‘সাদার্ন উড্স’ চিড়িয়াখানাও। এক কর্তার কথায়, চিড়িয়াখানাটি তৈরি করতে প্রথমেই খরচ হয়েছিল ১০ লক্ষ ডলার। তিনটি বাঘ আর দু’টি সিংহ আনতে লেগেছিল প্রায় ১ লক্ষ ডলার। এক মাসের মধ্যেই সব শেষ। অর্ধেকেরও বেশি পশু-পাখি মারা গিয়েছে এখানেও।

ম্যানেজার জিয়াদ ওয়েদিয়ার তাই প্রশ্ন, “ইজরায়েল আসলে কী চাইছে, নিজেরাই জানে না। চিড়িয়াখানার নিরীহ পশু-পাখিরা ওদের কী ক্ষতি করেছিল বলুন তো?”

মরছে মানুষ। অকাতরে মরছে চিড়িয়াখানা-সহ ঘর-গেরস্থালির পশুপাখিও। মাথায় হাত পড়েছে গাজার বাসিন্দা মাহমুদ নাদি-রও। বেইত হানাউনে পরিবার সূত্রে পাওয়া একটি বিশাল খেত-খামারের উপর ছিল যাবতীয় অবলম্বন। ইজরায়েলি সেনা হামলায় সব শেষ। নাদি-র দাবি, ৩৭০টি গরু মারা গিয়েছে তাঁর। যে ক’টি বেঁচে আছে, তারাও আজকাল ভয়ে দুধ দেয় না। অবিকল ভাগাড়ের পরিবেশ। প্রাণ বাঁচাতে ভিটেমাটি ছেড়ে পুরো পরিবার আজ জাবেলিয়ায় ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছে।

ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন জাইদ হামাদের পরিবারও। উটের ব্যবসা তাঁর। কুড়িটা উট ছিল। এক-একটার দাম প্রায় তিন হাজার ডলার। সেনা হামলায় খতম সব। মাঝখানে এক বার ঘুরে গিয়েছেন নিজের ভিটেমাটি। মাটিতে পড়ে থাকা বুলেটবিদ্ধ উটের সারি দেখে আর চোখের জল আটকাতে পারলেন না বাহাত্তর বছরের বৃদ্ধ। “আমার পরিবারে মোট সতেরোটা লোক। উটগুলোই ভরসা ছিল। এখন কী ভাবে চলবে বলুন তো?” তাঁর এই প্রশ্নের আপাতত উত্তর নেই।

Gaza Palestine Israeli
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy