Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

উৎসবের ভোটে হিংসার বলি ১৭

এক দিকে বুথগুলিতে উৎসবের মেজাজে ভোটারদের ভিড়, অন্য দিকে বিরোধীদের ‘রিগিং রিগিং’ নালিশ। যে সব প্রার্থীকে এক দিনও প্রচারে বার হতে দেখা যায়নি, তাদের অনেকে শীতের সকালের কুয়াশা কেটে রোদ ওঠার পরে সাংবাদিক ডেকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা করলেন।

ভিড়: শীতের সকালে রাজশাহির নওহাটা হাইস্কুলে মহিলা ভোটারদের সারি। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

ভিড়: শীতের সকালে রাজশাহির নওহাটা হাইস্কুলে মহিলা ভোটারদের সারি। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
ঢাকা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৩৪
Share: Save:

এক দিকে বুথগুলিতে উৎসবের মেজাজে ভোটারদের ভিড়, অন্য দিকে বিরোধীদের ‘রিগিং রিগিং’ নালিশ। যে সব প্রার্থীকে এক দিনও প্রচারে বার হতে দেখা যায়নি, তাদের অনেকে শীতের সকালের কুয়াশা কেটে রোদ ওঠার পরে সাংবাদিক ডেকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা করলেন। তত ক্ষণে এক একটি বুথের অর্ধেক ভোটার তাঁদের ভোট দিয়ে আঙুলে কালি মেখে ফেলেছেন। মাঝে মাঝে উড়ে এসেছে বিক্ষিপ্ত গোলমালের খবর, অবাঞ্ছিত মৃত্যুসংবাদ। সব মিলিয়ে এই ভাবেই কাটল ঢাকার রোববার, আরও একটি ভোটের দিন।

নাশকতার মোকাবিলায় শনিবার ভোটের আগের দিন থেকেই গোটা দেশ ছিল নিরাপত্তার চাদরে মোড়া। রাস্তায় গাড়ি বন্ধ, নদীতে স্টিমার। বন্ধ পেট্রল পাম্প, মোবাইল ইন্টারনেটও। তবে রাত থেকেই কখনও চট্টগ্রামে তো কখনও নোয়াখালি বা রাজশাহি থেকে আসতে থাকে গণ্ডগোলের খবর। সবগুলি জায়গাতেই বিএনপি ও তাদের শরিক জামাতে ইসলামির কর্মীরা ভোটকেন্দ্রে হামলা চালিয়ে নির্বাচন কর্মীদের মারধর করে ব্যালট বাক্স ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেড়ে নিয়ে গিয়েছে। চট্টগ্রামের পটিয়ায় খুন হলেন আওয়ামি লিগের এক কর্মী।

তবে রবিবার রাতে রিটার্নিং অফিসারদের রিপোর্ট খতিয়ে দেখে ২২টি বুথের নির্বাচন বাতিল করেছে কমিশন। শনিবার রাত থেকে ভোটের দিনের রাত পর্যন্ত সংঘর্ষে মারা গিয়েছেন ১৭ জন। এঁদের মধ্যে শাসক দলের কর্মী বেশি। রয়েছেন পথচলতি মানুষও। নির্বাচন শেষ হওয়ার আগেই সরে দাঁড়িয়েছেন জামাতের ২৫ জন প্রার্থী-সহ মোট ৫৮ জন। এঁদের এক জন বগুড়া-৪ আসনের নির্দল প্রার্থী ভিডিয়ো ছবির অভিনেতা হিরো আলম।

রবিবার সকালে বেশ ঠান্ডা। আটটায় ভোট শুরুর অনেক আগে থেকেই রাজধানী ঢাকার বুথে বুথে উৎসাহী মানুষের ভিড়। নিরাপত্তা রক্ষীরা তাঁদের লাইনে দাঁড় করিয়ে ভোট নিচ্ছেন। বেলি রোডে ভিকারুন্নেসা নুন স্কুলের সামনে পৌঁছতে ভেতর থেকে লাফাতে লাফাতে দৌড়ে এলেন এক কিশোর। পকেট থেকে মোবাইল ফোন বার করে নিতে শুরু করলেন একের পর এক নিজস্বী। মুখের সামনে ধরা তর্জনী, যাতে সদ্য ছাপ পড়েছে বেগুনি কালির। তার পরে শূন্যে মুঠি ছুড়ে গলা চড়িয়ে বললেন, ‘‘জয় বাংলা!’’ নাম বললেন পাভেল, জানালেন— এ তাঁর প্রথম ভোট দেওয়ার উদযাপন!

সংবাদ চ্যানেলগুলিতে একই ছবি বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, উত্তরের সিলেট-রংপুর, পশ্চিমে পদ্মাতীরের রাজশাহি থেকে দক্ষিণের খুলনায়। ঠাকুরগাঁওয়ে ৬ ডিগ্রির ঠান্ডাকে হারিয়ে দিয়েছে মানুষের ভোট দেওয়ার উৎসাহ। তার মধ্যেই একের পর এক বিরোধী দল অভিযোগ করতে শুরু করে, প্রশাসনকে ব্যবহার করে ব্যাপক রিগিং করছে সরকারি দল। তাদের সমর্থক-কর্মী হিসেবে যাঁরা পরিচিত, তাঁদের কেন্দ্রের ধারেকাছে ঘেঁষতে দেওয়া হচ্ছে না। বাম-জোট সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বলল, নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনে সরকারি দলকে জেতানোর নাটক হচ্ছে। বিএনপির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভি অভিযোগ করলেন, ঢাকা ও অন্যান্য জায়গায় তাদের এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। সেই সুযোগে ঢালাও জাল ভোট দিচ্ছে আওয়ামি লিগের কর্মীরা। পুলিশ দেখেও দেখছে না। নির্বাচন কমিশনও হাত গুটিয়ে বসে।

সব শুনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বললেন, ‘‘কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া গণ্ডগোল কোথায়? যারা অভিযোগ করছে, খোঁজ নিয়ে দেখেছি— তাদের কোনও এজেন্টকে ডেকে ডেকেও পাওয়া যায়নি। তারা না এলে আমরা কী করতে পারি?’’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল একের পর এক ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখে বললেন, ‘‘মানুষ উৎসবের মেজাজে ভোট দিচ্ছেন। কোথাও কোনও অভিযোগ শুনতে হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh Election 2018 Dhaka Clash
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE