Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাই, পণবন্দি পাইলটের উপস্থিত বুদ্ধি বাঁচিয়ে দিল যাত্রীদের 

বাংলাদেশের সরকারি বিমান সংস্থা ‘বিমান’-এর বিডি-১৪৭ উড়ানটি চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। বোয়িং-৭৩৭ বিমানটি স্থানীয় সময় বিকেল ৪টেয় ছাড়ার মিনিট পনেরো পরে এক যাত্রী ককপিটে ঢুকে পাইলটের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলে, বিমানটি ছিনতাই করা হয়েছে।

উদ্ধার: ছিনতাই হওয়া বিমানে কম্যান্ডোদের অভিযান। রবিবার রাতে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে। নিজস্ব চিত্র

উদ্ধার: ছিনতাই হওয়া বিমানে কম্যান্ডোদের অভিযান। রবিবার রাতে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাকা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫০
Share: Save:

ঢাকা থেকে দুবাইগামী বিমান ছিনতাই ঘিরে ভরসন্ধ্যায় নাটক চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ১৩৪ জন যাত্রী ও ১৪ জন বিমানকর্মীকে আগেই নিরাপদে নামিয়ে আনা হয়। তার পরে প্যারা কম্যান্ডোরা অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারীকে গুলিতে আহত করে পাকড়াও করে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই সে মারা যায়। তার কাছ থেকে একটি পিস্তল মিলেছে। যদিও রাতে পুলিশ জানায়, সেটি খেলনা বন্দুক।

বাংলাদেশের সরকারি বিমান সংস্থা ‘বিমান’-এর বিডি-১৪৭ উড়ানটি চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। বোয়িং-৭৩৭ বিমানটি স্থানীয় সময় বিকেল ৪টেয় ছাড়ার মিনিট পনেরো পরে এক যাত্রী ককপিটে ঢুকে পাইলটের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলে, বিমানটি ছিনতাই করা হয়েছে। পাইলট কৌশলে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ছিনতাই-বার্তা পৌঁছে দিলে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নিরাপত্তা বাহিনী মেতায়েন হয়।

সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান সাংবাদিক বৈঠকে জানান, স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ৩৩ মিনিটে এটিএস-এর কাছ থেকে তাঁরা বিমান ছিনতাইয়ের বার্তা পান। এর পরে ৫টা ৪১ মিনিটে বিমানটি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নামলে সেটিকে ঘিরে ফেলা হয়। বিমানবন্দর থেকে অন্য বিমান ওঠানামা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আশপাশের রাস্তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পরে বিমান বাহিনীর এক অফিসার তাঁকে কথায় ব্যস্ত করে রাখেন। বছর ২৫-এর মাহদি নামে ওই বাংলাদেশি যুবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং নিজের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। তাঁকে সেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাকি আরোহীদের নামিয়ে আনা হয়।

সেনাকর্তা জানান, ঢাকায় হোলি আর্টিজান বেকারিতে অভিযান চালানো লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরুলের নেতৃত্বাধীন বিশেষ কম্যান্ডো বাহিনীটি এ দিন চট্টগ্রামে মোতায়েন ছিল। এত দ্রুত তাঁদের তৈরি হতে বলা হয় যে, এই অভিযানের কোনও নামও দেওয়া যায়নি। ইতিমধ্যে বিমানটির পাশে ক্রেন নিয়ে গিয়ে পাইলট ও কয়েক জন বিমানকর্মীকে নামিয়ে আনা হয়। তার পরে কম্যান্ডোরা মাত্র ৮ মিনিটে ছিনতাইকারীকে কাবু করেন।

আরও পড়ুন: ৫৩ ঘণ্টা হেঁটে মুক্তির পথে ইয়েজ়িদি তরুণী

সেনাকর্তা মতিউর রহমান জানান, কম্যান্ডোরা বিমানে পৌঁছে ছিনতাইকারীকে আত্মসমর্পণ করতে বলায় সে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। সেই কারণে তাকে গুলি করতে হয়। নামিয়ে আনার পরে জিজ্ঞাসাবাদের আগেই সে মারা যায়। কেন সে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল, জানা যায়নি। এমনকি নিজের স্ত্রীর ফোন নম্বরও সে জানাতে পারেনি।

এর পরে স্থানীয় সময় রাত ন’টায় চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হয়। এ দিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে চট্টগ্রামে এসে কর্ণফুলি নদীর নীচে সড়ক-সুড়ঙ্গ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেই তিনি ঢাকায় ফিরে যান। শেখ হাসিনার সফরের সঙ্গে এই ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই বলে ওই সেনাকর্তা দাবি করেন।

কিন্তু ছিনতাইকারীর মৃত্যুর পরে অনেক প্রশ্ন ধামাচাপা পড়ে গেল বলে মনে করা হচ্ছে। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও কী করে সে পিস্তল নিয়ে আন্তর্জাতিক উড়ানে সওয়ার হল, সে প্রশ্ন অমীমাংসিত রইল। আন্তর্জাতিক উড়ানের এক জন যাত্রীর সম্পূর্ণ পরিচয় কেন পুলিশ ও সেনারা জানতে পারল না, উঠেছে সে প্রশ্নও। প্রাথমিক ভাবে ছিনতাইকারীর জঙ্গি-যোগ নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE