Advertisement
E-Paper

ঐশী রহমানের মৃত্যুদণ্ড মকুব করল বাংলাদেশ হাইকোর্ট

সোমবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ ঐশীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেয়।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৭ ২৩:১৩
Share
Save

ঐশী রহমানের মৃত্যুদণ্ড মকুব করে দিল বাংলাদেশ হাইকোর্ট। অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ‘ও’ লেভেলের পড়ুয়া ঐশী ২০১৩ সালে নিজের বাবা-মাকে খুনের দায়ে শিরোনামে আসে। ২০১৫-য় ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ঐশীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে। কিন্তু সেই সাজা বহাল রইল না।

সোমবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ ঐশীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেয়। একই সঙ্গে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। টাকা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ দিনের রায়ে হাইকোর্ট জানিয়েছে, অপরাধের সময় ঐশীর বয়স, মানসিক অবস্থা এবং অন্যান্য কিছু বিষয় মাথায় রেখে এই মৃত্যুদণ্ড মকুব করা হল। হাই কোর্টের রায়ে আরও বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ডই একমাত্র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নয়। এটা কার্যকর করলেই যে সমাজ থেকে অপরাধ দূর হয়ে যবে তা বলা যায় না। লঘুদণ্ডও অনেক সময় সমাজ থেকে অপরাধ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বা সাহায্য করে।

পুলিশ অফিসার মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমান ২০১৩-র অগস্টে খুন হয়ে গিয়েছিলেন স্কুল পড়ুয়া নেয়ে ঐশী রহমানের হাতে। ঢাকার চামেলীবাগের বাসাতেই তাঁদের খুন করে ঐশী। পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করার পর ঐশী জানিয়েছিল, বাবা-মায়ের অনেক সিদ্ধান্ত তার পছন্দ হয়নি। যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সে পড়ত, সেখানেও নাকি তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ভর্তি করা হয়েছিল। এই রকম নানা বিষয় নিয়ে মনান্তরের জেরেই বাবা এবং মাকে খুন করে বলে পুলিশকে সে জানিয়েছিল। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছিল, ঐশী মাদকাসক্ত ছিল। বিচার শেষে৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ দিয়েছিল, ঐশীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হোক। কিন্তু সেই রায় বদলে গেল। হাইকোর্ট এ বার জানাল, ঐশীর অপরাধ মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য হলেও তার বয়স ও মানসিক স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে তার সাজা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঐশী রহমানের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমানোর পাঁচটি কারণ রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বয়স, পারিবারিক ইতিহাস, বাবা-মায়ের অবহেলা, ঘটনার দু’দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ এবং মাদকের প্রভাবে থাকার জেরে অঘটন ঘটিয়ে ফেলা— এই বিষয়গুলির কথা মাথায় রেখেই ঐশীর সাজা কমানো হল।

২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট ঢাকার চামেলীবাগের বাসা থেকে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান এবং তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মাহফুজুরের ভাই মশিউর রহমান পল্টন থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।

এই হত্যাকাণ্ডের পর দিন পরিচারিকা সুমীকে সঙ্গে নিয়ে পল্টন থানায় আত্মসমর্পণ করে বাবা মায়ের হত্যার কথা স্বীকার করে ঐশী রহমান। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ ঐশী-সহ তিনজনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দারা। ২০১৫-র ১২ নভেম্বরে আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। রায়ে ঐশীকে মৃত্যুদণ্ড, তার বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে দুই বছর কারাদণ্ড, সেই সঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেওয়া হয়। তথ্যপ্রমাণের অভাবে আসামি আসাদুজ্জামান জনি খালাস পেয়েছিল।

প্রাথমিক জেরায় ঐশী পুলিশের কাছে জানিয়েছিল, রাতে বাবা-মায়ের কফিতে সে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তাদের অচেতন করে। এর পর দুই বন্ধু রনি ও জনিকে নিয়ে বাবা-মাকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে খুন করে তাঁদের দেহ বাথরুমে রাখে। এ কাজে বাড়ির পরিচারিকা সুমির সাহায্য নিয়েছিল তারা। পর দিন সকালে ঐশী তার ছোট ভাই ওহী রহমান ও সুমিকে নিয়ে বাড়ি থেকে পালায়। ঐশী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও পরে তা অস্বীকার করে।

Oishee Rahman death sentence Bangladesh High Court commute ঐশী রহমান
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy