Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Bangladesh News

‘যে চুক্তিই হোক, সেখানে বাংলাদেশের স্বার্থই সবচেয়ে আগে’

১৯৭১-এর পরে স্মরণকালের মধ্যে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এই মুহূর্তে উষ্ণতার শিখরে। আর ঠিক এমন একটা সময়েই প্রায় ৭ বছর পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতে যাচ্ছেন।

আব্দুল মোমেন। —নিজস্ব চিত্র।

আব্দুল মোমেন। —নিজস্ব চিত্র।

অঞ্জন রায়
ঢাকা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৭ ২৩:১৯
Share: Save:

১৯৭১-এর পরে স্মরণকালের মধ্যে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এই মুহূর্তে উষ্ণতার শিখরে। আর ঠিক এমন একটা সময়েই প্রায় ৭ বছর পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতে যাচ্ছেন। মন্তব্যটা করলেন রাষ্ট্রপুঞ্জে বাংলাদেশের সদ্য প্রাক্তন স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আব্দুল মোমেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফর নিয়ে আনন্দবাজারের সঙ্গে কথা বলার সময় মোমেন বলেছেন, ‘‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা— দু’জনেই নিজেদের দেশের উন্নয়ন চান। তাঁদের প্রধান লক্ষ্য, দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়া। মনে রাখতে হবে একাকী কোনও দেশ প্রতিবেশীদের বাদ দিয়ে উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না। সঙ্গে অবশ্যই প্রতিবেশী দেশদের রাখতে হবে। সেই হিসাবটিও ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রধান বিবেচ্য বিষয়।’’

চিনের রাষ্ট্রপ্রধানের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনও ভূমিকা ফেলবে কি?

মোমেন বলেন, ‘‘বাংলাদেশ কোনও দিকেই বিশেষ ভাবে ঝোঁকেনি। আমরা সাউথ চায়না সমুদ্রের প্রশ্নে কোন পক্ষ নিইনি। আমরা ‘ব্যালান্স পলিসি’তে চলি। সেই পলিসিতেই আমাদের বিশ্বাস রয়েছে। আমরা কোনও একটি বিশেষ দেশের সঙ্গে নয়, সবার সঙ্গেই বন্ধুত্বে বিশ্বাসী। সেই পুরোনো বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়, আমরা এখন উন্নয়নের সিঁড়িতে। দেশটি এখনও নিম্ন মধ্য আয়ের। আমরা নিজেদের ক্ষমতায় পদ্মা সেতু তৈরি করছি। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি-সহ সামাজিক নিরাপত্তা তথা এমডিজি-র স্বক্ষমতার কথা এখন বিশ্বের সবাই জানে। সে কারণেই আমাদের ঝুঁকে পড়ার কিছু নেই।’’

বহু আলোচিত তিস্তা জল চুক্তি প্রসঙ্গে মোমেন বললেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এর আগেও বলেছেন তিস্তায় জল নেই। গত কাল তিনি আবারও বলেছেন তিস্তায় জল নেই। এতে মমতার অবস্থান স্পষ্টই বোঝা যায়। বাংলাদেশের জন্য তিস্তার জল খুবই দরকারি। জরুরি তিস্তা চুক্তিও। ভারতও স্বীকার করেছে, চুক্তিটির প্রয়োজনীয়তা। আশা করি, এই চুক্তি অচিরেই হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘তিস্তা অববাহিকায় উভয় দেশের বসবাসকারী নাগরিকদের স্বার্থের প্রতি নজর রেখে সমঝোতা হলে সেটা খুবই ভাল হবে। কিন্তু এটাই একমাত্র জরুরি নয়। আওয়ামি লিগ সরকারের আমলে আমাদের যে সমূদ্রসীমানায় অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সেখানে যে ‘ব্লু ইকোনমির’ সম্ভাবনা, সেটিকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। সেখানেও ভারত বাংলাদেশের সমঝোতার প্রয়োজন, এই বিষয়টিও আলোচনায় আসা দরকার।’’

আরও পড়ুন: বাংলাদেশ যুদ্ধে নিহত সেনাদের স্বীকৃতি হাসিনার

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কী ভাবে মূল্যায়ন করবেন?

তিনি একটি স্মৃতিকথা শুনিয়েছেন, ‘‘১৭৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশ থেকে যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁরা যদি কোনও হোটেল বা রেস্তোরাঁয় থেকে ‘জয় বাংলা’ বলে পরিচয় দিতেন, তবে সেই হোটেল বা রেস্তোরাঁর মালিক খাবারের দাম নিত না। এই একটি ঘটনায় বোঝা যায় বাংলাদেশের জন্ম সময়ে ভারত রাষ্ট্র শুধু নয়, ভারতের নাগরিকেরাও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেছেন। সেই ঐতিহাসিক বন্ধন আমাদের কারওই ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ৪ হাজার সেনা সদস্য জীবন দিয়েছেন। এই ইতিহাসের উপরেই দাঁড়িয়ে আছে ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক।’’

সম্পাদিত হতে যাওয়া চুক্তিগুলো প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, ‘‘আমি পরিষ্কার বুঝি, প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক কিছু কিছু বিষয়ে হিসাব নিকাশের ভিত্তিতেই হয়। বড় প্রতিবেশীর গুরুত্বও আমাদের হিসাবে রাখতে হবে। আরও মনে রাখতে হবে, এই সরকারই বেরুবাড়ি, ছিটমহল, জলচুক্তি করেছে। আর যে দলটি বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, সেই দলটি যখন বাংলাদেশের সরকারে, তখন যে চুক্তিই হোক, সেখানে বাংলাদেশের স্বার্থই সবচেয়ে আগে।’’

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আর কোন কোন বিষয়গুলো আরও গুরুত্ব দেওয়া দরকার?

মোমেন গুরুত্ব দিয়েছেন দু’দেশের বাণিজ্যের সাম্যতা, ট্যারিফ-নন ট্যারিফ বাধা প্রসঙ্গে। তাঁর মতে, এই অর্থনৈতিক বিষয়গুলো উভয় দেশের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বড় বাধা। একইসঙ্গে এর ফলে অসাম্য তৈরি হচ্ছে। সে কারণেই এগুলোর সমাধান দ্রুত দরকার।

মোমেন বলেছেন, ‘‘বর্তমান বিশ্বে টেঁকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায় এগিয়ে চলেছে। এই এগানোর জন্য পাশাপাশি দেশগুলোর পারস্পরিক সহায়তা, অংশগ্রহণ এবং আন্তরিকতা সবচেয়ে জরুরি। আমার বিশ্বাস এই বিষয়গুলো ধারণ করেই ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক চলমান। চলতি সফরেও প্রাধান্য পাবে এই বিষয়গুলিই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE