Advertisement
E-Paper

বাংলাদেশের মুক্তমনা প্রকাশক দীপন খুনের এক বছর

একটা বছর কেটে গেল। গত বছর আজকের দিনেই ঢাকার শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের জাগৃতি প্রকাশনীর অফিসে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। দফতরেই খুন করা হয়েছিল বাংলাদেশে জঙ্গিদের ‘টার্গেট কিলিং’ তালিকায় থাকা প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনকে।

অঞ্জন রায়

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ১৭:০১

একটা বছর কেটে গেল। গত বছর আজকের দিনেই ঢাকার শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের জাগৃতি প্রকাশনীর অফিসে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। দফতরেই খুন করা হয়েছিল বাংলাদেশে জঙ্গিদের ‘টার্গেট কিলিং’ তালিকায় থাকা প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনকে।

বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশক ছিলেন দীপন। জঙ্গিদের সেটা সহ্য হয়নি। তারা দীপনের অফিসে ঢুকে তাঁকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছিল। ওই একই দিনে ঢাকার লালমাটিয়াতে অভিজিৎ রায়ের আর এক প্রকাশকের অফিসেও হানা দিয়েছিল জঙ্গিরা। সেখানে প্রকাশক আহমেদ রশিদ টুটুল, লেখক রনদীপম বসু মারাত্মক ভাবে আহত হয়েছিলেন জঙ্গিদের চাপাতির কোপে। তবে তাঁরা প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। বাঁচেননি দীপন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিবাদী শিক্ষক আবুল কাশেম ফজলুল হকের ছেলে দীপনের রক্তাক্ত দেহ সে দিন দেখিয়ে দিয়েছিল, ধর্মান্ধতার অন্ধকার কতটা নির্মম!

গত বছর জুড়েই বাংলাদেশে চলেছে ‘টার্গেট কিলিং’। শাহবাগ আন্দোলনের শুরুতেই রাজীব হায়দারকে খুন দিয়ে চাপাতি হামলার শুরু। একের পরে এক ব্লগার, মুক্তমনা, পীর, যাজক, পুরোহিত, বিদেশি নাগরিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হত্যার ঘটনা ঘটে। সব শেষে গুলশনের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনির সাফল্য হলি আর্টিজান বেকারির পরে যতটা, আগে ততটা ছিল না। উল্টে কখনও পুলিশের বড়কর্তারাও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সীমানা নিয়ে কথা বলেছেন। ব্লগার অমি রহমান পিয়াল বা গোলাম আজমের দেহে জুতো ছুড়ে প্রতিবাদ জানানো ব্লগার মাহামুদুর রহমান মুন্সী বাঁধনদের শুধুমাত্র নিরাপত্তার কারণেই দেশ ছাড়তে হয়েছে।

এই হামলা ও টার্গেট কিলিংয়ের ধরনটা ছিল দেশজুড়ে। যেমন ঢাকাতে খুন হয়েছেন অভিজিৎ রায়, রাজীব হায়দার, ওয়াশিকুর রহমান, নিলাদ্রী নীল, কয়েকজন পীর, তেমনই সিলেটে খুন হয়েছেন অনন্তবিজয়, রংপুরে বিদেশি নাগরিক, নাটোরে খৃস্টান মুদি দোকানি, পাবনাতে অনুকূল চন্দ্রের আশ্রমের সেবায়েত।

বাংলাদেশে যাতে মুক্তচিন্তার লেখা প্রকাশে দেশের প্রকাশকেরা ভয় পান, সে কারণেই হত্যা করা হয়েছিল জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী দীপনকে। একই দিনে চাপাতি দিয়ে কোপানো হয় অভিজিৎ রায়ের আর এক প্রকাশক আহমেদ রশিদ টুটুলকে। কিন্তু জঙ্গিদের সেই ভয়কে আমল দেননি বাংলাদেশের প্রকাশকেরা। যে কারণে দীপন হত্যার পরে থেমে যায়নি জাগৃতি প্রকাশনী। দীপনের মৃত্যুর পরে প্রতিষ্ঠানটির হাল ধরেছেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া রহমান। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমরা দীপনের ভালবাসা আর দায়বদ্ধতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সেই শ্রদ্ধা বজায় রাখতেই তাঁর প্রতিষ্ঠানটি আমরা সচল রেখেছি। আগামীতেও সচল থাকবে।’’

বাংলাদেশ অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে হলি আর্টিজান বেকারির জঙ্গি হামলার পরে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনির সাফল্যও চোখে পড়ার মতো। কিন্তু, রাজীব হায়দারকে খুন করে যে ধারাবাহিক হত্যালীলা শুরু করেছিল জঙ্গিরা, সেখানে প্রথম ধাপে নানা দ্বিধা আর আস্তিক-নাস্তিক ইস্যু জঙ্গি দমনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পরেই অনেকটা পাল্টে গিয়েছে সেই দৃষ্টিভঙ্গি। একের পরে এক জঙ্গি ডেরায় বাহিনির অভিযান এবং ধারাবাহিক সাফল্যে সাধারণ মানুষ স্বস্তি পেলেও শিকড় উপড়ে দেওয়ার জায়গাটি এখনও বেশ দূরে। তবে, এ কথা সত্যি, চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পরে থেকে বন্ধ হয়েছে জঙ্গিদের ‘টার্গেট কিলিং’। নিরাপত্তা বাহিনীর একের পরে এক অভিযানে তছনছ হয়ে গিয়েছে জঙ্গিদের প্রায় সব আস্তানা। যারা চাপাতি হাতে তৈরি করছিল ভয়ের সংস্কৃতি, তারা এখন কোণঠাসা, পলাতক। অভিযানগুলোয় খতম হয়েছে জঙ্গিদের অনেকেই।

হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর গোটা দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের প্রতিরোধও ছিল চোখে পড়ার মতো। এক দিনে ৫০ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর মানববন্ধন বা পাড়ায় পাড়ায় প্রতিরোধ সমাবেশ মনে করিয়ে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে।

স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য প্রকাশক হত্যার ঘটনা গোটা বিশ্বকে নাড়িয়েছিল। দীপন হত্যার দিনটিকে তাই ‘প্রকাশক দিবস’ হিসাবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া। শাহবাগ থেকে কাঁটাবন পর্যন্ত রাস্তাটির নাম দীপনের নামে নামকরণের দাবি জানিয়েছে দীপন স্মৃতি সংসদ।

আরও পড়ুন

সন্ত্রাসে হাতেখড়ি থেকে কীভাবে দীপন খুন, নিজেই জানাল ঘাতক শামিম

Bangladesh Dipan Murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy