Advertisement
E-Paper

ঢাকায় খতম ৯ জঙ্গি, ছক চলছিল আর একটা গুলশন ঘটানোর

বড় অভিযান। বড় সাফল্য বাংলাদেশ পুলিশের। গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়ে, ঢাকার কল্যাণপুরের ডেরায় পুলিশ ও বিশেষ বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে নয় জঙ্গি। ধরা পড়েছে দু’জন। তাদের মধ্যে একজন গুলিতে আহত। ভর্তি হাসপাতালে।

অঞ্জন রায়

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৬ ১৭:৩৮
ঢাকার রাস্তায় র‍্যাব-এর টহল।

ঢাকার রাস্তায় র‍্যাব-এর টহল।

বড় অভিযান। বড় সাফল্য বাংলাদেশ পুলিশের। গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়ে, ঢাকার কল্যাণপুরের ডেরায় পুলিশ ও বিশেষ বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে নয় জঙ্গি। ধরা পড়েছে দু’জন। তাদের মধ্যে একজন গুলিতে আহত। ভর্তি হাসপাতালে।

বড় নাশকতার লক্ষ্যেই ঢাকার কল্যাণপুরের ডেরায় নিজেদের তৈরি করছিল জঙ্গির দল। পুলিশ নিশ্চিত, জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) যে গোষ্ঠী গুলশন হামলায় জড়িত, তারাই আরও একটা বড় হামলার পরিকল্পনায় আস্তানা গেড়েছিল এই ‘জাহাজ বাড়ি’তে।

বাড়িটা ছ’তলা। কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কে গার্লস হাই স্কুলের পাশে ৫৩ নম্বর বাড়ির গায়ে ‘তাজ মঞ্জিল’ লেখা থাকলেও, স্থানীয় মানুষ ওই বাড়িকে চেনেন ‘জাহাজ বিল্ডিং’ নামেই। দোতলায় বাড়িওয়ালা থাকেন। বাকি তলাগুলো ভাড়া দেওয়া হয়। এর মধ্যে চার আর পাঁচ তলার চারটে করে ইউনিট ভাড়া দেওয়া হয় মেস হিসাবে। এ মাসের ১২ তারিখ ১৫ হাজার টাকা ভাড়ায় এখানে এসে ঢোকে সাত তরুণ। পরে এসে ওঠে আরও চার জন।

সোমবার রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ অভিযানের শুরুতে পুলিশ ও র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) চার দিক থেকে ঘেরাও করে ওই বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করে। তখনই পাঁচ তলার আস্তানা থেকে কয়েকজন জঙ্গি ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিয়ে গুলি ছুড়তে শুরু করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলির মধ্যে এক জঙ্গি আহত হয়। হাসান নামের ১৯ বছরের বয়সী ওই তরুণকে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার বাড়ী বগুরা জেলার জীবন নগরে। ঢাকা মেডিক্যালের খাতায় হাসানের বাবার নাম লেখা হয়েছে রেজাউল করিম। তার পায়ে গুলি লেগেছে। মাথায় জখম আছে। জঙ্গিদের আরেক জনকেও হাতেনাতে ধরে ফেলে পুলিশ।

‘জাহাজ-বিল্ডি‌ং’ থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। নিজস্ব চিত্র।

রাতে আর ভিতরে না ঢুকে অপেক্ষা করে পুলিশ। ডেকে পাঠানো হয় বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী সোয়াটকে। ভোর ৬টার একটু আগে শুরু হয় চূড়ান্ত অভিযান। সেই সময়ে জঙ্গিরা ফ্ল্যাটের দরজা খুলে গুলি করতে করতে পালানোর চেষ্টা করছিল। তাদের পরনে ছিল কালো রঙের জঙ্গি পোশাক, মাথায় ছিল পাগড়ি। সঙ্গে ছিল ব্যাগপ্যাক। জঙ্গিদের এই পোষাকটা বাংলাদেশে নতুন।

ভোরের এই এক ঘণ্টার অভিযান ‘অপারেশন স্টর্ম টোয়েন্টি সিক্স’ শেষ হওয়ার পর ওই বাড়িতে পাওয়া যায় নয় জঙ্গির লাশ। সবার গায়ে ছিল কালো পাঞ্জাবি। পুলিশ সূত্র আনন্দবাজারকে জানিয়েছে, জঙ্গিদের ঘর থেকে আরও বেশ কিছু নতুন কালো পাঞ্জাবি ও কালো পতাকা উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে অনেক অস্ত্রশস্ত্রও।

নিহতদের মধ্যে সাতজনের লাশ উদ্ধার হয় পাঁচ তলার করিডোরে। বাকি দু’জনের লাশ পড়ে ছিল দুটো ঘরে। ধৃত হাসানের কাছ থেকে এই মেসে থাকা ১১ জঙ্গির মধ্যে হাসান ছাড়া আরও আট জঙ্গির নাম জানা গেছে। তারা হল রবিন, সাব্বির, তাপস, অভি, আতিক, সোহান, ইমরান, এবং ইকবাল। তবে এই নাম আসল কি না তা এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ।

আটক জঙ্গি হাসান জানিয়েছে, এক মাস আগে তাকে কল্যাণপুরের ওই বাড়িতে নিয়ে আসে রবিন। ওখানে ট্রেনিং চলছিল। এই এক মাসের মধ্যে তাকে একবারও নীচে নামতে দেওয়া হয়নি। তার দায়িত্ব ছিল সবাইকে রান্না করে খাওয়ানো। রাতে পুলিশের অভিযান টের পাওয়ার পর সে ওপর থেকে লাফ দিয়েছিল। পুলিশের গুলিতে জখম হয়ে তখনই ধরা পড়ে যায়।

আরও পড়ুন

‘গুলির লড়াইয়ের সময় যেন খই ভাজার শব্দ হচ্ছিল’

প্রায় ১০০০ পুলিশ অংশ নিয়েছিল এই অভিযানে। কল্যাণপুরে পুলিশি অভিযানে নিহত জঙ্গিদের গুলশানের মতো বড় ধরনের হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শ (আইজিপি) একেএম শহিদুল হক। তিনি বলেন, ‘‘নিহত জঙ্গিদের সঙ্গে গুলশান হামলাকারীদের যোগসূত্র রয়েছে। তারা নিজেদের আইএস বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করলেও তারা আসলে জেএমবির সদস্য। এরা বড় নাশকতার পরিকল্পনা করছিলো। কিন্তু পুলিশের সফল অভিযানে সেটি সম্ভব হয়নি।’’

মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৮টা নাগাদ বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য থেকে বুঝতে পারছিলান যে ঢাকায় তারা একটা বড় ধরনের ঘটনা ঘটাবে। সেটা যাতে না ঘটাতে পারে, সেজন্যই এই অভিযান ছিল।।’

গোটা অভিযানের প্রশংসা করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে আমাদের পুলিশ বাহিনী এই অভিযানটা চালিয়েছে। তারা (সন্ত্রাসবাদীরা) সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত ছিল। বোঝা যাচ্ছিল যে তারা বড় ধরনের নাশকতা ঘটানোর জন্য তৈরি হচ্ছিল। এই পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে বিরাট বড় ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে দেশ রক্ষা পেয়েছে।”

Militants Gulshan Dhaka
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy