Advertisement
E-Paper

সীমান্তে হাতি-মানুষ লড়াই চলছেই

হাতি-মানুষ ‘যুদ্ধ’ যেন থামছেই না! বাংলাদেশের শেরপুর জেলার সীমান্ত জনপদে বেড়েই চলেছে বন্যহাতির তাণ্ডব। সঙ্গে মানুষের প্রাণহানি। পাহাড় থেকে খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসা বন্যহাতির দল বাধা পেয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে ফসলের মাঠ, বাড়ি-ঘরে।

সংগৃহিত

সংগৃহিত

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৬ ০১:১৭
Share
Save

হাতি-মানুষ ‘যুদ্ধ’ যেন থামছেই না! বাংলাদেশের শেরপুর জেলার সীমান্ত জনপদে বেড়েই চলেছে বন্যহাতির তাণ্ডব। সঙ্গে মানুষের প্রাণহানি। পাহাড় থেকে খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসা বন্যহাতির দল বাধা পেয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে ফসলের মাঠ, বাড়ি-ঘরে। শুধু তাই নয়, হাতি লোকালয়ে তেড়ে এসে স্থানীয় লোকজনকে শুড়ে পেঁচিয়ে তুলে আছাড় দিয়ে, পায়ে পিষে মেরেও ফেলছে। অন্য দিকে, নিজেদের টিঁকে থাকার লড়াইয়ে জান-মাল রক্ষায় বন্যহাতির উপর সহিংস আচরণ করছে মানুষজন।

গত ১৩ অক্টোবর রাতে শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি থানার কাংশা ইউনিয়নের পানবর ও দুধনই গ্রামে বন্যহাতির দল তাণ্ডব চালিয়ে ৩ গ্রামবাসীকে শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে পায়ে পিষে মারে ও চারজনকে আহত করে। পাশাপাশি ৫টি বসত ঘর এবং প্রায় চার একর জমির ফসল নষ্ট করে।

এর আগে ১০ অক্টোবর রাতে ঝিনাইগাতির উত্তর বাকাকুড়া সীমান্ত গ্রামে বন্যহাতির আক্রমণে এক গারো কৃষক নিহত ও দু’জন আহত হয়। প্রায় ৬০/৭০টি বন্যহাতির দল রাতভর ওই এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে প্রায় ৪ একর জমিতে আধ পাকা ধান ও এক একর জমির আলুর খেত খেয়ে, পায়ে মাড়িয়ে সাবাড় করে। গত সেপ্টেম্বর মাসে ঝিনাইগাতি ও শ্রীবরদি সীমান্তে কয়েক দিনের ব্যবধানে বন্যহাতির আক্রমণে তিন জন নিহত ও ২ জন আহত হয়। ১ অক্টোবর পশ্চিম বাকাকুড়া এলাকায় গ্রামবাসীদের বিদ্যুতের ফাঁদে একটি বন্যহাতিও মারা পড়ে। বন্যহাতি আর মানুষের এমন যুদ্ধ থামাতে ইতিমধ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কমছে না প্রাণহানি।

ময়মনসিংহ বন বিভাগ ও শেরপুর জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কার্যালয়ের হিসাব মতে, ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর ঝিনাইগাতি-শ্রীবরদি ও নালিতাবাড়ি উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় বন্যহাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ৫১ জনের। আহত হয়েছে পাঁচ শতাধিক লোক। অন্য দিকে, মানুষের হাতে মারা পড়েছে ১৯টি হাতি। এ ছাড়া হাতির আক্রমণে ঘরবাড়ি, গাছপালা-সহ প্রায় এক কোটি টাকার বেশি মূল্যের সম্পদ নষ্ট হয়েছে।

বন্যপ্রাণি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রমাগত বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়ায় বন্যহাতির খাবারের উৎস কমে গিয়েছে। তা ছাড়া বনে মানুষের বসবাস ও আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যহাতির নিজস্ব বিচরণ ক্ষেত্র কমে গিয়েছে। এ জন্য বন্যহাতি খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসছে। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ অনুযায়ী, বন্যহাতি হত্যা করলে দুই থেকে সাত বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। আর বন্যহাতির আক্রমণে নিহত হলে সরকারের তরফ থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে বনবিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে এক লাখ টাকা এবং আহত হলে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দেবে।

বনবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ভারত থেকেই হাতিগুলো বাংলাদেশে আসে। এ দেশে বনের যে আকার তাতে এখানে বন্যহাতির খাবার ও বাস করার মতো পরিধি নেই। ও পার থেকে তাড়া খেয়ে হাতিগুলো এ পারে চলে আসে। ইদানীং ওপারে ভারতের বনাঞ্চলে কাজু বাদামের চাষ করছে স্থানীয়রা। তারা বাদামের বাগান রক্ষায় বন্যহাতিকে তাড়িয়ে দিচ্ছে। এ জন্য বন্যহাতির চলাচলের গতি-প্রকৃতিও পরিবর্তিত হচ্ছে।

ইন্টার ন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজার্ভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)-এর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শেরপুরের বনাঞ্চলে ১২০/১২৫ টি হাতি রয়েছে। এগুলো সবই পারিযায়ী হাতি। এ সব হাতিকে এশিয়ান হাতি বলা হয়। ভারত থেকে আসা এ সব বন্যহাতি শেরপুরের সীমান্তবর্তী ৮ হাজার ৩৭৬ একরের বনভূমিতে বিচরণ করে। ধান ও কাঁঠালের মরসুমে খাবারের সন্ধানে প্রতি রাতে হাতিগুলো পাল বেঁধে চলে আসে সমতলে। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলা পর্যন্ত এলাকা চষে বেড়ায়।

আইইউসিএন-এর সাইট ম্যানেজার মো. মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, শেরপুরে প্রাকৃতিক বনের চাইতে উডলট বাগান বেশি। আর রাংটিয়া থেকে তাওয়াকুচা পর্যন্ত কিছুটা প্রাকৃতিক বন ও ঘনজঙ্গল থাকায় সেখানে বন্য হাতির খাবারের সংস্থান রয়েছে। যে কারণে ওই সব এলাকায় হতাহতের ঘটনা বেশি হয়েছে। দেখা যাচ্ছে বনের ভেতর যখন খাবার কমে যাচ্ছে তখন হাতি লোকালয়ে হানা দিচ্ছে।

শেরপুরের জেলাশাসক এ এম পারভেজ রহিম জানিয়েছেন, বন্যপ্রাণী বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। উভয় দেশের সহযোগিতায় বন্যহাতির আবাস নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সীমান্তে অভয়াশ্রম তৈরি করা যায় কিনা সে বিষয়ে আলোচনা চলছে। সীমান্তে অভয়াশ্রম তৈরি করা হলে হাতি-মানুষে দ্বন্দ্বও কমে আসবে বলে তিনি জানান।

Elephant Citizen Forest department

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।