Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Bangladesh news

৮৭ বছরেও টানটান এরশাদ, ৩৪ দলের মহাজোটে ভোটের প্রস্তুতি

একটু একটু করে ঠেলে ফেলে দেওয়াটা অনেক সময় রাজনৈতিক কারসাজি। যাতে তাজ খসে, রাজ যায়। বেঁচে থাকাটাই দায় হয়। শক্তি ক্ষয়ে সবই হারায়। ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি ডিলমা রুসেফের বিদায় ইমপিচমেন্টে।

হুসেইন মোহম্মদ এরশাদ । —ফাইল চিত্র।

হুসেইন মোহম্মদ এরশাদ । —ফাইল চিত্র।

অমিত বসু
শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৭ ১৩:৫৪
Share: Save:

একটু একটু করে ঠেলে ফেলে দেওয়াটা অনেক সময় রাজনৈতিক কারসাজি। যাতে তাজ খসে, রাজ যায়। বেঁচে থাকাটাই দায় হয়। শক্তি ক্ষয়ে সবই হারায়। ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি ডিলমা রুসেফের বিদায় ইমপিচমেন্টে। দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি পার্ক গুয়নে হে'র একই দূরবস্থা। ধাক্কা খেতে খেতে পদ থেকে ছিটকেছেন শেষ পর্যন্ত। এখন জেলে। ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতেছিলেন। ভোটের প্রচারে ইস্যু ছিল, লিঙ্গ সাম্য। পুরুষের হাতে আর মার খাবে না মেয়েরা। রুখবে, উঠে দাঁড়াবে, শাসন ক্ষমতা হাতে নেবে। পার্ক তা করতে গিয়ে ব্যর্থ। উল্টে অভিযোগ উঠল দুর্নীতি, স্বজন পোষণের। ডিলমার বিরুদ্ধে অভিযোগ একই। কাদা মাখা ইমেজ পরিষ্কার করে তাঁদের ক্ষমতায় ফেরাটা অনিশ্চিত। আপাতত নির্বাসনে। প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযোগের সত্যমিথ্যেটা পেন্ডুলামের মতো দুলবে। এটা নতুন কিছু নয়। অনেক নেতানেত্রীর ভাগ্যে এমনটা ঘটছে। চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অভিযোগ মিথ্যে প্রতিপন্ন করে ফিরে আসাটা সহজ নয়। কেউ পারে, বেশির ভাগই নিন্দিত হয়ে কাল কাটায়। ইন্দিরা গান্ধী ফিরেছিলেন। অভিযোগের স্তূপ ফুঁড়ে জেগেছিলেন ফিনিক্স পাখির মতো।

আরও পড়ুন: তিস্তা চুক্তিতে মমতাকে কটাক্ষ হাসিনার

বাংলাদেশের জাতীয় পার্টি বা জাপার চেয়ারম্যান হুসেইন মোহম্মদ এরশাদ টানা ন'বছর রাষ্ট্রপতি থাকার পর শেখ হাসিনা, বেগম খালেদা জিয়ার যৌথ আন্দোলনে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সামরিক শাসকের রাষ্ট্রপতি হওয়াটা সেই শেষ। ক্ষমতা হারিয়ে পাহাড় প্রমাণ অভিযোগের সামনে। সেটা ডিঙিয়ে আবার রাজনীতিতে ফিরবেন এমন আশা করাটা কঠিন ছিল। তিনি পেরেছিলেন। রাজনীতিতে জাঁকিয়ে বসেছেন। নির্বাচনে নির্ণায়ক শক্তি হয়েছেন। তাঁকে দলে টানতে হাসিনা-খালেদার তৎপরতা ছিল অবিসংবাদী।

এরশাদের ঢাকার বাসস্থানে গিয়ে অবাক হয়েছি। আশি পেরিয়েও জিম করেন, কবিতা লেখেন। কবিতা লেখাটা বাঙালির অভ্যাস। এত বয়সে জিম করেন কী করে। ভার তোলেন অনায়াসে। সেই জন্যই কি রাজনীতিতে ভারী চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে অসুবিধে হয় না। তিনি জিমটা ঘুরিয়ে দেখানোর পর প্রশ্ন করেছিলাম, আপনি সত্যিই বাঙালি তো! হেসেছিলেন।

এরশাদের জন্ম কোচবিহারে। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের প্রয়াত মন্ত্রী কমল গুহর বাল্য বন্ধু। দু'জনে একসঙ্গে ঘোড়ায় চড়েছেন। খেলাধূলা করেছেন, রাজনৈতিক চর্চাতেও মনোযোগী হয়েছেন। রাজনীতির রাস্তায় অনেকটা দৌড়ে এসে নতুন বাঁক নিতে চাইছেন এরশাদ। জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন নিজের মতো। তিনি যে এখনও কতটা প্রাসঙ্গিক প্রমাণ দিচ্ছেন। আওয়ামি লিগের ১৪ দল আর বিএনপি-র ২০ দলের জোটের পাশাপাশি ৩৪ দলের মহাজোট খাড়া করেছেন। যদিও সব দলের নাম নির্বাচন কমিশনে এখনও নথিভুক্ত হয়নি। পতাকা বা ইসতেহার তৈরি করাটাও বাকি। তার আগে এরশাদ নিজের মহাজোটের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেছেন। বলেছেন, স্বাধীনতার চেতনা, ইসলামি মূল্যবোধ, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীদের নিয়ে জোট হচ্ছে। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দেশের সব ইসলামি দলকেও এক হতে হবে। ইসলাম সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করে না। জিহাদ হল অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, মানুষ হত্যা নয়। সংহতি না থাকলে শান্তি আসবে না। শান্তি ছাড়া উন্নয়ন নেই। বাংলাদেশ এমন একটা দেশ হবে, বিশ্ব যার কাছে শিক্ষা নেবে। জীবন কী ভাবে সুন্দর হয় জানাবে মনুষ্যত্বের চর্চায়। মনে করেন এরশাদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE