সূচনা বলাটা ঠিক নয়। ফের চালু হল বলাই ভাল। ভারতের রাধিকাপুর থেকে বাংলাদেশের বিরল স্টেশন হয়ে পার্বতীপুর, ট্রেন রুটটা দীর্ঘ দিনের। দু'দেশের পণ্য পরিবহণের অন্যতম পথ। মানুষ যাওয়া আসার নয়। ভারত থেকে জ্বালানি তেল পাঠানোই মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল। ২০০৬-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি যাতায়াত বন্ধ হয়। আগে দু'দেশের মধ্যে ট্রেন চলত মিটার গেজে। ভারতের দিকের লাইন ব্রডগেজ করে ফেলায় সীমান্ত পেরোন অসম্ভব হয়ে পড়ে। গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে বাংলাদেশেও শুরু হয় রেল লাইনে সংস্কারের কাজ। এগারো বছর পর সেই কাজ সম্পূর্ণ। এখন দু'দেশেই ব্রডগেজ লাইন। আর কোনও অসুবিধে নেই।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের রাধিকাপুর সীমান্ত অঞ্চল। এপারে দাঁড়ালে ওপার দেখা যায়। ১৯৪৭-এ দেশ ভাগের আগে দিনাজপুর একটি জেলাই ছিল। তার পর দু'দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। ভারতের অংশের নাম হয় পশ্চিম দিনাজপুর। পূর্ববঙ্গ-পশ্চিমবঙ্গ ভাগের মতই বিভাজন। বাংলাদেশে দিনাজপুর জেলার কোনও দিগনির্দেশ করা হয়নি। পরে ভেঙে টুকরো করা হয়েছে। ভারতেও পশ্চিম দিনাজপুরের ভৌগোলিক সীমা আর আয়তনের পরিবর্তন হয়েছে। ১৯৪৮-এ দু'টি মহকুমা ছিল, রায়গঞ্জ আর বালুরঘাট, ১৯৫৬তে বিহারের পূর্ণিয়া জেলার কিছুটা পশ্চিম দিনাজপুরে ঢোকে। সেই সঙ্গে নতুন মহকুমা হয় ইসলামপুর। ১৯৯২-এর ১ এপ্রিল পশ্চিম দিনাজপুর জেলা ভেঙে হয় দু'টি জেলা। উত্তর আর দক্ষিণ দিনাজপুর।
আরও পড়ুন: ভারত থেকে পাইপলাইনে ডিজেল, গ্যাস যাবে বাংলাদেশে
দিনাজপুর রেলে যুক্ত নয় কলকাতার সঙ্গে। যোগ বাংলাদেশের সঙ্গে। জেলা ভাঙলেও যাতায়াতের সূত্র বাংলাদেশ। কলকাতা অনেক দূর। যেতে হয় সড়ক পথে। সেটাও খুব সহজ নয়। লিঙ্ক রোড, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। বিহার হয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। বিহারের কিষাণগঞ্জ ছুঁয়ে যেতে হয়। উত্তরবঙ্গের জেলা দু'টি কলকাতার সঙ্গে এমার্জেন্সি সংযোগ রাখতে অক্ষম।
যে ট্রেনটি গত ৭ এপ্রিল উত্তর দিনাজপুর থেকে সীমান্ত ডিঙিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, তাতে ড্রাইভার বা রেলকর্মী ছাড়া কোনও মানুষ ছিল না। ৪২টি ট্যাঙ্কার ভর্তি ডিজেল নিয়ে বাংলাদেশে গেছে। আগের দিন রাঙাপানি থেকে রায়গঞ্জ দিয়ে রাধিকাপুরে আনা হয় রেকটি। বাংলাদেশ থেকে ইঞ্জিন আসে এটা টেনে নিয়ে যেতে। ট্রেনটির নাম দেওয়া হয় 'ইন্দো-বাংলাদেশ গুড উইল রেক'। দু'দেশের রেলে পণ্য পরিবহণে আর বাধা রইল না। এ বার প্রশ্ন উঠেছে, পণ্য যদি যায় মানুষ যাবে না কেন। যাত্রী পরিবহণে সড়ক প্রস্তুত। সীমান্ত অতিক্রম সহজ। রেলপথ চালু হলে আর অসুবিধে থাকে না। দু'দেশের মানুষই সেটা চায়। দীর্ঘ দিন বাদে খুলনার দাবি পূরণ হয়েছে। ট্রেন-বাস চলবে খুলনা-কলকাতার মধ্যে। মাত্র পাঁচ ঘণ্টার পথ। ভিসা আর কাস্টমস চেকিং যদি ট্রেন বা বাসেই করে নেওয়া যায় সময় অনেক কমবে। সেই ব্যবস্থাই হচ্ছে। কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রীদেরও আর চেকিংয়ের জন্য ট্রেন থেকে নামতে হবে না। জুলাই থেকে সেটা চালু হওয়ার কথা। এই রুটে পুরো এসি ট্রেন চলছে। প্রাইভেট মোটর কারে দু'দেশে যাতায়াতের কথা ভাবা হচ্ছে। ইউরোপে এমনটাই হয়। দক্ষিণ এশিয়াতেই বা হবে না কেন। উত্তর দিনাজপুরের পণ্য বিনিময়ের সঙ্গে মানুষের সফরকে গুরুত্ব দিতে হবে। নইলে যোগাযোগ অসম্পূর্ণ। মানুষের মুখের হাসিও চওড়া হওয়ার নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy