চরমপন্থীদের হামলায় নিহত অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকি।
ফের অধ্যাপক খুন বাংলাদেশে। ব্লগার খুনের ধাঁচেই কুপিয়ে খুন করা হল প্রকাশ্য রাস্তায়। ইসলামি চরমপন্থীরাই খুন করেছে অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকিকে, বলছে রাজশাহি মহানগর পুলিশ। শনিবার সাতসকালে এই খুনের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা বাংলাদেশকেই। নাস্তিক এবং মুক্ত চিন্তার সমর্থকদেরকে চরমপন্থীদের হাত থেকে রক্ষা করতে না পারায় প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
যে ভাবে খুন করা হয়েছে রেজাউল করিম সিদ্দিকিকে, তার সঙ্গে ব্লগার-খুনের মিল রয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক ব্লগারকে খুন করেছে ইসলামি চরমপন্থীরা। ব্লগার খুনের ঘটনায় বাংলাদেশের আদালত এ বছরের গোড়াতেই মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে কয়েকজন অপরাধীকে। কিন্তু তাতেও ব্লগারদের খুন করার পরম্পরায় ছেদ পড়েনি। এক সপ্তাহ আগেই ঢাকায় ফের এক ব্লগার খুন হয়েছেন। তার পর আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় রাজশাহি শহরে অধ্যাপক খুন হলেন। রেজাউল করিম সিদ্দিকি রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। এ দিন সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনি বাস স্টপেজের দিকে হাঁটছিলেন। তখনই পিছন থেকে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। পুলিশ জানিয়েছে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে অন্তত তিন বার আঘাত করা হয় অধ্যাপকের গলায়। ৭০-৮০ শতাংশ কেটে যায় রেজাউল করিমের গলা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।
মুক্ত চিন্তার সমর্থক হওয়ার জেরেই তাঁকে খুন হতে হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আনসারুল্লা বাংলা বা আনসার-উল-ইসলাম, কোনও সংগঠনই এখনও অধ্যাপক খুনের দায় নেয়নি। তবে এই খুন ইসলামি চরমপন্থীদেরই কাজ, মনে করছে প্রায় সব মহল। রাজশাহির পুলিশ কমিশনার মহম্মদ শামসুদ্দিনও জানিয়েছেন, অধ্যাপক রেজাউল করিমের খুনের পিছনে ইসলামি চরমপন্থীদেরই হাত রয়েছে। যে ভাবে চরমপন্থীরা ব্লগারদের খুন করছে, ঠিক সেই কায়দাতেই খুন করা হয়েছে রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপককে।
আরও পড়ুন:
‘যৌন জেহাদ’-এ না, মসুলে ২৫০ মহিলাকে হত্যা করল আইএস
রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের আর এক অধ্যাপক শাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, ব্লগ লেখার অভ্যাস ছিল না রেজাউল করিমের। ধর্মাচরণের বিরুদ্ধে তিনি খুব সোচ্চারও হতেন না। তবে মুক্ত চিন্তায় বিশ্বাসী ছিলেন। ছোট গল্প ও কবিতা লিখতেন। ‘কোমল গান্ধার’ নামে একটি সংগঠন চালাতেন। সেই সংস্থা থেকে একটি দ্বিবার্ষিক পত্রিকাও প্রকাশ করতেন। রেজাউল করিমকে এ ভাবে খুন হতে হবে, কেউই তা ভাবেননি। রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্রকে শহরের এক হোটেলে গতকালই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। আজ আবার অধ্যাপক খুন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবাদে উত্তাল। খুনের প্রতিবাদে এ দিন আধ ঘণ্টা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন পড়ুয়ারা। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ এবং মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী মানুষকে চরমপন্থীদের হাত থেকে রক্ষা করতে না পারায় প্রশাসনের সমালোচনা শুরু হয়েছে সুশীল সমাজে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy