ঢাকার বাজারে আগুন
দামে নির্দয় হলে দোকান দুশমন। পারতপক্ষে কেউ পা রাখে না। চুলোয় যাক কেনাকাটা। শক্ত করে পকেট আঁটা। তাতেই বা চলে কী করে। সখের জিনিস নয় বাদ গেল। নিত্য প্রয়োজনীয় চাল, ডাল, নুন, তেল তো কিনতেই হবে। সকাল বিকেল মুখে কিছু না দিলে উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা থাকে না। ঢাকা-কলকাতার অবস্থার তফাৎ নেই। বাজারে গেলেই মুখ বেজার, দুর্মূল্যে জেরবার। ছুটে পালাতে ইচ্ছে করে। পাঁচ বছরে সব পণ্যই দামে তিনগুণ। একেক সময় নুনের দাম এত বাড়ে, সুখের আশা ঝরে। শীত গিয়ে বসন্ত এসেছে। পরিস্থিতি একই। কলকাতা তবু সামাল দিচ্ছে। চাপে ঢাকা। সব দাম দ্বিগুণ। ফুলকপি কলকাতায় দশ টাকা, ঢাকায় কুড়ি। বেগুন, শিম, বাঁধাকপি সবই কলকাতাকে টেক্কা দিচ্ছে ঢাকা। সেটা হবে কেন। দুই শহরে সব্জির দেয়া নেওয়া চলে। মূল্য নাগালে থাকে। সামঞ্জস্যের অভাব থাকে না। দু'এক টাকার ব্যবধান হতেই পারে। তাই বলে দ্বিগুণ হয় কী করে। সবচেয়ে বেতাল আলু। ঢাকায় কিলো ২০ টাকা।
পশ্চিমবঙ্গে এবার আলুর উৎপাদন রেকর্ড ভাঙা। চাষীরা বেচতে নাকাল। ক্ষেত থেকে ঘরে না তুলে মাঠেই পচিয়ে নষ্ট করছে। রাস্তায় ছড়িয়ে ফেলে রাখছে। দু'টাকা কিলো বেচতে গিয়েও দাম পাচ্ছে না। চাষীদের করুণ অবস্থার থেকে মুক্তির কোনও ব্যবস্থা হয় নি। অভাবী বিক্রি এতটাই বেড়েছে বাজারে বিকোচ্ছে জলের দরে। সবচেয়ে উঁচু মানের চন্দ্রমুখী আলুর দামও দশ-বারো টাকা কিলোর বেশি ওঠেনি। আলু চাষে বরাবরই ফাটকাবাজি। দাম এক বার আকাশ ছোঁয় তো পরের বার মাটিতে আছড়ে পড়ে। চাষীরা কপাল চাপড়ায়। অনেকে আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়।
আরও পড়ুন- শুরু করা কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে, বাজেট বৃদ্ধি বাংলাদেশের
আলু থেকে যে সব বহুজাতিক সংস্থা জাঙ্ক ফুড তৈরি করে তাদের গাড্ডায় পড়তে হয় না কখনই। পঞ্চাশ গ্রামের আলু ভাজার বিক্রি দশ টাকায়। দামের হেরফের নেই। ফাস্ট ফুড সেন্টারে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বছরভর চড়া দাম। অসহায় কেবল দুর্বল আলুচাষীরা। তাদের বাঁচার রাস্তা আমদানি-রফতানিতে। সে পথ রুদ্ধ হলে আর কিছু করার থাকে না। এটা ঠিক এ বার কলকাতা থেকে ঢাকায় আলু রফতানি ঠিকঠাক হয়নি। বাংলাদেশেও যদি আলু উৎপাদনে বিপর্যয় নামত তাহলে আলুর দাম এতটা উঠত না। পশ্চিমবঙ্গের মতই সস্তায় বিকোত। পশ্চিমবঙ্গের আলু বাংলাদেশে ঢুকলে ক্রেতারাও সুরক্ষা পেত। পকেট বাঁচাতে পারত।
বসন্তের সব্জি বাজারে উঁকি মারছে। দেমাকে মাটিতে পা পড়ছে না। সরবরাহ না বাড়লে নাগালের বাইরেই থাকবে। পটল, ঝিঙে অহঙ্কারী। লম্বা হাত বাড়িয়েও ছোঁয়া যাচ্ছে না। দুমদাম করে দাম বাড়ছে আমিষ বাজারেও। ইলিশের সময় নয় এটা। মিষ্টি জলের মাছ উঠছে। পুকুরের রুই, কাতলা, মৃগেল আলো ছড়াচ্ছে বাজারে। কিছুটা আমদানিও হচ্ছে। বাংলাদেশে খাসির মাংসের বাজার গরম। ঢাকা-কলকাতার দামের ব্যবধান অনেক। ঢাকায় কেজিতে বেড়েছে ১০০ টাকা। ছিল ৭০০ টাকা, হয়েছে ৮০০। কলকাতায় ৫০০। ব্রয়লারের মুরগি ঢাকা-কলকাতায় সমান সমান। বেড়েছে দেশি মুরগির দাম। ঢাকায় গরুর মাংসের কেজি ৫৩০ টাকা। কলকাতায় ১৬০। তফাৎটা নতুন কিছু নয়। চাহিদার তারতম্যে দামের ফাঁকটা থেকে গেছে।
কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ক্যাব মাংসের মূল্য বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন। বাজার খতিয়ে দেখে তাদের রায়, মূল্য বৃদ্ধি অযৌক্তিক। যারা ঠকিয়ে বাজিমাত করতে চাইছে তারা রেহাই পাবে না। মানুষের পকেট কেটে মুনাফার বহর বাড়ালে শাস্তি পেতে হবেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy