Advertisement
E-Paper

অবিন্তা নেই, হাঁটছে তার স্বপ্ন

 অবিন্তার এই খুশির ছবির দুনিয়ায় একটি রক্তাক্ত হাতের ছবিও ফ্রেমে বাঁধানো। বুঝতে অসুবিধা হয় না কার! নীচে লেখা তার ডায়েরি থেকে তোলা একটি লাইন, ‘যারা আমার চেয়ে অনেক কম ভাগ্যবান, তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই সম্ভবত এই পৃথিবীতে এসেছি আমি।’

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৩৩
স্মৃতি: গ্যালারিতে অবিন্তার ছবি-বই। নিজস্ব চিত্র

স্মৃতি: গ্যালারিতে অবিন্তার ছবি-বই। নিজস্ব চিত্র

গাঢ় বেগুনি রং ছিল প্রিয়। ওই রঙেরই প্রজাপতি উড়ছে দেওয়ালে। আর সবুজ জঙ্গল, যেখানে সিংহের মুখেও একগাল হাসি! পাশে লেখা ‘মাই স্কুল’ আর উপরে নীল আকাশ।

খুব ছোট বেলায় এই ছবি নাকি স্বপ্নে পেয়েছিল অবিন্তা কবির। কাঁচা হাতের অক্ষরে লিখেছিল, ‘আমি প্রজাপতির মতো উড়তে চাই।’ বছর আড়াই আগে এই ছবি-আঁকিয়ে অবিন্তার মাথা থেঁতলে গিয়েছিল জঙ্গিদের ফাটানো বোমার স্‌প্লিন্টারে। দুঃস্বপ্নের সেই হোলি আর্টিজান কাফেয়।

“দু’দিন আগেই দেশে ফিরেছে। তাই বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার তর সইছিল না। বলেছিল রাত দশটার মধ্যেই ফিরে আসবে। বলেছিলাম গোসল করে যা,’’ গুলশনের প্রাসাদোপম বাড়ির বৈভবে স্তব্ধ হয়ে বসে বলছিলেন মা রুবা আহমেদ। আফসোস, গোসল করলে অন্তত কুড়িটা মিনিট দেরি হতো, ঢুকতে পারতো না কাফেয়। মার্কিন কলেজে পড়া এই প্রতিভাবান ছাত্রীর অকালমৃত্যুর পরে ফোন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বলেছিলেন, তাঁর দু’টি কন্যাসন্তান রয়েছে। তাই বোঝেন এই শোকের ভার।

ঢাকার অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী পরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকারিণী অবিন্তা ইদের ছুটি কাটাতে আটলান্টার কলেজ থেকে ঢাকায় এসেছিল ২০১৬-র জুন শেষে। “ঢাকা শহর নিয়ে ওর ছিল বাড়াবাড়ি আবেগ। বলত, এখানকার অ্যাসিডদগ্ধ মহিলা, পথশিশু, সম্বলহীন বৃদ্ধদের জন্য একটা ছোট কলোনি বানাবে। ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবে। ও ছিল আমাদের চোখের মণি, তাই রাজি ছিলাম ওর সব কথায়। সে রাতেও অপেক্ষা করেছিলাম। তবুও সে ফিরে এল না,” বলছিলেন রুবা।

কেন অবিন্তা বাড়ি ফেরেনি, তা এক হাড় হিম করা ইতিহাস। কিন্তু উনিশের ওই স্বপ্নকে এখন এগিয়ে নিয়ে চলেছে পরিবার। লাভক্ষতির হিসেব না করে শুরু হয়েছে এই ‘অবিন্তা গ্যালারি অব ফাইন আর্টস’, যেখানে দুঃস্থ শিল্পীদের ছবির নিখরচায় প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয় নিয়মিত। বহু পরিকল্পনার খসড়া সে করেছিল দুঃস্থ শিল্পীদের জন্য। “কাজেই অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশেন স্কুল চালানোর জন্য আমাদের দিঙ্‌নির্দেশ পেতে অসুবিধা হয়নি”, বললেন এই গ্যালারির দায়িত্বপ্রাপ্ত মুনতাসির আহসান। জানালেন, পড়ুয়াদের জামাকাপড়, খাওয়াদাওয়া, বই সবই বিনামূল্যে দিয়ে থাকে ফাউন্ডেশন।

অবিন্তার এই খুশির ছবির দুনিয়ায় একটি রক্তাক্ত হাতের ছবিও ফ্রেমে বাঁধানো। বুঝতে অসুবিধা হয় না কার! নীচে লেখা তার ডায়েরি থেকে তোলা একটি লাইন, ‘যারা আমার চেয়ে অনেক কম ভাগ্যবান, তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই সম্ভবত এই পৃথিবীতে এসেছি আমি।’

এর থেকে নিষ্ঠুর ঠাট্টা আর কী হতে পারে?

Abinta Kabir Holey Artisan Attack Holey Artisan Cafe July 2016 Dhaka attack Abinta Gallery of Fine Arts অবিন্তা কবির
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy