Advertisement
E-Paper

বিচার নস্যাৎ করতে লবিস্ট নিয়োগ করেন মির কাসেম

মুক্তিযুদ্ধের সময় আলবদর বাহিনীর অন্যতম প্রধান কমান্ডার ও গণহত্যার হোতা মির কাসেম আলি যে হত্যাযজ্ঞ-সহ নানা মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তা তাঁর আইনজীবীরাই আদালতে স্বীকার করেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৬ ১৭:০৫

মুক্তিযুদ্ধের সময় আলবদর বাহিনীর অন্যতম প্রধান কমান্ডার ও গণহত্যার হোতা মির কাসেম আলি যে হত্যাযজ্ঞ-সহ নানা মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তা তাঁর আইনজীবীরাই আদালতে স্বীকার করেছেন। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে শিক্ষা, ব্যবসা, চিকিৎসা-সহ নানা ক্ষেত্রে তিনি ভূমিকা রেখেছেন- এটা উল্লেখ করেই মানবতার খাতিরে এ যুদ্ধাপরাধীর দণ্ড কমানোর আবেদন করেন তাঁর আইনজীবীরা। তবে তদন্তে দেখা গিয়েছে, পরবর্তীতেও এই বদর কমান্ডার মূলত পরিচিত জামাতের অর্থের মূল যোগানদাতা হিসেবে। ১৯৭৭ সাল থেকে জামাতের আর্থিক ভিতকে শক্তিশালী করতেই কাজ করে গেছেন তিনি। সৌদি আরব-সহ বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে শত শত কোটি টাকা এনেছেন। বলা বাহূল্য, ঢাকার সৌদি দূতাবাসে সামান্য বেতনের চাকরি নিয়ে শুরু হয়েছিল তার কর্মজীবন। তার পর থেকে আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। নানা ধরণের মিথ্যা তথ্য দিয়ে সোদি আরব-সহ মুসলিম বিশ্বের খয়রাতি সাহায্য এনে নিজে যেমন আর্থিক ভাবে ফুলেফেঁপে উঠেছেন, তেমনি সমৃদ্ধ করেছেন জামাতের ফান্ডও। বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদে (২০০৯-২০১৪) যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে তা নস্যাৎ করতে অঢেল অর্থ ব্যয় করে দেশি-বিদেশি লবিস্ট নিয়োগও করেন তিনি।

১৯৫২ সালে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে জন্ম নেয়া মির কাসেম আলির বাবা ছিলেন চট্টগ্রামের টেলিগ্রাফ অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা মির কাসেম একাত্তরে ছিলেন জেলা ছাত্র সংঘের সভাপতি। পরে আলবদর বাহিনী গঠন করে সেখানে গণহত্যা, নির্যাতন-সহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের নেতৃত্ব দেন।

মুক্তিযুদ্ধের পরে দীর্ঘ সময় আড়ালে থাকলেও ১৯৭৭ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসিত করলে জামাতের ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন মির কাসেম। এ সময় হাজার হাজার মুসলমান শহিদ হয়েছেন, মসজিদ মাদ্রাসা ভেঙে ফেলা হয়েছে এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে ইসলামি এনজিওর মাধ্যমে সৌদি সরকারের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আনার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সেই থেকেই শুরু হয় মির কাসেমের উত্থান পর্ব— যার মূল লক্ষ্য ছিল জামাতকে শক্ত অর্থনৈতিক ভিতের ওপর দাঁড় করানো।

১৯৮৩ সালে এরশাদ সরকারের আমলে ‘ইসলামি ব্যাঙ্ক বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্যবসায়িক বিনিয়োগ শুরু করেন তিনি। এরপর চিকিৎসা পরিষেবা, পরিবহণ, টেলিযোগাযোগ, গণমাধ্যম ও শিক্ষা-সহ এমন কোনও ক্ষেত্র নেই যেখানে মির কাসেম তার প্রভাব বিস্তার করেননি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদনে জামাতের যে ১২৭টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য উঠে এসেছে, তার অধিকাংশেরই নিয়ন্ত্রক মির কাসেম। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পর থেকেই এ প্রক্রিয়া নস্যাৎ করতে দেশি বিদেশি লবিস্ট নিয়োগ করেন মির কাসেম। বিচার ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস’ নামে একটি ল-ফার্মের সঙ্গে প্রায় পৌনে ৩০০ কোটি টাকার চুক্তির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ অর্থের তথ্য জানতে এরই মধ্যে মার্কিন প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন।

আরও পড়ুন: কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী মির কাসেমের মৃত্যুদণ্ডই বহাল রাখল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

Mir Quasem Ali Death Sentence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy