শুভেচ্ছা বিনিময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইদের বার্তায় সন্ত্রাসবাদই আজ বড় জায়গা করে নিল। স্বাভাবিক ভাবেই। গত আড়াই মাস ধরে হাসিনা সরকারের সবচেয়ে বড় মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসবাদীদের কাণ্ডকারখানা। ‘জেহাদ’এর নামে চলছে মানুষ খুন। ইদের বার্তায় হাসিনা সেই প্রসঙ্গ ধরেই বললেন, “যারা নিরীহ মানুষকে মারে, তারা কখনও ধর্মে বিশ্বাস করতে পারে না। নিরীহ মানুষ হত্যা করা মানবতা বিরোধী কাজ। নিরীহ মানুষকে হত্যা করে কেউ বেহেশতে যেতে পারে না”।
আজ, মঙ্গলবার, সকালে ঢাকার গণভবনে নানা শ্রেণির, নানান পেশার মানুষের সঙ্গে পবিত্র ঈদুজ্জোহার শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। দেশের মানুষকে, প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিদের এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের ইদ মোবারক জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের নবি করিমও (সাঃ) বলে গেছেন, নিরীহ মানুষকে যেন হত্যা না করা হয়। তার পরও ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করা, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা। আমি মনে করি, এতে আমাদের ইসলামেরই ক্ষতি হচ্ছে। ইসলাম ধর্মের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। ইসলাম ধর্ম পবিত্র ধর্ম। এই শান্তির ধর্মকে যারা হেয় প্রতিপন্ন করছে, তারাই শান্তিপ্রিয় মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে।”
জঙ্গি কার্যকলাপের মোকাবিলায় এবং সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যে ভাবে সচেতন ও সক্রিয় থেকেছেন, প্রশাসনকে যে ভাবে সহযোগিতা করেছেন, তার প্রশংসাও করেন হাসিনা। বলেন, “মসজিদের ইমাম, যাঁরা ধর্মীয় শিক্ষা দেন, ওলামা মাশায়েখ, ছাত্র-শিক্ষক-সহ সারা বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, জঙ্গিবাদের প্রতিরোধের ব্যাপারে আপনারা সচেতন থাকবেন। বাংলাদেশে কোনও জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ চাই না। বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়, সহনশীল। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় তারা বিশ্বাস করে। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। প্রত্যেক মানুষ যেন তার ধর্ম শান্তিপূর্ণ ভাবে ও সম্মানের সঙ্গে পালন করতে পারে, এটাই হচ্ছে ইসলামের মূল শিক্ষা। আমরা সে ভাবেই এ দেশকে গড়ে তুলতে চাই। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা চাই। আমি ধন্যবাদ জানাই, প্রত্যেকে যথেষ্ট সাড়া দিয়েছেন এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছেন। আগামীতে এটা অব্যাহত থাকবে, সেটাই আমি চাই।”
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এটা কোনেও একটা দেশের না, বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ এখন বিরাট সমস্যা। এই সমস্যা যার যার নিজ নিজ অবস্থান থেকে মোকাবিলা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের যে উন্নয়নের যাত্রা, সেটা যেন অব্যাহত থাকে। মাঝে মাঝে দু-একটি ঘটনা আমাদের থমকে দেয়। কিন্তু আমরা যে কোনও ঘটনা মোকাবিলা করতে পারি। ...এত রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কোনও ষড়যন্ত্রকারী যেন এই স্বাধীনতার ক্ষতি করতে না পারে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা যেন মর্যাদার সঙ্গে চলতে পারি, সে ভাবেই আমি এ দেশটাকে গড়ে তুলতে চাই। সব সময় আমি চাই, বাঙালি জাতি একটি গর্বিত জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে চলবে। জাতির স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ছিল ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্র্ মুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলা- ইনশা আল্লাহ আমরা তা পারব।’
বক্তব্যের শুরুতে গাজিপুরের টাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে মৃত ৩৩ জনের জন্য শোক প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, “এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমি তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। যাঁরা আহত, তাঁদের চিকিৎসা চলছে। যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের পরিবারবর্গকে সচরাচর যে ভাবে সাহায্য করে থাকি, আমরা সে ভাবেই করব।” শ্রমিক সুরক্ষা নিয়ে দেশের মালিক পক্ষকে সতর্ক করে তিনি বলেন, “যাঁরা কারখানা বা ফ্যাক্টরি গড়বেন, এর জন্য আলাদা ব্যবস্থা করবেন। এ বিষয়গুলো আমি ইতিমধ্যে শিল্পমন্ত্রীকে বলেছি। সারা বাংলাদেশে যেখানে এ ধরনের কারখানা রয়েছে, সেখানে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে। যাতে এ ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।”
আজকের ইদের অনুষ্ঠানে হাসিনার সঙ্গে ছিলেন আওয়ামি লিগের সভাপতিমণ্ডলী সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক ফারুক খান। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে কাল বুধবার নিউইয়র্কে যাচ্ছেন হাসিনা। যাবেন কানাডাতেও। বাংলাদেশের উন্নয়ন ঘিরে আন্তর্জাতিক মঞ্চে যে আগ্রহ এবং প্রশংসার জন্ম হয়েছে, সেই ইতিবাচক মনোভাবকে আরও কাজে লাগাতে চান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy