মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ। সংগৃহীত।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রথম বারের মতো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রাক্তন এক সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ নামে প্রাক্তন ওই বাঙালি ক্যাপ্টেনের বিরুদ্ধে অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন, লুটপাট-অগ্নিসংযোগ ও হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হচ্ছে। আসামি শহিদুল্লাহর বয়স এখন ৭৫ বছর, বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার আমিরাবাদ গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই এলাকাতেই তিনি যুদ্ধাপরাধ ঘটিয়েছিলেন বলে তদন্তকারীদের দাবি।
মঙ্গলবার ঢাকার ধানমন্ডিতে তদন্তকারী সংস্থার কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই প্রতিবেদনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঢাকা সেনানিবাসে পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেন মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ। পরে তিনি ঢাকা সেনানিবাস থেকে কুমিল্লার সেনানিবাসে যোগ দিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে নিজ এলাকা দাউদকান্দি সদরে ক্যাম্প তৈরি করেন।
আরও পড়ুন: ভাষাই ধরিয়ে দিল হায়দরাবাদে লুকিয়ে থাকা বাংলাদেশি জঙ্গি ইদ্রিশ আলিকে
তদন্ত সংস্থার তরফে আব্দুল হান্নান খান বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ না দেওয়ায় শহিদুল্লার বিষয়ে কোনও রেকর্ড বাহিনীর কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু আসামি এখনও তার এলাকায় ‘ক্যাপ্টেন’ হিসেবে পরিচিত।’’ ২০১৫-র ১১ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় জানিয়ে হান্নান বলেন, “দেড় বছরের বেশি সময় ধরে তদন্ত চলেছে। আজই এই প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কাছে দাখিল করা হবে।”
প্রসিকিউশনের আবেদনে ট্রাইব্যুনাল গত বছর ২ অগস্ট শহিদুল্লার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। ওই দিনই কুমিল্লা জেলা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পর দিন আসামিকে হাজির করা হলে ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন— এমন অনেক বাঙালি কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই তদন্ত চলছে জানিয়ে তদন্তকারী সংস্থার তরফে সানাউল হক বলেন, “তদন্তের স্বার্থেই তাদের নাম-ঠিকানা বা পরিচয় প্রকাশ করতে চাই না। আশা করি পরে ধাপে ধাপে তা আপনাদের কাছে তুলে ধরতে পারব।”
এ মামলার তদন্তকারী দলের প্রধান আলতাফুর রহমান জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে মোট ১৯ জনকে সাক্ষী করা হচ্ছে। এ ছাড়া সাক্ষী করা হয়েছে আরও তিন জনকে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার নিষ্পত্তির পর এ পর্যন্ত ছয় জনের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এরা সবাই রাজনীতিক, তাদের পাঁচ জনই জামাতে ইসলামির নেতা, এক জন বিএনপি নেতা। এ ছাড়া আর যারা দণ্ডিত, তারাও মুক্তিযুদ্ধের সময় জামাতে ইসলামি অথবা মুসলিম লিগে ছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy