Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

জঙ্গি ঘাঁটি গড়তে দেবেন না হাসিনা

চলতি ভোট প্রস্তুতিতে একটি চিত্র খুবই স্পষ্ট। বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে আওয়ামি লিগের প্রতীক নৌকার অজস্র পোস্টার ব্যানার চোখে পড়লেও বিএনপির ধানের শিস কার্যত অনুপস্থিত।

শেখ হাসিনা। —নিজস্ব চিত্র

শেখ হাসিনা। —নিজস্ব চিত্র

অগ্নি রায়
ঢাকা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৩২
Share: Save:

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এলে লন্ডন থেকে খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানকে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে চান শেখ হাসিনা। ভোটের মুখে ভারতীয় সাংবাদিকদের দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বুধবার এ কথা জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে পাকিস্তানের নাম না-করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে ভারত-সহ কোনও প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের ঘাঁটি করতে দেব না।’’

আসন্ন ভোটে জয়ের প্রশ্নে আশাবাদী হয়েও সতর্ক থাকতে চাইছেন আওয়ামি লিগ নেত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘বিএনপি ও জামাতে ইসলামির জোট ভালই জানে, তারা নির্বাচনে জিততে পারবে না। সন্ত্রাস প্রশ্নে তাদের অতীত রেকর্ড খুব খারাপ। ভোট বানচালের চেষ্টা করতে পারে তারা। কিন্তু এ বার আমরা শুধু নই, দেশবাসীও সতর্ক।’’

আলাপচারিতায় এ দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াই নিয়ে স্মৃতিতে ডুব দিয়েছেন হাসিনা। কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীকে। একই সঙ্গে সাম্প্রতিক অতীত অর্থাৎ ২০১৩-১৪ সালের বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়েও সরব হয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘মনে করে দেখুন ২০১৩ সালেরডিসেম্বরে বিএনপি-জামাত কী ভাবে স্কুলে, বাসে, অটোয়, স্টিমারে আগুন দিয়েছিল। বাবার সামনে শিশুর গায়ে আগুন ধরায়। বাস থেকে নামিয়ে ড্রাইভারের গায়ে পেট্রোল ঢালে। এটা কোন ধরনের আন্দোলন? কী অর্জন হয় এ থেকে? মানুষের সমর্থন পাচ্ছে না, তাই এ বারেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নস্যাৎ করতে চাইছে তারা।’’

চলতি ভোট প্রস্তুতিতে একটি চিত্র খুবই স্পষ্ট। বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে আওয়ামি লিগের প্রতীক নৌকার অজস্র পোস্টার ব্যানার চোখে পড়লেও বিএনপির ধানের শিস কার্যত অনুপস্থিত। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, বিভিন্ন কেন্দ্রে ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে তাদের পোস্টার। প্রচারও করতে দিচ্ছে না আওয়ামি লিগ। অনেকে বলছেন, বিএনপি শিবির যেন ঝড়ের আগে থম মেরে রয়েছে। বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে শেখ হাসিনার ব্যাখ্যা, ‘‘আমরাও দেখছি। ওদের প্রার্থী রয়েছে কিন্তু পোস্টার নেই। অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের কারণে ওরা অনেক জায়গায় পোস্টার লাগাতে পারছে না, আর নালিশ করছে আমাদের নামে। আসলে ওরা প্রত্যেকটি আসন নিলামে চড়িয়েছিল। যে বেশি টাকা দিয়েছে তাকে টিকিট দিয়েছে। এক একটি আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে প্রথমে। পরে এক জনকে রেখে বাকিদের বাতিল করেছে। স্বাভাবিক ভাবেই ওদের যারা পুরনো লোক, তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। পুরো বিষয়টির কলকাঠি নাড়া হচ্ছে লন্ডন থেকে।’’ লন্ডনে থাকা তারেককে ফিরিয়ে আনার প্রশ্নে হাসিনার বক্তব্য, ‘‘তিনি গ্রেনেড হামলা-সহ বহু অপরাধে যুক্ত। তারেক বাংলাদেশের নাগরিক। তাই বিচারের জন্য ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে ফিরিয়ে আনা হবে।’’

ভোটের আগে পাক দূতাবাসের মাধ্যমে আইএসআই তৎপরতা বাড়াচ্ছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। হাসিনার বক্তব্য, ‘‘আমরাও জানি এই তৎপরতা চলছে। আসলে বিএনপির অনেক নেতার শরীরটা পড়ে থাকলেও আত্মা রয়েছে ওখানে। তবে এ জন্য আইএসআইকে দোষ দিই না। বিএনপি নেতাদেরই দিই। অস্ত্র চোরাকারবার আর হাওয়ালা থেকে করা অঢেল টাকায় লন্ডনে বসে তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চাইছে।’’

ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তির বিষয়টি উল্লেখ করে হাসিনার বক্তব্য, ‘‘গোটা বিশ্বের কাছে এটা একটা উদাহরণ। ছিটমহল বিনিময়ের মত বিষয় নিয়ে বহু দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায়। কিন্তু আমরা কি সুন্দরভাবে করলাম! একটা বিষয় দেখেছি যে বাংলাদেশের কোনও বিষয় এলে ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলি তাদের নিজেদের মধ্যে বিরোধিতা ভুলে যেন এক হয়ে যায়।’’

ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তির বিষয়টি উল্লেখ করে হাসিনা বলেন, ‘‘গোটা বিশ্বের কাছে এটা একটা উদাহরণ। ছিটমহল বিনিময়ের মতো বিষয় নিয়ে বহু দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায়। কিন্তু আমরা কী সুন্দর মিটমাট করলাম! একটা বিষয় দেখেছি, বাংলাদেশের কোনও বিষয় এলে ভারতের রাজনৈতিক দলগুলি বিরোধিতা ভুলে যেন এক হয়ে যায়!’’

কিন্তু সব বিষয়ে এক হয় কি? এই মুহূর্তে কোনও বিতর্কিত মন্তব্য করতে নারাজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এমনকি বাংলাদেশের ইলিশের ভারতে রফতানির বিষয়টিতেও বিশদে কিছু বলতে চাইলেন না। হাসিমুখে শুধু জানিয়েছেন, পানি পেলেই তিনি ইলিশ দিতে তৈরি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE