Advertisement
১৭ জুন ২০২৪
তেলের পড়তি দরের জের

বাজেটের আগে জেটলি হাতে পাবেন বাড়তি ১.১ লক্ষ কোটি

দেশের অর্থনীতির চাকায় গতি ফেরাতে এখন জ্বালানি বিশ্ব বাজারে তলানির দিকে ছোটা তেলের দামও। বাজেট তৈরির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তার দাবি, গত ডিসেম্বরের তুলনায় পরিস্থিতি এখন অনেক ভাল। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর এতখানি নেমে আসায়, তা আমদানির খরচ কমেছে। তাই কমছে ভর্তুকির অঙ্ক। ফলে রাজকোষ ঘাটতিকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রাখা সম্ভব হবে বলেই মনে করছেন তিনি।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৫
Share: Save:

দেশের অর্থনীতির চাকায় গতি ফেরাতে এখন জ্বালানি বিশ্ব বাজারে তলানির দিকে ছোটা তেলের দামও।

বাজেট তৈরির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তার দাবি, গত ডিসেম্বরের তুলনায় পরিস্থিতি এখন অনেক ভাল। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর এতখানি নেমে আসায়, তা আমদানির খরচ কমেছে। তাই কমছে ভর্তুকির অঙ্ক। ফলে রাজকোষ ঘাটতিকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রাখা সম্ভব হবে বলেই মনে করছেন তিনি।

শুধু তা-ই নয়। তাঁর ধারণা, তেলের দাম কমার সূত্রে কার্যত ‘পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা’ হিসেবে প্রায় ১.১ লক্ষ কোটি টাকা আসবে মোদী-সরকারের হাতে। ফলে বাজেটে বাড়তি বোঝা ঘাড়ে না-নিয়ে তারই একটা বড় অংশ পরিকাঠামোয় লগ্নির পরিকল্পনা করতে পারবেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। অর্থ মন্ত্রকের আর এক কর্তার কথায়, “সকলেই জানেন যে, সরকারের সঙ্গে সাধারণ মানুষের মধুচন্দ্রিমার পর্ব অনন্তকাল চলবে না। ফলে অর্থনীতির শ্রীবৃদ্ধির জন্য এবং কাজের সুযোগ বাড়াতে ঝোড়ো গতিতে সংস্কারের পথে এগোতেই হবে কেন্দ্রকে।” তেলের দরে পতন জেটলিকে সেই সংস্কারে সাহসী করবে বলে মনে করছেন তাঁরা।

বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কয়েক মাসের মধ্যে ব্যারেলে ১১০ ডলার থেকে নেমে এসেছে ৫০ ডলারের নীচে। সেই সুযোগে চার দফায় পেট্রোল ও ডিজেলের উপর মোট যথাক্রমে ৭.৭৫ ও ৬.৫০ টাকা শুল্ক চাপিয়েছে কেন্দ্র। যে কারণে অনেকেই মনে করছেন, বিশ্ব বাজারে তেলের দর কমা জেটলির কাছে মেঘ না- চাইতেই জলের সামিল। কারণ, এই সুযোগে রাজকোষ ঘাটতিতে লাগাম পরানোর চেষ্টা করছেন তিনি। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, চার দফায় শুল্ক বাড়ায় রাজকোষে বাড়তি আসবে অন্তত ২৫-৩০ হাজার কোটি টাকা। ফলে ঘাটতিকে ৪.১ শতাংশে বেঁধে রেখে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে আরও সুদ কমানোর রাস্তা তৈরি রাখতে পারবেন জেটলি।

পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম ইতিমধ্যেই বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে শুধু রান্নার গ্যাস (এলপিজি) এবং কেরোসিনে ভর্তুকি দিতে অর্থ মন্ত্রকের কাছে ২২,১০১ কোটি টাকা চেয়েছে তেল মন্ত্রক। এই আর্থিক বছরেই এর আগে তারা চেয়েছিল আরও ১৭,০০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, মোট ৩৯,১০১ কোটি। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে দাবি, এই অর্থবর্ষে পেট্রোল-ডিজেলে উৎপাদন শুল্ক বসিয়ে অন্তত ৭৫,৯৪৪ কোটি টাকা পাবে কেন্দ্র। তার মধ্যে ৩৯ হাজার কোটি ভর্তুকি গুনলেও ৩৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি হাতে থেকে যাবে জেটলির। আর্থিক বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরাতে যা পরিকাঠামোয় ঢালতে পারবেন তিনি। রাজকোষ ঘাটতি না-বাড়িয়েও অন্তত সেই মতো পরিকল্পনার সুযোগ পাবেন বাজেটে।

এই সূত্রে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান আগেই বলেছেন, “চলতি ও আগামী অর্থবর্ষে পরিকাঠামো নির্মাণে বিপুল ব্যয় হবে। যার মধ্যে রয়েছে ১৫ হাজার কিলোমিটার সড়ক তৈরির কাজ। তার জন্য টাকা জোগাড়েই পেট্রোল-ডিজেলে শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত।” অর্থ মন্ত্রকেরও যুক্তি, পরিকাঠামোয় লগ্নি হলে অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। তৈরি হবে কর্মসংস্থানের সুযোগ। এই অবস্থায় মাত্রাছাড়া রাজকোষ ঘাটতির ঝুঁকি এড়িয়ে পরিকাঠামোয় টাকা ঢালার বন্দোবস্ত করতে কাজে দেবে জ্বালানিতে বসানো বাড়তি শুল্ক।

অর্থনীতি চাঙ্গা করতে তেলের দর তলানিতে ঠেকার সুবিধাকে আরও নানা ভাবে ব্যবহার করতে পারেন অর্থমন্ত্রী। ভারতের আমদানির সবথেকে বড় অংশ যায় বিদেশ থেকে তেল আনতে। জাতীয় আয়ের প্রায় ৯%। তেলের দর নামায় সেই খরচ কমেছে। গুনতে হচ্ছে কম ডলারও। যা বিদেশি মুদ্রার আয়-ব্যয়ের ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পক্ষে ভাল।

তা ছাড়া, তেলের দাম কমায় অনেকটা ছাঁটাই হবে ভর্তুকি। এমনকী ধীরে ধীরে বাজার দর নেমে সাধারণ মানুষের আয়ত্তে এলে, তা ভর্তুকি কমানোর সংস্কারে আরও সাহসী করবে জেটলিকে।

বাজার দরের তুলনায় কম দামে জ্বালানি বিক্রির জন্য ভর্তুকির একটা অংশ গুনতে হয় ওএনজিসি, অয়েল ইন্ডিয়ার মতো রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলিকে। এখন সেই বোঝা হাল্কা হওয়ায় ওই সব সংস্থার মুনাফা বাড়বে বলে আশা করছেন অনেকে। ফলে এই সময়ে ওই সব রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার বেচেও তহবিলে মোটা টাকা আনার পরিকল্পনা করছেন জেটলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arun jaitley budget
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE