Advertisement
২৯ মার্চ ২০২৩
দু’লক্ষ কোটি ছাপিয়েছে কয়লা খনি বিক্রির আয়ও

স্পেকট্রাম বেচে রেকর্ড টাকা আসতে পারে রাজকোষে

যে দুই সম্পদের বণ্টন নিয়ে কেলেঙ্কারি মনমোহন সিংহের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেগুলির নিলামেই এখন ঝুলি উপচে পড়ছে মোদী-সরকারের। কেন্দ্রীয় টেলিকম দফতরের বিবৃতি অনুযায়ী, প্রথম ছ’দিনের নিলামে স্পেকট্রাম কেনার জন্য মোট ৯২,২০০ কোটি টাকা উপুড় করার আগ্রহ দেখিয়েছে মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলি। প্রথম পাঁচ দিনের শেষে তা ছিল ৯৪ হাজার কোটি। সে দিক থেকে ষষ্ঠ দিনে তা সামান্য কমেছে।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৫ ০২:৪১
Share: Save:

যে দুই সম্পদের বণ্টন নিয়ে কেলেঙ্কারি মনমোহন সিংহের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেগুলির নিলামেই এখন ঝুলি উপচে পড়ছে মোদী-সরকারের।

Advertisement

কেন্দ্রীয় টেলিকম দফতরের বিবৃতি অনুযায়ী, প্রথম ছ’দিনের নিলামে স্পেকট্রাম কেনার জন্য মোট ৯২,২০০ কোটি টাকা উপুড় করার আগ্রহ দেখিয়েছে মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলি। প্রথম পাঁচ দিনের শেষে তা ছিল ৯৪ হাজার কোটি। সে দিক থেকে ষষ্ঠ দিনে তা সামান্য কমেছে। কিন্তু দফতর মনে করছে, নিলাম এখনও বাকি। ফলে সেখান থেকে শেষ পর্যন্ত সব মিলিয়ে আসা টাকার অঙ্ক আগের ১ লক্ষ ৬ হাজার কোটির রেকর্ড ছাপিয়ে যাবে।

রাজকোষে বিপুল টাকা আসার এই একই ছবি কয়লা খনি নিলামেও। অনিয়মের অভিযোগে সারা দেশে ২০৪টি খনির বণ্টন বাতিল করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেগুলির মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৩২টি খনি নিলামে তুলেছে কেন্দ্র। আর শুধু তা থেকেই রাজকোষে আসতে চলেছে ২ লক্ষ ৭ হাজার কোটি টাকা। মনমোহন-সরকারের আমলে সিএজি (ক্যাগ)-র পেশ করা রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ওই ২০৪টি কয়লা খনি বণ্টনে অনিয়মের কারণে অন্তত ১ লক্ষ ৮৬ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে কেন্দ্রের। কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই কয়লা খনি নিলাম থেকে ঘরে আসতে চলা অঙ্ক তার তুলনায় বেশ খানিকটা বেশি।

কয়লা খনি নিলামে কোনটি কোন সংস্থা জিতছে, প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তা জানিয়ে দিচ্ছে কেন্দ্র। কিন্তু স্পেকট্রামের ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটছে না। হাড্ডাহাড্ডি দামের লড়াইয়ের পরে কোন সার্কেলে কোন স্পেকট্রাম কোন মোবাইল পরিষেবা সংস্থার ঘরে যাচ্ছে, তা এখনও জানা যায়নি। কারণ, আগামী ২৬ মার্চ এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেই বিক্রি হওয়া স্পেকট্রামের মালিকানা ঘোষণা সম্ভব হবে। কিন্তু জমা পড়া দামের মোট যে অঙ্ক টেলিকম দফতর প্রকাশ করছে, তা থেকে স্পষ্ট যে, স্পেকট্রাম হাতে নিতে কী ভাবে ঝাঁপাচ্ছে মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলি।

Advertisement

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্পেকট্রাম বেচে সরকার যে এই রেকর্ড টাকা ঘরে তোলার মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তার পিছনে কারণ দু’টি—

(১) ভারতে স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ছে ঝড়ের গতিতে। তার হাত ধরে বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারও। ফলে আগামী দিনে নেট-পরিষেবার এই বিপুল সম্ভাবনাময় বাজারকে হাতছাড়া করতে চাইছে না কোনও সংস্থা। ফলে স্পেকট্রাম জিততে আগ্রাসী দর হেঁকে ঝাঁপাচ্ছে তারা।

(২) দেশের অনেক ‘ভাল’ সার্কেলেই কিছু সংস্থার স্পেকট্রামের লাইসেন্স শেষ হওয়ার মুখে। ফলে নিজেদের বাজার ধরে রাখতে তারা যেমন আগ্রাসী দর দিচ্ছে, তেমনই নতুন করে ওই বাজারে ঢুকে তাদের বেগ দিতে চাইছে প্রতিদ্বন্দ্বীরাও।

মূলত এই দু’য়ের ফসল হিসেবে ইতিমধ্যেই মোট ৯২ হাজার কোটি টাকার দরপত্র জমা পড়েছে কেন্দ্রের কাছে। টেলিকম দফতরের আশা, এই গতিতে চললে, তা ছাপিয়ে যাবে ১.০৬ লক্ষ কোটি টাকার পুরনো রেকর্ডও। ২০১০ সালে স্পেকট্রাম বেচে যা ঘরে তুলেছিল কেন্দ্র।

স্পেকট্রামের এই নিলামে অংশ নিচ্ছে ভারতী-এয়ারটেল, ভোডাফোন ইন্ডিয়া, আইডিয়া-সহ আটটি সংস্থা। এর মধ্যে ভারতী গোষ্ঠীর কর্ণধার সুনীল মিত্তল ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, স্পেকট্রাম কিনতে গিয়ে বিপুল অঙ্ক উপুড় করার আঁচ সংস্থার ব্যালান্স শিটে পড়লে, মাসুল বৃদ্ধির কথা ভাবতে বাধ্য হবেন তাঁরা।

কিন্তু এই দুই নিলামে পোয়াবারো কেন্দ্রের। কারণ, নিলাম থেকে এমন বিপুল অঙ্ক হাতে এলে, রাজকোষ ঘাটতিকে লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রাখতে সুবিধা হবে তাদের। শুধু তা-ই নয়। চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে রাজ্যগুলির হাতে বাড়তি টাকা তুলে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছে, তা কার্যকর করতেও সুবিধা হবে। কয়লামন্ত্রী পীযুষ গয়ালের দাবি, ‘‘কয়লা খনি নিলামের দৌলতে বিদ্যুতের দাম কমবে। কয়েক লক্ষ কোটি টাকাও পাবে পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশার মতো কয়লায় সমৃদ্ধ রাজ্যগুলি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.