E-Paper

আদানিদের লগ্নি প্রস্তাবে নেই বাংলা

সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, রিলায়্যান্স, আদানি, জিন্দল, টাটা, আদিত্য বিড়লা, বেদান্তের মতো একঝাঁক বৃহৎ গোষ্ঠীকে সাধারণ ভাবে সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:২২
গৌতম আদানি।

গৌতম আদানি। —ফাইল চিত্র।

বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে লগ্নি টানার প্রতিযোগিতা উস্কে দিচ্ছে শিল্প সম্মেলনগুলি। কার ঝুলিতে কতটা বিনিয়োগ প্রস্তাব এল, সেই হিসাবে ব্যস্ত গোটা দেশ। তাই নিয়ে মাথা তুলছে রাজনৈতিক বিতর্কও। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, রিলায়্যান্স, আদানি, জিন্দল, টাটা, আদিত্য বিড়লা, বেদান্তের মতো একঝাঁক বৃহৎ গোষ্ঠীকে সাধারণ ভাবে সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে। তাই টক্কর আসলে তারা কোন রাজ্যে কতটা পুঁজি ঢালতে চাইছে তা নিয়ে। আর এই নিরিখেই আদানি গোষ্ঠীর লগ্নি প্রস্তাবে পশ্চিমবঙ্গের ব্রাত্য হওয়ার দিকে আঙুল উঠছে। তথ্য বলছে, হালে যে রাজ্যগুলিতে শিল্প সম্মেলন হয়েছে, তার মধ্যে শুধু বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনে (বিজিবিএস) ছিল না আদানিরা। ফলে একমাত্র বাংলাতেই তাদের লগ্নির বার্তা নেই। উল্টে ঘোষিত প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।

তালিকায় শীর্ষে বিজেপি শাসিত রাজস্থান। গত ডিসেম্বরে সেখানে শিল্প সম্মেলনে ৭.৫ লক্ষ কোটি টাকা লগ্নির প্রস্তাব দিয়েছে গৌতম আদানির সংস্থা। এরপর রয়েছে ওড়িশা, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, অসম, তামিলনাড়ু, কেরল। মধ্যপ্রদেশ এবং অসমে শিল্প সম্মেলন সবে শেষ হয়েছে। এ মাসে রাজ্যে বিজিবিএসের পাশাপাশি কেরলেও বসেছে সেই আসর। বাংলা ছাড়া সর্বত্রই উপস্থিত আদানিরা। প্রতিশ্রুতি দিয়েছে লগ্নির। ২০২৩-এ কর্নাটকে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি পুঁজি উপুড় করার কথা বলেছিল তারা।

বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, বাংলায় আদানিদের সবচেয়ে বড় প্রকল্প ছিল তাজপুর বন্দর। প্রাথমিক ভাবে ন্যূনতম ২৫,০০০ কোটি টাকা লগ্নির কথা ছিল। কিন্তু এ নিয়ে এখন তাদের অবস্থান স্পষ্ট নয়। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘কিছু ত্রুটি থাকায় তাজপুরের দরপত্র নতুন করে হবে বলে মনে হয়। তবে আইনি পরামর্শ নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে।’’

উল্লেখ্য, দেড় বছর আগে আদানিদের এই বন্দর তৈরির জন্য ইচ্ছাপত্র দেয় রাজ্য। কিন্তু তারপর কোন জটে তা আটকে স্পষ্ট নয়। এই প্রকল্প বাদে রাজ্যে আদানিদের লগ্নি তেমন বড় কিছু নয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, পানাগড়-পালসিট ৬৮ কিমি জাতীয় সড়ক তৈরির বরাত পেয়েছে আদানিরা, লগ্নি প্রায় ২০২১ কোটি। বর্ধমানে ইন্ডিয়ান অয়েলের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বাড়ি বাড়ি পাইপে রান্নার গ্যাস জোগাচ্ছে। খরচ ২০০-৩০০ কোটি। হলদিয়া, বর্ধমান ও হুগলিতে আটা, চিনি, চাল, তেল-সহ নানা খাদ্যপণ্য তৈরির ৬-৭টি কারখানা রয়েছে। খাদ্য ক্ষেত্রে লগ্নি ১২০০-১৫০০ কোটির মতো। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পাঠানোর কারণে এ রাজ্যের কিছু এলাকাতেও আদানি পাওয়ারের উপস্থিতি রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, বাংলার শিল্প সম্মেলনে আদানিদের অনুপস্থিতি রাজনৈতিক কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত বাম এবং কংগ্রেস শাসিত রাজ্যেও যেহেতু তারা লগ্নির প্রস্তাব দিয়েছে। একাংশের মতে, নানা বিষয়ে রাজ্যের শাসক দলের তরফে যে ভাবে গৌতম আদানিকে বহুবার আক্রমণ করা হয়েছে, তা নজিরবিহীন। এক শিল্প কর্তার কথায়, “আদানিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে হিন্ডেনবার্গ বা অন্য রিপোর্ট যতই প্রকাশ হোক, দেশে যে দু’তিনটি সংস্থার লগ্নি এখন সব রাজ্যই পেতে চায়, তার মধ্যে তারা রয়েছে। তাই তাজপুরের পরে রাজ্যে কেন তারা তেমন লগ্নি-প্রস্তাব দিল না, সেটা প্রশাসনের ভাবার বিষয়। এতে লগ্নি টানায় বাংলা পিছিয়ে পড়বে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Adani Group BGBS 2025

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy