Advertisement
E-Paper

মোদীর অঙ্কের জাদুই হাতিয়ার অমিতের

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের সাফল্য প্রমাণে এ বার নরেন্দ্র মোদীর কৌশল বেছে নিলেন অমিত মিত্র। নরেন্দ্র মোদী বিভিন্ন বিদেশ সফরে গিয়ে বড়াই করে বলছেন, তাঁর জমানায় আর্থিক বৃদ্ধির হার বেড়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৫ ০১:২৪

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের সাফল্য প্রমাণে এ বার নরেন্দ্র মোদীর কৌশল বেছে নিলেন অমিত মিত্র।

নরেন্দ্র মোদী বিভিন্ন বিদেশ সফরে গিয়ে বড়াই করে বলছেন, তাঁর জমানায় আর্থিক বৃদ্ধির হার বেড়েছে। মোদী এটা বলছেন না যে, জিডিপি বা জাতীয় আয় মাপার পদ্ধতিটাই বদলে গিয়েছে আর তার ফলেই বেড়েছে বৃদ্ধির হার, এবং সেটা বেড়েছে তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগেই।

পরিসংখ্যান অবশ্য বিজেপিতে আছে, তৃণমূলেও। দিল্লিতে এসে অমিত মিত্র দাবি করেছেন, নতুন পদ্ধতিতে অঙ্ক কষে পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশ ছাপিয়ে গিয়েছে। আর সেই হিসেবে মমতা সরকার ছাপিয়ে গিয়েছে মোদী সরকারকেও।

নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত মিত্রের লক্ষ্য একটাই—রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি। মোদী তাঁর প্রথম বছরেই ‘অচ্ছে দিন’ এসেছে বলে প্রমাণ করতে চান। অন্য দিকে মমতা সরকারের শেষ বছরে, বিধানসভা ভোটের আগে অমিত মিত্র দেখাতে চাইছেন, তাঁদের আমলে রাজ্যের কতখানি শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে। সেই উদ্দেশ্যেই বিশেষ উদ্যোগে কেন্দ্রের হিসেবের পদ্ধতি জেনে নিয়ে রাজ্য সরকার নিজেই নতুন হিসেব কষেছে।

দিল্লির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় সাংবাদিক সম্মেলন করে অমিত মিত্র বলেন, কেন্দ্রের মতো রাজ্য সরকারও নতুন পদ্ধতিতে পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক বৃদ্ধি পরিমাপ করেছে। সেই হিসেব অনুযায়ী, ২০১৪-’১৫ সালে রাজ্যের আর্থিক বৃদ্ধি ১০.৪৮ শতাংশ। আগের দু’বছরে বৃদ্ধির হার ছিল ৮.১৮ শতাংশ ও ৯.৬৭ শতাংশ। তিন বছরেই রাজ্যের বৃদ্ধির হার গোটা দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হারের থেকে অনেক বেশি।

অমিত মিত্র যা বলেননি, তা হল পুরনো পদ্ধতি অনুযায়ী ২০১২-’১৩ সালে রাজ্যের বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৬ শতাংশ। সেটাই নতুন পদ্ধতিতে ৮.১৮ শতাংশে পৌঁছেছে। একই ভাবে তার পরের বছর, ২০১৩-’১৪-য় বৃদ্ধির হারও ৭.৭১ থেকে এক ধাক্কায় ৯.৬৭ শতাংশে পৌঁছেছে। ঠিক যে-ভাবে জাতীয় স্তরেও নতুন পদ্ধতিতে হিসেব করতে গিয়ে মনমোহন-জমানার শেষ বছর বা ২০১৩-’১৪-য় বৃদ্ধির হার ৪.৭ শতাংশ থেকে এক ধাক্কায় ৬.৯ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। অঙ্কের জাদুতে বৃদ্ধির হারকে বাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার এই ম্যাজিক এতদিন মোদী দেখাচ্ছিলেন। এ বার দেখালেন অমিত মিত্র।

কী ভাবে হচ্ছে এই জাদু? এর অনেকগুলি কৌশল আছে।

এক, এত দিন উৎপাদনের খরচের ভিত্তিতে দেশের আয় বা জিডিপি এবং সেই অনুযায়ী আর্থিক বৃদ্ধির হিসেব-নিকেশ করা হত। নতুন পদ্ধতিতে বাজার দরের ভিত্তিতে সেই হিসেব কষা হচ্ছে। দুই, এতদিন বেশ কিছু উৎপাদন শিল্প, পরিষেবার বিস্তীর্ণ ক্ষেত্র এবং নতুন গড়ে ওঠা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবের মধ্যে ধরা হত না। সে সব যোগ হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই বাড়ছে অর্থনীতির আয়তন। আন্তর্জাতিক স্তরেও এই ভাবেই হিসেব কষা হয় বলে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের দাবি। তিন, ২০০৪-’০৫-এর বাজার দরের বদলে এখন ২০১১-’১২ সালের বাজার দরের নিক্তিতে জিডিপি মাপা হচ্ছে। আর এই তিনটি কারণেই নতুন পদ্ধতিতে জিডিপি বৃদ্ধির হার বেশি দেখাচ্ছে।

নতুন পদ্ধতির হিসেব নিয়ে অবশ্য অনেকেই সন্দিহান। অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমই যেমন বলেছেন, নতুন পদ্ধতি তাঁকে ধাঁধায় ফেলে দিয়েছে, গোটা বিষয়টাই তাঁর কাছে বিভ্রান্তিকর।

কংগ্রেসের মতো বিরোধী দলগুলিও একে মোদীর কৌশল হিসেবেই দেখছেন। এ বার সেই কৌশলই মমতার সরকার নিচ্ছেন দেখে সিপিএম নেতা নীলোৎপল বসুর কটাক্ষ, ‘‘এ তো দেখছি শুঁড়ির সাক্ষী মাতাল! যে পদ্ধতি নিয়ে এমনিতেই প্রশ্ন রয়েছে, রাজ্য সরকার সেটাই অনুসরণ করছেন।’’

বিরোধীদের প্রশ্ন, পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক বৃদ্ধি ১০ শতাংশের উপরে হলে তার বাস্তব প্রতিফলন হিসেবে প্রচুর কল-কারখানা চোখে পড়ার কথা। অনেকের চাকরি পাওয়ার কথা। তার কিছুই হচ্ছে না। অমিতবাবু দাবি করেছেন, কৃষি, পরিষেবা ও শিল্প ক্ষেত্রেও রাজ্যের বৃদ্ধির হার জাতীয় স্তরের থেকে অনেক বেশি। কিন্তু তাঁর নতুন পদ্ধতির পরিসংখ্যানই বলছে, গত তিন বছরে শিল্প ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ধাপে ধাপে কমেছে। ২০১২-’১৩-য় যা ছিল ১১.৩ শতাংশ, পরের দু’বছরে তা ৮.৭৬ ও ৮.৩৪ শতাংশে নেমে এসেছে।

অমিতবাবুর দাবি, বাম জমানায় খুব খারাপ অবস্থা ছিল বলে নতুন সরকার আসার পরে এক ধাক্কায় শিল্প বৃদ্ধি অনেকখানি হয়েছে। তার পরের বছরগুলিতে সার্বিক ভাবেই শিল্পে মন্দা ছিল। তা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের হার জাতীয় স্তরের থেকে বেশি। যা শুনে নীলোৎপলবাবু বলছেন, ‘‘গল্পের গরুকে কেউ গাছে তুলতেই পারেন। তাতে বাস্তবের ছবিটা বদলায় না। বাস্তব হল, পশ্চিমবঙ্গে কৃষকেরা আত্মহত্যা করছেন। শিল্পপতিরাও রাজ্য ছেড়ে পালাচ্ছেন।’’

amit mitra financial development bengal new delhi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy